নতুন বইয়ের গন্ধ কারই বা ভালো না লাগে। তবে আমি বলবো একদফা একটা পুরাতন বই কেনো। পুরাতন বইয়ের প্রতি ভাঁজে অদ্ভুত একটা নিকোটিনের নেশা খুঁজে পাবে। এই ধরো, কোন এক পাতায় কিছু শব্দের মাঝে পেন্সিলের রেখা। সেই লাইনগুলো হয়তো পুরাতন পাঠকের মনের খুব কাছের বা ভালো লাগার ছাপ ছেড়ে আছে। বা বইটার পাতা উল্টাতে গিয়ে দেখলে, একটা পৃষ্ঠায় দুফোঁটা অশ্রুর চিহ্ন। কেউ হয়তো লেখাটা পড়তে গিয়ে চোখের কাজল ধুয়ে দিয়েছিল।
একটা পুরাতন বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে থাকে একটা প্রেমিকের চিরকুট। বা প্রেমিকার দেয়া রক্তজবা শুকনো ফুল।
ভেবে দেখো, কেউ হয়তো বইটা পড়তে পড়তে চোখের সামনে উপচে পড়া কয়গোছা চুল, আলতো করে কানের পেছনে তুলে রাখলো। কেউ হয়তো চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বইটা পড়তে পড়তেই হঠাৎ তার বারান্দায় ঝুম বৃষ্টি নেমে আসলো। কটা পাতায় বৃষ্টির স্পর্শ তোলা থাকলো। কেউ হয়তো রাত জেগে চোখের নিচে কালি ভরিয়ে বইটা পড়ে, বালিশের নিচে লুকিয়ে রাখলো। বইটার মাঝে কিছু জীর্ণতা ছুঁয়ে রইলো। কেউ হয়তো বইটা পড়ে খুব হাসলো, তার হাসি মেখে থাকলো বইয়ের মলাটে। কেউ হয়তো বইয়ের কল্পনায় কোথাও হারিয়ে গেলো, আর বইয়ে তার ভাবনা লুকিয়ে থাকলো। ধরো বইটা ক্লাসের মধ্যে লুকিয়ে পড়তে গিয়ে, ধরা পড়ে গেলো শিক্ষকের নজরে। সেই ভীত চিন্তার রেশ থেকে গেলো বইয়ের ভাঁজে। হয়তো কেউ পুরষ্কারে বইটা পেলো, বা প্রেমিকার দেয়া উপহার ছিল। একটা পুরাতন বই অজস্র স্মৃতি মলাট করে রাখে।
একটা বই যেমন শুধু বই নয়। তেমনি একটা পুরাতন বই শুধু পুরাতন নয়। একটা পুরাতন বই অজস্র গল্পের ইতিহাস ধারণ করা এক জীবন হয়তো। যেখানে কতগুলো সময়, কতগুলো দিন জমা করা আছে। আর সেই জমা করা স্মৃতিগুলো তোমার হলো, একটা পুরাতন বই।