—চাকরিটা থাকা খুব দরকার ছিল সঞ্চিতা… এখনকার দিনে চাকরি পাওয়াটা কতটা কঠিন তা তো তুই জানিস। চারিদিকে এতো কম্পিটিশন, বেকারত্ব হুঁ হুঁ করে বেড়ে চলেছে, এর মাঝে করোনার অভিশাপে তো এই বছর রিক্রুটমেন্ট প্রায় নেই বললেই চলে।তাও এমন একটা পদক্ষেপ নিলি?
চাকরিক্ষেত্রে এইসব ছোটখাটো ঝড় ঝাপটা আসতেই পারে। একটু আধটু মানিয়ে নিলে ক্ষতি কী? একটাবার ডিম্পির কথা ভাবলি না তুই?
— সবাই একরকম হয়না সুবীর দা। আমার পক্ষে ওই নোংরামোগুলো মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
আর তুমি ডিম্পির কথা বলছো? আজ যদি ওর কথা ভেবে নিজের আত্মসম্মানের বলি দিতাম, মা হয়ে কখনও ওর চোখে চোখ রাখতে পারতাম না। ডিম্পিও মেয়ে, সেও একদিন বড় হবে। এমন শিক্ষা কোনো মেয়েই দাবি করে না!
চিন্তা করো না সুবীর দা। আমি ঠিক একটা উপায় খুঁজে নেব। আর ডিম্পিও খুশি; তার মাম্মা এখন সারাক্ষণ তার কাছে আছে। চারটে বছর অফিসের কারণে ওকেও সময় দিতে পারিনি। আপাতত মা-মেয়েতে সময় কাটাই; যোগ্যতা থাকলে…আর ভগবান চাইলে ঠিক আরেকটা চাকরি জুটিয়ে নেব।
— আমি জানি রে সঞ্চিতা। তুই ঠিক আরেকটা চাকরি পেয়ে যাবি। শুধু চিন্তা হয় রে… সম্পর্কসূত্রে তোর জামাইবাবু হলেও, তোকে কখনও নিজের বোনের চাইতে কম ভাবিনি। আমি সাক্ষী, ডিম্পির বাবা ছেড়ে চলে যাবার পর সিঙ্গল মাদার হিসেবে সুদীর্ঘ চার বছরের তোর একার কতটা কঠিন লড়াই। ডিভোর্স, ডিম্পির স্কুল, টিউশন, বাড়ি ভাড়া, আরও কত কী! কেবল তুই বলেই সবটা গুছিয়ে চলতে পারছিস।
নিজের কথা তো ভাবতে পারতিস বল! দ্বিতীয় বিয়ে করা তো পাপ নয়। আর অমানুষটা ঘরের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলেছিল, এতে তোর দোষ কোথায়? আজ তোর জীবনে কোনো পুরুষ থাকলে হয়তো তোর অফিসের ম্যানেজার কুপ্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ পেতো না।
— এই তবে উন্নত সমাজ চিত্র? ভাবলে হাসি পায়… কষ্টও হয়। কেন আজও ‘পুরুষ’ নামের আতঙ্কের হাত থেকে বাঁচতে নারী জাতির ‘পুরুষ’ নামক ঢাল প্রয়োজন হয়? দীর্ঘ পাঁচ বছরের সম্পর্কের পরিণতি ছিল সন্দীপনের সাথে আমার বিয়ে…ডিম্পির জন্ম।কই, সে না পুরুষ? আগলে রাখলো না তো?
আজ আমি ডিভোর্সী বলেই চার বছরের চাকরি হাতছাড়া করতে হলো। কেন? অফিসের ম্যানেজারের কুপ্রস্তাবে রাজী হই নি বলে? প্রমোশনের প্রলোভন দেখিয়ে যা ফাঁদ পেতেছিল তাতে পা দিই নি বলে? এতটা প্রত্যাখ্যান ম্যনেজার স্যার মেনে নিতে পারত না সুবীর দা। ঠিক কোনো পদক্ষেপ নিত। তারচেয়ে স্বসন্মানে চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে আমি নিজের কাছে নিজে জিতে গেছি বলে আমি মনে করি।
আমি যে করেই হোক নিজেকে গুছিয়ে নেব…ডিম্পিকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব; তবে আত্মসম্মানকে সঙ্গে নিয়ে, আত্মবিশ্বাসের পিঠে চড়ে।