— ভাবা যায় সুমনা? আজ সুদীর্ঘ ত্রিশ বছর পর দেখা তোমার সঙ্গে! তোমারই মেয়ের পিএইচডির কনভোকেশনে! ভীষন লজ্জা হয় আমার সুমনা। সেদিন যেমনটা বলেছিলাম, ঠিক আজও তার খেসারত দিতে হচ্ছে। জানি আজীবন দিতে হবে। আজও নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনি। আজ তুমি আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে, মাতৃত্বের অধিষ্ঠান সর্বদা গর্ভধারিণীর জঠরে সুপ্ত থাকে না।
— থাক না সেসব কথা অচিন্ত্য। সেসব এখন কেবল অতীত। আমি বর্তমানকে বাঁচিয়ে রাখায় বিশ্বাসী। ত্রিশ বছর কম নয়! আর তোমার জায়গায় সেদিন তুমি ঠিক ছিলে। অন্য কোনো পুরুষ হলেও তাই করত। আর পরিবার? সমাজ? তারা কী মেনে নিত? …না অচিন্ত্য। আমার মনে কোনো রাগ নেই।
— তোমার সাথে সম্পর্কে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আমার ছিল সুমনা, তখন পরিবার কিংবা সমাজের কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম? তবে যখন তোমার হাত ছেড়ে দিলাম, তখন কেন এত চিন্তা? একবার ভাবলাম না, তোমার মানসিক পরিস্থিতি কেমন থাকবে, তুমি একা কিভাবে সবটা সামলাবে। এগারো বছরের সম্পর্কের এই পরিনতি? তাও যখন পরিবারের সকলে বিয়ের আচার অনুষ্ঠানে মত্ত? শুধুমাত্র একটা মেডিক্যাল রিপোর্টের ভিত্তিতে তোমায় এতবড় শাস্তি দিলাম?
— ওইযে বললাম, অন্য পুরুষ হলেও তাই করত। আর বাবা-মা হওয়ার সাধ প্রত্যেকের থাকে, তুমি আমিও ব্যতিক্রমী নই। তাই বলেই তো সিঙ্গেল মাদার হতেও সেদিন সমাজের তোয়াক্কা করিনি, ঈশানিকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নির্দ্বিধায়। তাই বলেই তো তুমিও দীপ্তি আর দ্বীপ্তনুর মুখে বাবা ডাক শুনতে পেয়ে তৃপ্ত হয়েছো।
— বিয়ে করলেনা কেন সুমনা? কেন একা থেকে গেলে? সমাজের প্রত্যেকটা মানুষ তো আমার মতো নীচ নয় যে তার প্রেয়সীর বন্ধ্যাত্বের তামাশা করে দীর্ঘ এগারো বছরের সম্পর্কের ইতি টানতে পারে। চিকিৎসাশাস্ত্র এতটা অনুন্নত নয় যে আমাদের সম্পর্কটাকে বাঁধতে পারত না।
— আমি একা নই অচিন্ত্য। সেদিনের অভিশপ্ত মেডিক্যাল রিপোর্ট আমায় ঈশাণির মতো আশীর্বাদ প্রদান করেছে। এর চাইতে বেশী আর কী চাওয়ার থাকতে পারে আমার? চিকিৎসাশাস্ত্রের কেরামতি কিংবা তোমার সমর্থন পেলে আমি হয়তো ‘মা’ হতে পারতাম, কিন্তু একই দেহে মা ও বাবা উভয় চরিত্র চরিতার্থ করার স্বর্গসুখ কেবল আমায় ঈশাণিই প্রদান করতে পারত এবং আমার মেয়ে তা যথার্থভাবেই করেছে।
তোমারই কথার সংশোধনী, মাতৃত্ব তথা পিতৃত্বের অধিষ্ঠান সর্বদা গর্ভধারিণীর জঠর কিংবা পিতার ঔরসে সুপ্ত থাকে না। আজ চললাম অচিন্ত্য।
ভালো আছি। ভালো থেকো।