আমার ঘুম ভাঙ্গে তার ডাকে। আমি চোখ মেলে তাকানোর আগেই সে এসে, আমার পাশে শোয়। আমি তাকে জড়িয়ে ধরে একটু আলসেমি করেই শুয়ে থাকি। তারপর আমাদের নাস্তা, আমাদের চা, বারান্দার এক গোল টেবিলে অপেক্ষা করে। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি সে ঘরে নেই। সে প্রতিদিনের মত করেই বারান্দায় আমার অপেক্ষায় বসে আছে। আমি তার পাশে বসি। চায়ের কাপ থেকে ধোঁয়া উড়তে থাকে। আমরা দুজন আকাশের ডানা মেলে উড়ে যাওয়া পাখিদের দেখি।
সে কবুতর খুব পছন্দ করতো। তাই আমি দুজোড়া কবুতর কিনে এনেছিলাম। সে সারাদিন তাদের নিয়ে খেলতো। আমি দেখতাম। তাদের খেলা দেখতে আমার বেশ ভালো লাগতো। কবুতরগুলো যখন পাখা ঝাঁপটে উড়াল দিতো তখন সে পাখা ঝাঁপটানো দেখে ভয় পেতো। একটু দূরে সরে যেতো। তারা উড়ে গেলে ফের কাছে আসতো।
একবার সেই কবুতরগুলো কোথায় যেন চলে গেলো। আহা! কি কান্না তার! সারাদিন মন খারাপ করে বিছানায় শুয়ে থাকতো। চোখ থেকে শুধুই জল ঝরে যেতো।সারাদিন যে এদিক সেদিক ছুটোছুটি করে বেড়াতো, সে যখন এক জোড়া কবুতরের বিরহে এভাবে ঝিমিয়ে পরবে আমি তা কখনোই ভাবি নি।
সে বৃষ্টি একদমই পছন্দ করে না। কাঁদায় পা পরে গেলে সে অস্থির হয়ে যেত। আমি বৃষ্টি ভালবাসতাম। ভাবতাম প্রেম আর বৃষ্টির অন্য একটা সম্পর্ক আছে। কিন্তু যেদিন থেকে সে আমার জীবনে আসে, সেদিন থেকে আমি বুঝতে শিখি প্রেম মানে বৃষ্টি নয়। প্রেম মানে হতে পারে, ছলছলে রৌদ্রে দুজনে একে অন্যের পেছনে দৌঁড়ে পালানো। প্রেম মানে হতে পারে সামনের মানুষটা ঘুম জেনেও তার কোল ঘেঁষে আদুরে আবদার করা। প্রেম মানে এটাও হতে পারে রাগ করে মুখ ঘুরিয়ে নেয়া। প্রেম মানে হতে পারে বিরক্তি। হতে পারে দূরত্ব। তারপর কাছে এসে গা ঘেঁষে বসা। এটাও প্রেম।
প্রেম মানে হতে পারে আমি আর আমার শিলু। আমার পোষা প্রাণী।
এই কুকুরছানা আমাকে প্রেমের অর্থ দিয়েছে।
আমাদের মত প্রেম তবে আর কেউ জানে না করতে। সবাই সেই এক বস্তা পঁচা প্রেমের গল্পেই চায় ডুবতে।