পর্ণমোচী
সেদিন ছিল ৩০শে মে, ২০১৩। তখন সবে এইচ.এস. দিয়েছি। রেজাল্ট আউট হয়নি তখনও।
আকাশটা মেঘে ঢাকা! সকালটা কি একটু বেশিই মেঘাচ্ছন্ন ছিল সেদিন? হঠাৎ টিভির চ্যানেল খুলে দেখলাম, “ঋতু নেই”! তোমার সাথে আমার আলাপ তখন নিতান্ত টেলিভিশন দেখে! স্টার জলসায় তখন হত, “ঘোষ & কোম্পানি”! সেটা দেখতে দেখতে অবাক হতে হত! তারপর মির্চিতে একদিন তুমি “স্ত্রীর পত্র” পাঠ করলে। তোমার গলা মুগ্ধ করেছিল আমায়! তুমি ছিলে খুব কাছের।
তোমার সব সিনেমা দেখেছি বলবো না, তবে “চোখের বালি” বা “নৌকাডুবি” দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তোমার রুচিতে আমি বরাবর মুগ্ধ! সবার অন্তরের রূপ যেন অনায়াসেই ফুটিয়ে তুলতে পারো তুমি! তোমার ভাবনা যেন অনবদ্য। তুমিই প্রথম জানিয়েছিলে, “মন খারাপ হলেই কুয়াশা হয়, ব্যাকুল হলেই তিস্তা”! “তিতলি”র পাহাড়ে ঘেরা সৌন্দর্য কিংবা “উৎসব”-এর দুর্গাপূজার আবহ― তোমার মতন করে গল্প আর কেউ বলেনি! “আবহমান” ধরে পথ চলা আর হল না তোমার, “খেলা”তেই পরাজিত হলে তুমি! “সানগ্লাস” চোখে “হীরের আংটি” খুঁজেছিলে, তুমি “দোসর” হয়ে “চিত্রাঙ্গদা” হয়ে উঠেছিলে আমাদের কাছে। তারপর “তিতলি” হয়ে পাহাড়ি রাস্তার ধারে “উৎসব”এ মেতেছিলে।
“চোখের বালি” হয়ে “অন্তরমহল”-এ প্রবেশ তোমার! “রেনকোট” পরে “অসুখ” সেরেছিল কিনা জানা যায়না এখনো! “বাড়িওয়ালি”রা কি এখনো “শুভ মহরৎ”-এর অপেক্ষা করে? নিজেকে “দহন” করে “সত্যান্বেষী” হয়ে উঠেছিলে তুমি! তোমার কাছে আগলে রাখা জাতীয় পুরস্কারে বাঙালি ছিল গর্বিত! তবু ভেসে আসা ব্যঙ্গ জানি তীরের মতো বিঁধতো তোমায়। কখনো পাত্তা দাওনি সেভাবে। কারো কাছে তুমি কেবল মেয়েলি, আবার কেউ তোমার গর্বে অহংকারী।
“আরেকটি প্রেমের গল্প”-এ তুমি চপল ভাদুড়ী সাজলে, তারপর “চিত্রাঙ্গদা” করলে তুমি! তোমার নারীমনকে বারবার প্রকাশ করেছ তুমি! হয়তো এবার তাতে শিলমোহর পড়েছিল।
অন্ধকারাচ্ছন্ন ৩০শে মে, তাসের ঘরে তোমার মৃতদেহ। কান্নায় ধুয়ে যাচ্ছিল তোমার কাছের মানুষদের মুখ। শহর সেদিন ধুয়ে যাচ্ছিল বৃষ্টিতে।
একটাই প্রার্থনা ছিল সেদিন ভগবানের কাছে, “বনমালী তুমি পরজনমে হইয়ো রাধা”!