শ্রীচরনেষু বাবা,
জানি চিঠিটা যখন তোমার কাছে এসে পৌঁছাবে তখন আমি হয়তো তখন কোথাও নেই।আর মা এই চিঠি পড়ার মতো অবস্থায় থাকবে না তাই তোমাকেই লেখা আমার শেষ চিঠি।জানো বাবা কখনও ভাবিনি শেষ পর্যন্ত আমাকে কোনওদিন এরকম কিছু লিখতে হবে।
সেই ছোট্ট থেকে তোমরা চেয়েছো আমি সব জায়গায় টপার হই। আমিও আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করতাম। বাবা তোমার মনে আছে আমার রেসাল্ট বেরোলেই তুমি কেমন সবাইকে বুক ফুলিয়ে বলতে আমার ছেলে কোনওদিন সেকেন্ড হতেই শেখেনি।
মাঝে মাঝে আমার খুব কষ্ট হতো যখন আমি শীতের দুপুরে কেমিস্ট্রী বই নিয়ে বসে থাকতাম আর পাড়ার ছেলেরা ক্রিকেট খেলতো। একবার তোমার ওপর খুব রাগ হয়েছিলো যেদিন তুমি আমার সামনে মাধ্যমিক বলে গীটার ক্লাস বন্ধ করে দিলে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো সেদিন কিন্তু আমি যে টপার আমাকে তো ডাক্তার হতে হবে তাইনা বাবা!
মাধ্যমিকের পরে আমার সব বন্ধুরা যখন কোথায় ঘুরতে যাবে এসব ভাবছে তখন আমাকে ভর্তি করালে কোনও এক নামী কোচিং সেন্টারে। জয়েন্টে তো ভালো স্কোর করতে হবে। আমার দম বন্ধ হয়ে আসতো মাঝে মাঝে মনে হতো সব ছেড়ে দিয়ে মামার বাড়ি চলে যায় ,ছুটি কাটিয়ে আসি,দাদুর কাছে সারারাত ধরে ভুতের গল্প শুনি ।নাহ্ !সেটা অবশ্য কখনও আর হলনা।মেডিকেল নিয়ে পড়ার কোনও ইচ্ছেয় আমার ছিলোনা। কিন্তু তোমাকে কখনও বলতে পারিনি কারন আমি জানতাম তুমি ভেঙে পড়বে তোমার টপার ছেলে যদি ডাক্তার না হয়।
দুটো বছর নষ্ট করলাম নিট পরীক্ষার চক্করে । বন্ধু রা সবাই সিনিয়র তখন । আমার প্রায় পাগল পাগল অবস্থা। অবশেষে যেদিন আমি সফল হলাম তোমার আর মায়ের আনন্দে চোখে জল এসে গেছিলো। তারপরে কলেজে এলাম। শুরু টা ভালো হলেও পরে বুঝেছিলাম এসব আমার জন্য নয়। অ্যানাটমি ,বায়োকেমিস্ট্রী কিছুই মাথায় ঢুকতো না।তুমি এসব খবরও রাখোনি। শুধু মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে যেতে। আমি বুঝেছিলাম বাবা আমি আর পারবো না ।
আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো তোমাদের কথা ভেবে এত কিছু করেছো আমার জন্য তাও আমি পারিনি পাশ করতে । দুটো পেপারে সাপ্লি পেলাম যা তোমারা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারোনা। তোমাদের বলিওনি।আমি চলে যাবো তারপরে হয়তো জানতে পারবে।
এই তো আর কিছুক্ষন! যাদের সাথে বসে এখন আড্ডা মারছি তারাও জানেনা আমি চলে যাবো অনেক দূরে সবার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। খুব মিস করবো বাবা তোমাদের। ভালো থেকো পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। সত্যি আমি আর পারলাম না।
ইতি ,
তোমার বাবান