বর্ণ বৈষম্যের আঁচে নীরব থেকেছে প্রতিবাদী কন্ঠ!

সম্প্রতি মার্কিন মুলুকে বর্ণ বৈষম্যের জেরে শুরু হয়েছে ‘ব্ল‍্যাক লাইভস ম‍্যাটার’ আন্দোলন।  এর পিছনের কারণ, এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব‍্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু। কৃষ্ণাঙ্গ ব‍্যক্তিটির অপরাধ ছিল জাল নোট ব‍্যবহার করা।

মাটিতে ফেলে গলার ওপর হাঁটু রেখে খুন করা হয়েছে জর্জ ফ্লয়েড নামক কৃষ্ণাঙ্গ ব‍্যক্তিকে। আর এই জঘন‍্যতম ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে বিশ্ববাসী।  সোশ‍্যাল মিডিয়ায় উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে অসন্তোষের আঁচ।

আমেরিকায় বর্ণ বৈষম‍্য চিরকালীন সমস‍্যা। নতুন করে আর কিছুই বলার নেই। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এরকম বর্ণবিদ্বেষী ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।  এই ঘটনা সত‍্যিই নিন্দনীয়।

আমরা আজ প্রায় সবাই ‘ব্ল‍্যাক লাইভস ম‍্যাটার’ হ‍্যাশট‍্যাগ দিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছি। কেউ বা ফেসবুকে, কেউ বা টুইটারে কেউবা আরো অন‍্যান‍্য সোশ‍্যাল মিডিয়ায়। আমারা সকলে বর্ণ বৈষ‍ম‍্যের বিরুদ্ধে আমেরিকা সরকারের ওপর ক্ষোভ উগরে দিতে একবারের জন‍্যও পিছপা হয়নি। অথচ আমাদের নিজেদের মহান দেশ ভারতবর্ষের দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখলে সমস্তটাই যেন ফিকে পড়ে যায়।

আজ ভারত স্বাধীন হয়েছে ৭৩ বছর।  কিন্তু আমরা কি সত‍্যিই জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মিশে যেতে পেরেছি এই ভূ ভারতে?

প্রশ্নটা করলে উত্তরটা ঋণাত্মক আসতে বাধ‍্য। যে দেশে জাতির জনকের জন্মজয়ন্তী ঘটা করে পালন করা হয়। অথচ ছোঁয়াছুঁয়িতে জাতিভেদের শর্তাবলী থাকে। সে দেশে আর যাইহোক অন‍্য দেশের বর্ণবিদ্বেষের প্রতিবাদে গলা ফাটানোটা সাজেনা!

আমাদের দেশে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ‍্য, শূদ্রের নিরিখে সমাজ ভাগ করা হয়। দলিতদের শোষণ করা হয়। বর্ণভেদে পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। প্রসঙ্গত আর একটা কথা না বললেই নয়। ফেসবুকে কিছুদিন আগেই একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছিল। যেখানে স্পষ্ট লেখা ছিল, “Brahmin is not a Caste, it’s a Brand”। এরকম পোস্ট শেয়ার করে আধিপত্য ও ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিল অনেকেই। অবশ্যই তারা উচ্চ শিক্ষিত ব্রাহ্মণ !

সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত কয়েকজন ব্রাহ্মণ কোয়ারেন্টিনে থাকাকালীন সিডিউল কাস্টের হাতে বানানো খাবার খেতে অস্বীকার করেছিল। তাহলে একবার ভেবে দেখুনতো, শিক্ষার সঙ্গে বৈষম্যের কোনো সম্পর্ক নেই। সমস‍্যাটা হলো মানসিকতায়।

দলিতদের ওপর অত‍্যাচার এবং শোষণের মাত্রা ভারতবর্ষে ঠিক কতটা বেড়েছে তা গত কয়েক বছরের দিকে ফিরে তাকালেই স্পষ্ট ভেসে ওঠে চোখের সামনে। অস্পৃশ‍্যতার কথা নাহয় বাদই দিলাম! তখন কটা প্রতিবাদ দেখেছি আমরা! হয়তো হাতেগোনা কয়েকটা! তখন আমরা ভেজা বারুদ হয়ে নিশ্চুপ! আগুনটা শুধু আমেরিকার বেলাই জ্বলে ওঠে!

আজ যখন লকডাউনের জাঁতাকলে পড়ে ভারতের হাজার হাজার শ্রমিক মারা যায়। মা আর বাচ্চার বন্ধন চিরকালের জন‍্য ছিন্ন হয়ে যায়। আমাদের প্রতিবাদী কন্ঠ তখন শান্তিতে নীরব থেকে যায়। অথচ পাশ্চাত্যের বর্ণ বৈষম‍্য দেখলেই আমাদের গা জ্বলে ওঠে প্রতিবাদের আঁচে। জর্জ ফ্লয়েডের মর্মান্তিক খুনের প্রতিবাদ সত‍্যিই করা উচিত। তবে নিজের দেশের ভেতরটা সামলানোর দায়িত্ব দেশের নাগরিকদের ওপরই বর্তায়। আর সর্বোপরি “Charity begins at Home” এই কথাটা মাথায় রেখে সোশ‍্যাল মিডিয়ায় না গা ভাসিয়ে ভারতের কোণায় কোণায় যে বৈষম্য চলছে তা দূর করাই আমাদের প্রথম কর্তব্য হওয়া উচিত নয় কি!

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *