অসহিষ্ণুতা
১১ই সেপ্টেম্বর….এই তারিখটা এখনও বিশ্ববাসীর কাছে ততটাই আতঙ্কের ও দুঃখের ঠিক যতটা আজ থেকে ১৪ বছর আগে ছিল…..টিভির পর্দায় সারা পৃথিবী দেখেছিল এই দিনটায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ধ্বংস হয়ে যাওয়া….স্মৃতিবদ্ধ করে রেখেছে মুহূর্তটাকে….কেমন ভাবে একটা এরোপ্লেন সেঁধিয়ে যাচ্ছে একটা বহুতলের মধ্যে বেমালুম, ঠিক যেমনভাবে ক্যারামে কলাগাছ খেলার সময় গুটিগুলো পড়ে যায় | গোটা বিশ্ববাসী সাক্ষী হয়েছিল সেই ভয়াবহতার | তারপরেও অসহিষ্ণুতার বহু জলজ্যান্ত প্রমান মিলেছে | কিভাবে মানুষ জাত-পাত-ধর্মের বিনিময়ে একে অপরকে হত্যা করছে | ধর্ম নিয়ে অসহিষ্ণুতা মানুষের মধ্যে বেড়েই চলেছে দিনের পর দিন | এর ফলে পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে যে এখন মানুষের ভয়-ভীতির কারণ স্বয়ং মানুষ এ |
অসহিষ্ণুতা বহুদিন ধরেই বিরাজমান এই পৃথিবীর বুকে | নিজের সুবিধার্থে অপরের সর্বনাশের জন্য সবসময় অগ্রসর আছি আমরা | বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজেদের মতাদর্শ, বিশ্বাস, অযৌক্তিক মনোভাব অপরের উপর চাপিয়ে দেওয়াই আমাদের প্রধান কাজের মধ্যে একটি | ব্যক্তিটি যদি যুক্তি দিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে থাকে, তৎক্ষনাত তার কপালে জুটবে দেশদ্রোহির তকমা (তা সে যে দেশেরই মানুষ হন না কেন), মিলবে প্রাণনাশের হুমকি অথবা সবথেকে ভালো যেটা, সংবাদমাধ্যমকে ডেকে তাদের সম্মুখে নিজের দলবল নিয়ে সেই ব্যক্তিটির উপর চড়াও হয়ে তাকে হেনস্থা করা বা তার মুখে কালী মাখিয়ে তাকে এবং অন্যান্যদেরও বুঝিয়ে দেওয়া যে কেউ যেন যুক্তি দিয়ে কিছু না বলে, অবাস্তবকেই যেন গ্রহণ করে | এর কারণ হিসেবে মূলত দায়ী একপক্ষ যারা কিনা মুর্তিপুজোতে বিশ্বাসী ও একনিষ্ঠ এবং ওপর শ্রেনীর মানুষ যারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় গোষ্ঠীভুক্ত মানুষদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি চালিয়ে যায় | ধর্মান্তর, মৌলবাদ মূলত এদেরই মস্তকের শীর্ষভাগ কাজ করে এসবের পিছনে | এমনকি খাদ্যতালিকায়ও এখন এদের হস্তক্ষেপ প্রবল পরিমানে | আমি গরু-শুয়োর-ভেড়া যা ইচ্ছা তাই খেতে পারি, তাতে যদি আমার জাত-পাত নিপাত যায়, তবে তা যাক…. কি তাই বলে এই অজুহাতে মানুষ হত্যা করাটা একটি অতিব নিন্দনীয় কাজ |
হিন্দুরা মুসলিমদের মারতে চায়, মুসলিমরা খ্রীষ্টানদের মারতে চায়, খ্রীষ্টানরা কাদের মারতে চায় তা জানা নেই, তবে এই হত্যালীলা বন্ধ হওয়া উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব | গীতা, কোরান, বাইবেল এক আকাশের নিচেই শান্তিপূর্ণ ভাবে, হৃদ্যতার সাথে যাতে পাঠ করা যায় সেই পরিস্থিতিই কাম্য, যাতে জাত-পাত-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ এক ছাদের তলায় বসবাস করতে পারে সেই মানবিকতাবোধ আনতে হবে |
ব্যভিচার এবং দ্বিচারিতার এই দেশে এই পরিবর্তনটা প্রচন্ড পরিমানে জরুরি, নাহলে এরম পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাঘের মতো মনুষ্য জাতিও লুপ্তপ্রায় হয়ে যাবে খুব শিগগিরি |