বৃষ্টি, মেঘ, ভেজা মাটির স্নিগ্ধতা এসবের সাথে আমার কোন প্রেমাবেগ নেই। নেই কোনো সংযোগ। বৃষ্টি দেখলে আমার দেহে ঘৃণা জন্মায়। আকাশ ভেঙ্গে যখন কাঁদে তখন আমার রাগ হয়। অনেক রাগ। মনে হয়, এই বৃষ্টি কেন প্রলয় নিয়ে আসে না? কেন এই বৈদ্যুতিক শিখা জ্বালিয়ে খারখার করে দেয় না? এই পৃথিবীতে মৃত মানুষেরও রক্ষে নেই। তবে এই পৃথিবী কেন জীবিত!
এমনই ছিল সেদিন। ঠিক এমনি বৃষ্টি হচ্ছিলো। শীতল বাতাস, ভেজা মাটির স্নিগ্ধ গন্ধ। টুপটাপ বৃষ্টির শব্দ। বিকেল প্রায় প্রায় গড়িয়ে যাচ্ছে। আমি কোচিং পড়ে বাসায় ফিরবো। অসময়ে বৃষ্টি হতে পারে, এটা ভাবি নি। তাই সঙ্গে ছাতা ছিল না। কোচিং শেষে, বাড়ি ফিরতি পথে বৃষ্টির আগমন। এই বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরলে মা বকবে। তাই একটা টিনের ছাদের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম শুধু। এইটুকুই আমার অপরাধ। বৃষ্টির কারণে দোকানগুলোতেও তালা ঝুলানো ছিল। মানুষের আনাগোনা ছিল না, বললে ভুল হবে। হ্যাঁ, তবে মানুষগুলো ছিল অন্ধ, তাদের কানে মনে হয় কোন শ্রবণশক্তি ছিল না। পেছন থেকে একটা হাত এসে আমার দেহের কোথাও হাত দিয়ে আমার আত্মাকে বিব্রত করে দিলো। আমি পেছন ঘুরে তাকানোর সময়টুকু পাই নি, দুজন আমাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেলো। আমার ব্যাগটা শব্দ করেই পড়ে গেছিলো কাঁধ থেকে। কেউ শোনে নি। আমি ছটফট করছিলাম। মাটিতে জোরে জোরে পা মারছিলাম। কেউ তাকায় নি।
বৃষ্টির পড়ছে। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ যে কি ভয়ঙ্কর! আমি চাই না কেউ কোনোদিন তা অনুভব করুক। আমার দেহের ক্ষত দেখেছে অনেকজন। পাশে দাঁড়ায় নি। সাহায্যের নামে ছুঁয়ে দেখেছে, কিন্তু কেউ চিৎকার শোনে নি। পোশাকের কমতি ছিল না সেদিন, আমার দেহে। তবুও শুনেছি মেয়েরাই নাকি এসবের দিকে পুরুষদের ঠেলে দেয়। ভদ্র সমাজ একথা বলে মাথা উঁচু করে। আমাদের বলে কলঙ্কিত। অথচ বেপরোয়া হয়ে ঘুরে কলঙ্ক যারা করে ফিরে। আমার দেহে যেন কোন মানুষের বাস ছিল না। তারা হয়তো তাই ভেবে ঘন্টা কয়েক ব্যবহার করে গেছে। আমার জ্ঞানহীন দেহ আর কতক্ষন সে শকুনের আঁচড় সহ্য করেছিল, আমার জানা নেই। আমার আত্মাটা সেইদিনই হাহাকারে মৃত ঘোষণা করে দেয়। যখন আমার জ্ঞান ফিরে, আমি হাসপাতালের বিছানায় আধমরা হয়ে পরে ছিলাম।শরীরে নিচের অংশটা সম্পূর্ণ অবশ হয়ে ছিল। দেহ ভেঙ্গে যেন ঝর বয়ে যাচ্ছিলো। কতশত ফ্ল্যাশলাইট আর প্রশ্নের তির্যক ধনুক আমাকে বারংবার আঘাত করে যাচ্ছিলো।একবারও কেউ আমার আত্মার কথা জিজ্ঞেস করে নি। জিজ্ঞেস করে নি, “কেমন আছো?”। সবার প্রশ্ন “কে করেছে, কিভাবে করেছে, কতজন করেছে, কোথায় করেছে, কেন করেছে ” আমার তখন বলতে ইচ্ছে করছিল, ” যখন আমি চিৎকার করছিলাম তখন তোমরা কোথায় ছিলে? “