পাগলের প্রলাপআর পাঁচটা মানুষের মত আমিও সাধারণ ভাবেই বাঁচতে চেয়েছিলাম , জীবনধারণ করতে চেয়েছিলাম ; কিন্তু সেটা সম্ভবপর হল কৈ ? ছোট থেকেই নিজেকে এই অমেরুদন্ডি শ্রেনীরথেকে বিছিন্ন মনে হত , বয়স বাড়ার সাথে সাথেই এই ভাবনা আরো জোরালো হতে শুরু করে এবং জীবনধারণের ভঙ্গিমাটা পাল্টে যায় পুরোপুরি | সম্পূর্ণভাবে এর জন্য দায়ী মনে করিঋত্বিক ঘটক , গৌতম চট্টোপাধ্যায় , চার্লি চ্যাপলিনের মতো মানুষজনদের , যাদের দ্বারা নির্মিত অমূল্য সব কাজ আমাকে মুগ্ধ করেছে ; ভাবতে বাধ্য করেছে প্রতিনিয়ত | যারা সবসময়শোষিতদের হয়ে লড়েছেন | যারা শাসকশ্রেণীকে গোড়া থেকে উৎখাত করতে তৎপর থেকেছেন সর্বক্ষণ , যারা পুঁজিবাদের নাম – গন্ধ মুছে দিয়ে জাত – পাত – বর্ণ নির্বিশেষে একসমাজের প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন ; কিন্তু ! এদের মধ্যে কারুর কপালে জুটেছে মাতাল ও পাগলের তকমা , কেউ আবার শুধুই হাস্যরসের উপাদান হয়েই রয়ে গেছেন | তবুও এরাইআমার মস্তিষ্ককে বিচলিত করেছে প্রবলভাবে ; রাতের পর রাত জেগে ভাবতে বাধ্য করেছে কেন বাস্তবে ২ + ২ = ৪ হয় না …. আচ্ছা আমাদের চারপাশে যা যা ঘটছে , আমরা যেসব মান ওহুশহীন জিনিসের অবলম্বন নিচ্ছি , সবটাই কি শুধু নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য?বোধ করি , সবটাই আপাতদৃষ্টিতে একটা সমীকরণের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে | এই ছক , সমীকরণ সবই আমাদের নিজেদের সুবিধার্থে সৃষ্টি করা ; গোটা সমাজ তথা বিশ্বটাই এর উপরেভর করে চলছে , ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে উন্নতির দিকে কিছু মানুষের অবনতি ঘটিয়ে | শোষিতকে আরও শুষে শাসকের জীবনধারণ , লক্ষ্যপূরণ করা এটাই তো খাদ্যশৃঙ্খলের নিয়ম ; যাযুগ যুগ ধরে চলে আসছে | মেনে নিলে ভালো , বেঁকে বসলেই বিপদ …. তবু এরই মধ্যে একটু রদবদল করে ছক ভেঙ্গে এগিয়ে চলার মধ্যে প্রাণ খুলে বাঁচার যে একটা আনন্দ , উদ্দীপনাআছে তা অবর্ণনীয় | সবাই একজোট হয়ে এভাবে প্রাণ খুলে বাঁচতে পারলে মানুষে মানুষে হিংসার পরিমান কিছু হলেও হয়তো কম হত | আমরা কথায় কথায় আমাদের ঐতিহ্য ,সংস্কারের বুলি আওড়াই ; এদিকে সেই সংস্কারের আড়ালেই যাবতীয় কু-কর্ম সম্পন্ন করি | তখন অবশ্য কোনো আদর্শ – টাদর্শকে তোয়াক্কা করি না , সবসময় যে মরাল ভ্যালুর কথা বলিসেসব তখন দরজা দিয়ে বেরিয়ে পড়ে | আর ঠিক তার পরক্ষণেই যদি আপনার পাশের বাড়ির লোকটা বা পাড়ার দাদাটা আপনাকে মরাল ভ্যালু নিয়ে জ্ঞান দেওয়া শুরু করে তাহলেবুঝবেন সেটা ভাওতাবাজি আর কিছুই নয় ; কারণ – তারা নিজেরাই নিজেদের কাছে পরিষ্কার নয় আর সবটাই একটা উজবুক সিস্টেমে বেড়ে ওঠার অংশ , যেখানে শুধুই চাপিয়ে দেওয়াররাজনীতি চলে | জনসমক্ষে অপপ্রচারের দ্বারা সাধারণ মানুষকে বিচলিত করে ও দুর্বলের ঘাড়ে পা রেখে পুঁজিবাদী শক্তি প্রসার লাভ করে | দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে প্রায় ৬৯ বছরপেরিয়ে গেছে , তবু সেটা শুধুই আক্ষরিক অর্থে | স্বাধীন দেশে অফিসের কেরানি থেকে শুরু করে ম্যানেজার পর্যন্ত সবাই corrupted হয়ে গেছে | এই পরাধীন অরাজকতাপূর্ণ অব্যবস্থারমধ্যে বেঁচে থাকার চেয়ে পরাধীন দেশে বেঁচে থাকা অনেক ভালো ছিল , কারণ – তখন শ্রেণীশত্রু ছিল না | এই ফ্যাসিবাদ , শাসকের চরম দাপাদাপির বিরুদ্ধে এক হতেই হবে এবারসকলকে ; এটাই চরম মুহূর্ত এক হওয়ার , জোট বাঁধার | |
Facebook Comments Box