ওড়িশার মূল আকর্ষণ পুরীর সমুদ্র আর জগন্নাথ দেবের ধাম।আপামর বাঙালির সপ্তাহান্তে ছুটি কাটানোর সেরা ঠিকানা। শুধু পুরী নয় , ওড়িশা রাজ্যের চতুর্দিকে বিরাজ করছে বহু দেবমন্দির ও তীর্থস্থান।পাহাড় সমুদ্র নদী ঘেরা ওড়িশার নৈসর্গিক রূপ দেখলে সত্যিই চোখ জুড়িয়ে যায়। যা পর্যটকদের ঝুলিতে প্রথম দেখা তেই জায়গা করে নেবে। আরণ্যক শহর হিসেবে ওড়িশা এখনো সেই অর্থে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি কিন্তু শহরের যান্ত্রিকতা থেকে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের সন্ধানে আপনি বেরিয়ে পড়তেই পারেন ওড়িশার পঞ্চলিঙ্গেস্বরের উদ্দেশ্যে। ওড়িশার বালাসোর শহরে নিলিগিরি পর্বতের কোলে জাগ্রত পীঠস্থান এটি। পাহাড়ের বুক চিরে সবুজ অরণ্যের মধ্যে গড়ে উঠেছে পাঁচটি শিব লিঙ্গের মন্দির । ৩১১টি সিঁড়ি পেরিয়ে তবে দর্শন পাওয়া যায় শিবের। তবে সিঁড়িতে ওঠা খুব কস্টকর নয় সিঁড়ির দুপাশে শক্ত রেলিং ধরে ধরে বাচ্চা থেকে বয়স্ক সকলেই মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারেন। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে স্বাভাবিক ভাবেই নিঃশ্বাসের সমস্যা হতে পারে তার জন্য পথের মাঝে বসার ব্যবস্থা আছে অর্থাৎ জিরিয়ে নেওয়ার জায়গা আছে।প্রকৃতি আপন খেয়ালেই ঘিরে রেখেছে সমগ্র মন্দির টিকে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় ঝর্ণার কুলকুল শব্দ পর্যটক মনকে ব্যাকুল করবেই। জলের উৎস খুঁজতে গিয়ে ইতি উতি উঁকি মারলেই মনোরম সবুজে মোরা গালিচা যেন চোখের আরাম দেয়। হরেক পাখির কিচিরমিচির আর নাম না জানা গাছ গাছালির সমাবেশ মন্দিরের ওঠার পথে ক্লান্তি দূর করে। বহু দূর দূরান্ত থেকে মানুষের সমাগম হয় পঞ্চলিঙ্গেসর মন্দিরে। পাঁচটি শিবলিঙ্গ অর্থাৎ পাঁচটি পাথরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পাহাড়ি ঝর্ণা। ঝর্ণার নীচে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা শিব লিঙ্গের কিছু প্রাচীন ইতিহাস ও শোনা যায়। কথিত আছে রাম নন্দিনী সীতা এই পাঁচটি পাথরকে শিব লিঙ্গ রূপে পূজা করতেন সেই থেকেই এই স্থানের উৎপত্তি। তবে সেই শিব লিঙ্গ দর্শনের সুযোগ মেলে না শুধু হাত দিয়ে অনুভব করা যায়।মন্দিরে সকলে পুজো দিতে পারেন।বিশেষ করে সোমবার মন্দিরে পুজো দিতে অনেক পুণ্যার্থীরা ভিড় হয়। মন্দিরের দু পাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সকলকে মুগ্ধ করবে।
পঞ্চলিঙ্গেস্বরে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল আছে এবং ওড়িশা সরকারের পন্থনিবাস ও রয়েছে। হোটেলের মধ্যে হিল ভিউ রিসোর্ট, মহেন্দ্র নিবাস উল্লেখযোগ্য। দুটি হোটেলর অবস্থানই পাহাড়ের গা ঘেঁষে। হোটেলের ব্যালকনি থেকে পাহাড় জঙ্গল পাখির কলতান সব কিছুই মন্ত্রমুগ্ধের মত আস্বাদন করতে পারবেন পর্যটকরা। এডভেঞ্চার প্রিয় বাঙালি দের দারুন পছন্দের জায়গা হয়ে উঠতে পারে এই পঞ্চলিঙ্গেস্বর। ট্রেক করতে যারা ভালোবাসেন তাদের জন্য ট্রেকিংয়ের ও ব্যবস্থা আছে নীলগিরি পাহাড়ে।গহন জঙ্গলে হটাৎ করে দেখা মিলতে পারে বন্য প্রাণী ও বিশেষ করে হাতির । দু তিন দিনের ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুদের অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে একাত্ম সুযোগ করে দেবে ওড়িশার এই নির্জন ভ্রমনস্থল।পাহাড় মন্দিরের সাথে সমুদ্রের স্বাদ পেতে গেলে ভ্রমণের ঝুলিতে যোগ করতে পারেন চাঁদি পুরের ভ্যানিসিং সি বিচ।
কি ভাবে যাবেন – হাওড়া থেকে বালাসোর যাওয়ার অনেক ট্রেন আছে। বালাসোর স্টেশনে নেমে গাড়িতে করে পঞ্চলিঙ্গেস্বর। এ ছাড়াও নিজস্ব বা প্রাইভেট গাড়িতে বাই রোড হয়েও আসতে পারেন ।