(ক)
বিমলবাবু রান্না ঘ্যাঁচাকলে পড়েছেন। রোজ রোজ নিজের হাতে রান্না করতে আর ভালো লাগে না বিমলবাবুর। ঝি, চাকর যে রাখবেন, সে উপায়ও নেই। আজকাল যা ভড়ং ওদের বাব্বা, তার উপর খুন টুন করে দিলে!
এমনিতে বিমল তরফদার নিপাট ভালোমানুষ। কারোর সাতে পাঁচে থাকেন না। পাড়ায় মাঝবয়সীদের একটা আড্ডাখানা আছে, সেখানে যান মাঝে মাঝে। সকালে অফিস, বিকালে আড্ডা বা বই পড়া এই নিয়ে ভালোই চলছিল।
বাদ সাধল, রান্না। অনলাইনে খাবার তিনি ছুঁয়েও দেখেন না। ভাবলেই কেমন গা গুলিয়ে ওঠে বাবা। তার উপর কয়েক মাস আগে ভাগাড়ের যা কেলেঙ্কারি উঠেছিল। তারপর থেকে তিনি মাংস খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছেন। তার স্ত্রী অনুপমা তাকে কত্ত রকমের রান্না করে খাওয়াত আগে। এখন সব অতীত।
রাতের রান্না টা সেরে বিমলবাবু শোবার ঘরে ঢুকলেন। আজ তিনি প্রচুর ক্লান্ত। অফিসের খাটুনি তার উপর বাড়িতে রান্না। আর সয় না। তার স্ত্রী অনুপমা আগে কী সুন্দর কত পদ রেঁধে খাওয়াত তাকে। আর এখন… ভেবে বিমলবাবুর মন খারাপ হয়ে যাওয়া।
“ধুঃত্তেরি” বলে তিনি শুয়ে পড়লেন।
(খ)
ঘুম ভাঙল পোলাও এর গন্ধে, আহা সত্যি তো কতদিন তিনি পোলাও খাননি। চোখ বন্ধ করেই নাক কুঁচকোলেন। কিন্তু তার বাড়িতে পোলাও রান্না করবে কে?! অনুপমা তো… ওরে বাবা তবে কী ভূত নাকি।
বিমল তরফদার ভালোমানুষ এবং ভীতু। যাকে বলে প্রচন্ড ভীতু। ভূতের ভয়ে তিনি রাতে বাথরুম অবধি যেতে পারেন না।
এহেন সময়ে মাঝরাতে পুরো বাড়িটা পোলাও এর গন্ধে ম ম করছে। কেস টা কী। বিমলবাবু চোখ বন্ধ করেই পড়ে রইলেন। নাক কিন্তু প্রচন্ড তীক্ষ্ণ। নাক দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে গন্ধ টা শুঁকতে থাকলেন।
পোলাও… তার সাথে গোলমরিচ দেওয়া শুক্তো মনে হচ্ছে। আহা বিমলবাবুর নোলায় জল চলে এল। আরেকটু ভালো করে গন্ধ নেন তিনি।
” … মাটন..উহুঁ…চিকেন… কিন্তু এ তো শুধু মাংস নয়… চিলি চিকেন মনে হচ্ছে ” মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগলেন তিনি।
সেবারে তিন্নির বিয়েতে প্রথমবার চিলি চিকেন খেয়েছিলেন। আহা কী তার স্বাদ। লোভে পড়ে বেশিই খেয়ে ফেলেছিলেন। পরদিন আর পায়খানা থেকে নড়তে পারেননি।
বিমলবাবুর আবার চিন্তা মনে আসে। এ তবে কী ভূতের কান্ড। ধুঃত্তেরি ভূত হোক আর যাই হোক, ওদেরকে না হয় বলব একটু খাওয়াতে। “কতদিন খাইনি ভালো কিছু।” এই মনে করে বিমলবাবু খাট থেকে নামতে যেতেই কে যেন তাকে ছুঁল।
“ও বাবা গো, গেলুম” বলে তিনি ধরাম্ করে আছাড় খেলেন মেঝেতে।
(গ)
গলার আওয়াজটা যেন দূর থেকে শুনতে পাচ্ছেন বিমলবাবু,
” কই গো, আরে কী হল”
একটু ধাতস্থ হয়ে চোখ খুললেন তিনি। এখনও যেন নাকে পোলাও এর গন্ধটা লেগে আছে।
তার স্ত্রী অনুপমা বলল, ” কী গো ঘুমের মধ্যে অমন করছিলে কেন? খাবারদাবারের স্বপ্ন দেখছিলে নাকি? খালি পোলাও পোলাও করছিলে।”
বিমলবাবু দপ্ করে রেগে গিয়ে বলেন,
” হ্যাঁ দেখবই তো খাবারদাবারের স্বপ্ন। আগে কত কিছু রান্না করে খাওয়াতে। এখন সারাদিন ফোনে খুটুর খুটূর কর। রাতের রান্নাটা অবধি আমাকে করতে হয়। ”
অনুপমা হেসে বলে,
” আর বোলো না, পাবজি সেশন শুরু হবে তাই বিজি একটু। তুমি প্লিজ সকালের রান্নাটাও করে নেবে। ওই পাড়ার সুস্মিতা বৌদি আর আমি তো ক্যান্ডি ক্রাশ চ্যাম্পিয়ন। জান কত খাটতে হয়?” বলে তিনি বীরদর্পে দাঁড়িয়ে থাকেন।
“আর আমার রান্না?” খেঁকিয়ে ওঠেন বিমলবাবু।
” আরে জোম্যাটো বা সুইগি তে অর্ডার করে দাও। উফ্ তুমি না সেই আদ্যিকালেই রয়ে গেলে।” বলতে বলতে অনুপমা ফোন অন করে।
বেচারা বিমলবাবু, বয়সের মাঝ বরাবর এসে শেষ অবধি মোবাইল ফোন যে তার এত বড় অসুবিধায় ফেলবে তিনি বুঝতে পারেননি। কী করতে যে তিনি স্মার্টফোনটা কিনে দিয়েছিলেন অনুপমাকে। নিজের কপালকে আরো একবার দুষে বিমলবাবু চান করতে গেলেন, রান্নাটা তো তাকেই করতে হবে।