আজ চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি, সারা পৃথিবীর কাছে আজ ভালোবাসার দিন। কিন্তু তাদের সত্যিকারের ভালোবাসার দিন আসতে এখনো প্রায় দিন দশেক বাকী, সেদিন শওকত তার রাধিকাকে নিকাহ করে ঘরে নিয়ে আসবে পাকাপাকি ভাবে। কাশ্মীরের উরি রেজিমেন্টের দশ নম্বর ব্যাটিলিয়ানের বিএসএফ জওয়ান শওকত হোসেন এসবই ভাবছিল তাদের কনভয়ে বসে। উরি রেজিমেন্ট ছেড়ে তারা এখন চলেছে জম্মু রেজিমেন্টের উদ্দেশ্যে।
রাধিকার মুখটা যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছিল বারবার।কম ওঠাপড়া তো যায়নি তাদের জীবনে, তবে না আজ এই দিনটা আসতে চলেছে! দুই ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী পরিবার পরিজনকে বুঝিয়ে এক ছাদের তলায় নিয়ে আসা সহজ ছিল না মোটেই। হাল ছাড়েনি তারা, তাই আজ দুই পরিবারের দোয়া নিয়েই তাদের সবথেকে বড় মজহব ভালোবাসার জয় হতে চলেছে অবশেষে। কিছুদিন আগে শ্রীনগরের বাজার থেকে এক জোড়া ঝুমকো কিনেছে রাধিকার বিয়ের উপহার হিসেবে, কেনার পর থেকে সেটা কাছছাড়া করেনি একমুহুর্ত। এখনও ঊর্দির পকেটে সেটার উপস্থিতি অনুভব করলো। আর কিনেছে একটা লাল চেলি, লাল রঙ বড় প্রিয় তার, লাল… ভালোবাসার রং ।
ভাবনায় ছেদ পড়ল আচমকা, সজোড়ে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়ল গাড়িটা, টায়ার বার্স্ট করেছে… মনটা একটু কু গেয়ে উঠলো কি? নাহ্, প্রস্তুত হওয়ার সময়ও পায়নি কনভয়ে থাকা জনা চল্লিশ জওয়ান। সেকেন্ডের ভগ্নাংশেরও কম সময়ে চারিপাশের নিস্তব্ধতা ভেদ করে শুরু হয় মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ। অবশ্য এই এলাকায় এসব নিত্যদিনের রোজনামচা। তবুও বীরের মতো লড়েছিল চল্লিশটা প্রাণ, শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত। কিন্তু শত্রুরা চক্রবূহ্যের মত ঘিরে ফেলে তাদের। তারপর এক সময় ধাতব আওয়াজ থেমে যায়, বাতাস ভারী হয়ে ওঠে বারুদ আর মাংসপোড়া গন্ধে। ভূস্বর্গের মাটি ধুয়ে যায় কালচে রক্তের বন্যায়। ভালোবাসার রঙ লাল, ঘৃণা আর হিংসারও… আর সেই লাল গায়ে মেখে পড়ে থাকে এক জোড়া ঝুমকো…।