প্রতিদিন

সমস্যাহীন জীবনের ভাবনা, নিছকই এক অলীক কল্পনা। আপাতদৃষ্টিতে গালভারী এমন  কথাগুলো তখনই চোখের সামনে পরিষ্কার হয়ে আসে, যখন সেগুলো কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ না থেকে আমাদের চলার পথের পাথেয় হয়ে ওঠে, যখন চারদেয়ালের চিরপরিচিত গন্ডি ছেড়ে হঠাৎ বেরিয়ে পড়া বাইরের জগতের সঙ্গে একটু একটু করে জড়িয়ে যেতেই হয়। ঠিক যেন একটা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত মানুষ। পায়ে পায়ে আড়ষ্টতা কাটিয়ে সে যতই এগিয়ে যায়, চারপাশটাকে চিনতে চিনতে ততই তার মনের গোটানো সুতোগুলো ধীরে ধীরে খুলতে থাকে। কারোর সাথে মিশতে গেলে নিজের দুর্বলতা, খামতিগুলো তাদের ইচ্ছেমতন আত্মপ্রকাশ করতে চায়। মনে মনে খানিক রাগ হয় ঠিকই, তবে পরিস্থিতির টানাপোড়েনে এতে যেমন একটু নিজেকে নিয়ে ভাববার সুযোগ হয়, তেমনি সুস্থভাবে বেঁচে থাকার রসদটুকু পাওয়া যায়।

মাঝে মাঝে আয়নায় দেখলেই আশ্চর্য লাগে, এই কি আমি? আদৌ এত পরিণত ছিলাম? যে মন একসময় সামান্য খেলনা ভাঙার কষ্ট সইতে পারেনি কোনোদিন, সমবয়সিদের অনায়াসে গ্রহণ করেছে সাত-পাঁচ না ভেবেই, সে-ই এখন নিজেকে কতখানি একলা করে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে! সান্ত্বনা পাওয়ার জন্য তার শুধু কাছের মানুষদের সংস্পর্শের দরকার হয়, ঘরভর্তি লোকের উপস্থিতি কখনও কখনও রীতিমতো অসহ্য হয়ে ওঠে।

শৈশব থেকে দু-চোখে অনেক কিছু আঁকা হয়ে যায়, যেগুলোকে মনখারাপ কমানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেছি এতকাল, তারাই এখন আমায় দেখে হাসে। বারবার বুঝিয়ে দেয়, জীবনে হাজার রকম ভালোমন্দের ভিড়, সেখানে ছেলেবেলার একগুচ্ছ রঙিন স্বপ্নের সাথে বড়োবেলায় একাত্ম হয়ে যাওয়া মোটেই চাট্টিখানি কথা নয়।

অবশ্য এর পরেও একটা কথা আছে। প্রয়োজন থেকেই তো নতুন নতুন উপায়ের জন্ম। সেরকমই চলার পথে যত খুশি প্রতিবন্ধকতা, দুশ্চিন্তা, সমস্যাই আসুক; তাদের সাথে আপোশ করতে চাওয়ার বদলে সমাধান খুঁজে নেওয়াটাই বরং তোমার পরবর্তী সংকল্প হোক। একের পর এক ব্যর্থতাগুলোকে খামোকা মাথায় না চাপিয়ে সামনে সিঁড়ির মতো করে সাজিয়ে নাও। ধাপে ধাপে ঠিক একদিন অধরা স্বপ্নের গায়ে হাত পৌঁছে যাবে তোমার। বুঝতেই পারবে না, নিজের অজান্তেই কখন আরও দশটা অচেনা মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছ তুমি…

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *