তখন রাত এগারোটা বেজে দশ। উৎসবের ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে শো করছে ‘উজ্জ্বয়িনী কলিং”।
উৎসব আর উজ্জ্বয়িনী ক্লাস এইট থেকে খুব ভালো বন্ধু। দুজনেই এখন মাস্টার্স করছে। উৎসব স্ট্যাটিস্টিকস্ এ আর উজ্জ্বয়িনী ইকোনোমিকস্ এ।
উৎসব ফোনটা রিসিভ করে বলল-“হ্যাঁ, বল” । “তোর গলাটা ভাঙা ভাঙা লাগছে কেন বলতো, আবার ঠাণ্ডা লাগিয়েছিস”- ধমক দিয়ে বলল উজ্জ্বয়িনী । “আরে না না। ওই একটু লেগেছে আর কি।”- বাধ্য ছেলের মত বলল উৎসব।
-“কি করছিস?”
-“কিছু না। নতুন কিছু লেখার ভাবনা তৈরি করছিলাম”। উৎসবের লেখালেখির শখটা ছোটো থেকেই। কবিতা লিখতে ভীষণ ভালোবাসে।
-“আরে শোন না, তোকে ওই ব্যাপারেই কল করেছিলাম”, ফোনের ওপার থেকে বললো উজ্জ্বয়িনী ।
-“কি ব্যাপারে? আবার নতুন কিছু লেখার আবদার না কি?”- হেসে হেসে বলল উৎসব
-“হুমম। কালতো সরস্বতী পূজো। মানে বাঙালির প্রেম দিবস। আর তুই তো জানিস দুবছর আগে সুমন আমাকে কালকের দিনই প্রোপোজ করেছিল। তো তুই আমার আর সুমনের জন্য কিছু লিখে দে!” আবেগে বলল উজ্জ্বয়িনী ।
-“আচ্ছা প্রেম করবি তোরা আর লিখব আমি”
-“বাজে না বকে তাড়াতাড়ি লিখে হোয়াটস্অ্যপে সেন্ড কর”
-“আচ্ছা অর্ডার তো। আমি কি কবি না কি!”
-“তুই লিখিস তাই বললাম। যা লিখতে হবে না”-এবার একটু ন্যাকা সুর গাইল উজ্জ্বয়িনী ।
-“ন্যাকামো করতে হবে না , চেষ্টা করবো। একটু টাইম দে। ভালো না হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না কিন্তু!”
-“আরে তুই লিখলে ভালোই হবে। আমি সিওর”
-“ঠিক আছে আর প্যাক মারতে হবে না”
-“ওকে লিখে সেন্ড কর”
-“ওকে দেখছি”
-“আচ্ছা, কাল কার সাথে বেরোবি?”
-“একা, যেরম বেরোই’
-“কেন, আমাদের সাথে বেরো।”
-“তোরা প্রেম করবি আর আমি চৌকিদার। তাই তো!”
-“ধুর, তোকে নিয়ে আর পারি না। রাখ্ তো আর লেখাটা সেন্ড কর।” কিছু টা বিরক্ত হয়েই বলল উজ্জ্বয়িনী ।
-“ওকে যা যা। গুড নাইট্”
উৎসব ফোনটা রেখে একটা সিগারেট ধরাল আর রবীন্দ্রনাথের দুটো লাইন আওড়াতে থাকল
“তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও
আমি যত দুঃখ পাই”
তারপর চারিদিক একরাশ নিস্তব্ধতা যেন হঠাৎ করেই একাকীত্বের বাঁধনে ঘিরে ফেরল উৎসবকে। আকস্মিকভাবে এবং অজান্তেই যেন সে হারিয়ে ফেললো কাউকে।
ডায়েরিতে কবিতার নাম লিখলো ‘ উজ্জ্বয়িনী উৎসব ‘ । না, এই কবিতা আর উজ্জ্বয়িনীর জন্য নয়, একান্তই উৎসবের!