ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি

আজ ১১ই আগস্ট। ১৯০৮ সালের এই আজকের দিনে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি হয়। আজ ওনার ১১২তম মৃত্যু বার্ষিকী।

ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ সালের ৩রা ডিসেম্বর অবিভক্ত বাংলার মেদিনীপুর জেলার, হাবিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম ত্রৈলোক‍্য নাথ ও মাতার নাম লক্ষ্মী প্রিয়া দেবী। মাত্র আঠারো বছর বয়সে ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি হয়। কেন এবং কী করে হয়? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

Khudiram Bose

৩০ শে এপ্রিল ১৯০৮ বিহারের মোজাফ্ফরপুরে রাত্রি আটটা ত্রিশ মিনিটে রাতের অন্ধকারে, এক হাতে বোমা এবং অন্য হাতে পিস্তল নিয়ে, ১৮ বছরের ক্ষুদিরাম কিংসফোর্ডকে হত্যা করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, সঙ্গে ছিলেন প্রফুল্ল চাকী। যখন তাঁরা দেখলেন কিংসফোর্ডের গাড়ি আসছে, তখন বোমা ছুঁড়ে মারলেন আর সঙ্গে সঙ্গেই সেই গাড়ি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেদিন সেই গাড়িতে কিংসফোর্ড ছিলেন না। সেইদিন সেই গাড়িতে ছিলেন, মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা।

সেদিন রাতে তাঁরা যে ঘটনা ঘটিয়েছিল, তাতে ইংরেজদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল। ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকীকে ধরার জন্য ইংরেজ সরকার একশত কুড়ি টাকা পুরস্কার ঘুষণা করে দেন। ক্ষুদিরাম বসু এবং প্রফুল্ল চাকী দুজনে দুই রাস্তা অবলম্বন করলেন। কিন্তু তাঁরা দুজনেই ইংরেজদের কাছে ধরা পড়ে যান। ইংরেজদের হাতে পড়ার আগে প্রফুল্ল চাকী পিস্তলের গুলিতে নিজেকে হত্যা করেন। তবুও ব্রিটিশ সরকারের হাতে ধরা দিলেন না। অন্য দিকে ক্ষুদিরাম বোস ইংরেজদের কড়া পাহারা থাকা সত্ত্বেও পঁচিশ মাইল রাস্তা পায়ে হেঁটে ওয়াইনি রেল স্টেশনে (বর্তমানে ক্ষুদিরাম বোস পুসা রেলস্টেশন নামে পরিচিত) এক চায়ের দোকানে জল খেতে ঢুকলে সেখানে তাকে দেখে ইংরেজদের সন্দেহ হয় এবং তাঁর দেহ তল্লাশি করে একটা পিস্তল ও ৩৭ রাউন্ড গুলি পায় এবং তাঁকে ইংরেজরা গ্রেফতার করে।

ক্ষুদিরামের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিচারের রায় জজ সাহেব পড়ে শোনালেন। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নির্বিকার শান্ত মুখে মৃত্যু পরোয়ানার কথা শুনেও তাঁকে নির্বিকার দেখে জজ সাহেব ভাবলেন, সে হয়তো ফাঁসির মানে বুঝতে পারেনি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, যে রায় দেওয়া হল তা কি তুমি বুঝতে পেরেছো? হাসি মুখে মাথা নাড়ালেন ক্ষুদিরাম বসু। জজ সাহেব আরো জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি কিছু বলার আছে? তখন ক্ষুদিরাম বললেন, আমাকে কাগজ কলম দিলে দেখিয়ে দিতে পারি বোমটা কত বড় ছিল। আপনি শিখলে আপনাকে শিখিয়েও দিতে পারি। জজ সাহেব তখন বললেন তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না।

রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করার জন্য ক্ষুদিরাম বসুকে সাতদিন সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কখনোই তিনি কোন আপিল করতে চাননি। উকিলরা তাঁকে বুঝিয়েছিলেন, আপিল করলে শাস্তি কমতে পারে। অবশেষে অনেক বোঝানোর পর রাজি হলেন। ফাঁসির আদেশ পুনর্বিবেচনা করার জন্য হাইকোর্টে তিনি আপিল করলেন, কিন্তু হাইকোর্ট ছিল ইংরেজদের এক তরফা বিচারশালা। তাই সব যুক্তি ব্যর্থ হল। ক্ষুদিরামের ফাঁসির সাজাই বহাল থাকলো। ফাঁসির দিন ধার্য্য হল ১১ই আগস্ট মঙ্গলবার।

এটাও পড়তে পারেন : সিরাজ ও পলাশির ভুল

ফাঁসির আগে ক্ষুদিরাম বোস জানিয়েছিলেন তাঁর শেষ তিনটি ইচ্ছের কথা। একটি হল হাবিবপুরের চতুর্ভুজা কালীর চরণামৃত শেষ বারের মত পান করতে চেয়েছিলেন। তারপর মেদিনীপুর শহরকে শেষ বারের মত দেখতে চেয়েছিলেন এবং আরেকটা হল দিদি অপরুপা ও ভাগ্না ভাগ্নিদের দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর কোনো ইচ্ছেই পূরণ করা হয়েছিল না।

১৯০৮ সালের ১১ই আগস্ট সকালবেলা কাটায় কাটায় ঠিক ছয় টার সময় ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি হল।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *