( আমার নাম বোধহয় তিতির । আমার বয়স ১৯ । আমি ছোট থেকে Social anxiety disorder এর শিকার । আর এটা আমার গল্প । )
(অনেক্ষণ হলো শহরে সন্ধে নেমেছে । স্ট্রীটলাইট গুলো আজ একটু বেশি ই খুশি,আজ যেন বেশি ই ঝলমল করছে । কিন্তু কই দুপুরের ঐ ট্রাফিকে ভিখিরি বুড়িটার মুখটাতো অতো ঝলমল করছিল না । অনেকদিন ঠিকমতো হয়তো খেতেই পায়নি । যখন ঐ বুড়িটা ওর ওরকম কঙ্কালসার হাত দিয়ে গাড়ির জানলায় মারলো । মা তো ভয়ে আঁতকে উঠেছিলো । আমি কিন্তু ওকে খালি হাতে ফেরাইনি ১০ টাকা দিয়েছিলাম । আর সেটা দেখে মা তো—)
—‘তিতির Snacks টা করে নিবি আয় ’।
(বারবার মা যে কেন আমার আর আমার চিন্তার মাঝে বটগাছ হয়ে দাঁড়ায় কে জানে,ধুসস্ ভালো লাগে না । )
Snacks টা কোনোরকমে সেরে উঠে পড়বো ,ঠিক মা—
—‘তিতির পুরোটা খেয়েছিস তো ?’
(এবার আমার রাগ হলো । )
—‘উফফ্ মা সবসময় খিটখিট ভালো লাগে না’।
—‘মেয়েটা এখনো ঠিকমত খেতে শিখলো না । আমার কি ,আমার কথা কে আর শোনে,আমি তো—’
ঐ শুরু হল ফালতু বকা । এবার এটা চলতেই থাকবে । তাই দেরি না করে , নিজের ঘরে ঢুকে টিভিটা অন করে সোফায় বসে অন্যমনস্ক ভাবে চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে একজায়গায় থেমে গেলাম । সিরিয়ার এখনকার অবস্থা —
(আমি না ঠিক বুঝলাম না বা এখনো ঠিকমতো হয়তো বুঝতে পারিনি যে সিরিয়ায় যুদ্ধটা কেন । তার মানে আমরা এমন এক দুনিয়ায় বাস করি যেখানে মানুষের চেয়ে ধর্ম বড়ো । কি লাভ হলো ?এত ভয়াবহ যুদ্ধের পরেও মানুষগুলো হাসছে,এখনো তারা সবাইকে ভালোবাসতে জানে,গান গাইছে,নামাজ পড়ছে ,এমনকি ঐ ভাঙাচোরা স্কুলের মধ্যে পড়াশুনাও করছে । কিন্তু সমস্যাটা হলো বাচ্চা গুলো , যারা এই যুদ্ধটা দেখেছে,সমীক্ষা বলছে যুদ্ধের ভয়াবহতার জন্যই তারা নাকি রাতে ঘুমের ঘোরে বিছানায় প্রস্রাব করছে আবার কেউ কেউ হঠাৎ হঠাৎ কেঁদে উঠছে —)
(না এবার মা নয়,নিজে থেকেই ভাবনাচিন্তা কেটে গেল । মনে শুধু এটাই আসছে কেন ভগবান কেন?)
—‘এখন একটা ছোট্ট বিরতি ফিরে আসছি বিরতির পর—’
ঘরের ডোরবেলটা বেজে উঠলো । মনে হচ্ছে বাপি এসেছে । মা দরজাটা খুললো । বাপি ঘরে ঢুকলো । তারপর জিজ্ঞেস করলো—
—‘তিতির খেয়েছে ?’
কথাটা শুনে মা ও বোধহয় অবাক হলো ।
—‘হ্যাঁ,খেয়েছে । ’
(সত্যি বাবা কি আমার কথা ভাবে আদৌ ? কই কখনো তো আমার কাছে আসেনি ,এসে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করেনি—‘মা খেয়েছিস ? ’,কই কখনো তো এসে আমার সাথে গল্প করেনি ,আমার বেশি কিছু চাইনা বাপি একবার শুধু আমার দিকে তাকিয়ে হাসো ,সত্যি বলছি আমার কিছু চাই না । এটা বোধহয় সম্ভব নয় কারণ তুমি ছেলে চেয়েছিলে আর আমি—)
উফফ্,ফোনটা আবার বেজে উঠলো । ফলে ভাবনাগুলো আবার উবে গেল ।
(আমি যখনই কিছু ভাবি তখনই কেউ না কেউ এসে আমায় ঘাটায় । দুনিয়া টা কাউকে কিছু নিয়ে ভাববার জন্য জায়গা দিতে চায় না—)
ফোনটা তখন ও বেজে চলেছে । অপরিচিত নাম্বার তুলবো কি তুলবো না করে ,শেষমেষ ফোনটা টা ধরেই নিলাম । ওপাশ থেকে একটা অপরিচিত ছেলের গলা —
—‘আচ্ছা এটা কি তিতির দত্ত বলছেন ?’
—‘হ্যাঁ ,বলছি । কিন্তু আপনি কে বলছেন ?’
—‘আপনি আপনার ব্যাগ সহ ডায়েরিটা…
(ক্রমশ)