সোমবারের সকাল। সাত বছরের মিনা আর চার বছরের মিতা,মেয়ে দুটি আজ খুব খুশি। ওরা শুনেছে ওদের কে ভাই আসবে ওদের মা-বাবার সাথে। সন্ধ্যায় ওরা ঘরের দাওয়াতে ঘুমিয়ে পড়ে।
শহরতলিতে টিনের দু-চালার ঘর। দাওয়াতে বসে দুই বোনে ভাবে ছোট্ট ভাইকে খুব আদর করবে। বাবা-মা গেছে ভাইকে আনতে। কিন্তু ঠাম্মার মনে আনন্দ নেই। অভাবী সংসার। যদি আবার একটা মেয়ে হয়!! ছোট্ট একটা মুদির দোকানের আয় আর কতো? মা কমলকে পরামর্শ দেয়, “বাবা, আর বেশি দেরি করা উচিত হবে না।” বউ ময়না সব কিছু বুঝতে পারে। তবু তো নিজের সন্তান। ভাবে, কোনো পাপ লাগবে না তো? সে অপরাধী নাকি নিরপরাধী? নাকি স্রেফ অপরাধের শিকার? স্বামী আর শাশুড়ির শলা-পরামর্শ সে রোজই শোনে। আবার কখনও মনকে সান্ত্বনা দেয়। নারীর জীবনের এক অসহায় পরিস্থিতি।
সেদিন কমল সন্ধ্যায় শহরের এক নার্সিংহোম থেকে ঘরে নিয়ে আসে, অটোতে। খুব সাবধানে ময়নাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। চোখের জলে বালিশটা ভিজে যায়, যন্ত্রণায় তার চোখ বুজে আসে।
গর্ভস্থ এক নিরপরাধ শিশুকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হলো। খুলে গেল আমাদের সভ্যতার মুখোশ। মিতা,মিনার কাছে আমাদের জবাব কি হবে জানা নেই। অন্ধকার উঠোনে কমল মুখ নিচু করে বসেছিল। হয়তো কাঁদছিল। সবার আড়ালে। পিছন থেকে কমলের মা ছেলের মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে,ডাক্তার-দিদি কি বললেন?”
ধরা গলায় কমল বললো, “মেয়ে নয় গো মা,ছেলে হয়েছিল!”
নিরপরাধ
Facebook Comments Box