মেয়েটি কিছুই করেনি। শুধু বই লিখেছিল। লিখেছিল কিছু সত্যি কথা। স্বাধীনতার এত বছর পরেও সত্যি কথা লিখলে যে সমাজ, রাষ্ট্র কেউ ছেড়ে দেয়না তারই উদাহরণ তসলিমা নাসরিন। তসলিমা নাসরিন একজন অগ্নিশিখা। অস্বীকার করার কিছু নেই, এদেশে মেয়েদের কোথাও কোনো নিরাপত্তা নেই। খুব খারাপ একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই বাংলার জন্যই তসলিমা দি’র মত একজন লেখক ভীষণভাবে দরকার। আমাদের দুর্ভাগ্য এমন একজন মানুষকে কাছে পেয়েও ধরে রাখতে পারিনি।
তসলিমা নাসরিন একটা লড়াইয়ের নাম। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নারীবাদী লেখক। এমন কিন্তু নয় তিনি সমাজে নারীদের বেশি অধিকার চান। প্রত্যেক মানুষের অধিকারটা সমান সমান রাখার জন্যই আজও লড়ে যাচ্ছেন। হ্যাঁ, আজও লিখছেন। তাঁর লড়াইটা মেয়েদের অধিকারের জন্য। একটা মেয়ে যেন দাসী না হয় কারোর। একটা সংসার যেন সমানাধিকারের সংসার হয়। মেয়েরা যেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র না হয়। একটা মেয়ের যেন অধিকার থাকে ‘না’ বলার। আর এই অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়েছেন বলেই তাঁকে কবর দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। অনেকেই বলে থাকেন তসলিম নাসরিন ইসলাম ধর্ম বিদ্বেষী। আসলে কিন্তু তা নয়। তিনি বিশ্বাস করেন না কোনো ধর্মেই। তবে ধর্মে যারা বিশ্বাসী তাদের প্রতি কোনো রাগ নেই তসলিমার। বরং তিনি মনে করেন প্রত্যেক মানুষের অধিকার রয়েছে ধর্মের প্রতি। ধর্ম সে মানবে কিনা এটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। ‘লজ্জা’ লেখার জন্য দু’মাস তাকে লুকিয়ে থাকতে হয়। মৌলবাদীরা তসলিমার মাথার দাম রাখে। শেষে দেশ ছাড়তেই বাধ্য করে সরকার। ‘লজ্জা’ বইটিতে লেখা ছিল কিছু সত্যি কথা। লেখা ছিল বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর মুসলিমদের অত্যাচারের কথা। হিন্দুদের মন্দির ভেঙে দেওয়ার কথা। হিন্দুদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করার কথা।
পশ্চিমবঙ্গেও তাঁর জায়গা হয়নি। ‘দ্বিখণ্ডিত’ লেখার জন্য ২০০৭ সালে সি.পি.এম. সরকার তাকে রাজ্য থেকেও নির্বাসিত করেন। সরকার বদলেছে তবে তসলিমাকে আজও ফেরানো হয়নি। মেয়েটি সব সত্যি লিখেছিল। বানিয়ে বানিয়ে একটাও মিথ্যে লেখেনি। এটাই তসলিমার সবচেয়ে বড় অপরাধ। অনেক বন্ধুরাও এজন্য হাত ছেড়েছে তাঁর। দেশে তাঁর বিপদ তবুও শেখ হাসিনাকে বারবার চিঠি লিখে অনুরোধ জানিয়েছেন দেশে ফিরতে দেওয়ার জন্য। কারণ দেশে ফেরাটা তাঁর অধিকার। এই অধিকারের জন্য লড়াই শেখাতে দুই বাংলাতে তসলিমাকে দরকার। কোথায় মানবাধিকার? কোথায় বাকস্বাধীনতা? সত্যি কথা লেখার জন্য যদি নির্বাসিত হতে হয় তবে তো এখনো স্বাধীন হতে পারিনি আমরা। নতুন প্রজন্মের কাছে একটাই বার্তা, লড়াই করো তসলিমার জন্য। ফিরিয়ে আনো তসলিমাকে।