অনেকে বলে জানুয়ারি নাকি স্বপ্ন দেখায়! তাই বোধহয় বছরের দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারী সেই স্বপ্নে ভালোবাসার রং মিশিয়ে দেয়। ফেব্রুয়ারী বলতেই ভ্যালেন্টাইন্স ডের কথা বর্তমান প্রজন্মের মনে পরে যায়। নিউ জেনারেশন ভ্যালেন্টাইন্স উইক নিয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল।
এই ভ্যালেন্টাইন্স ডের সঙ্গে ইতিহাস জড়িয়ে আছে। প্রাচীন রোমান এবং খ্রীষ্টান ঐতিহ্য অনুযায়ী বহুকাল ধরেই সমগ্র ফেব্রুয়ারী মাস ধরে ভালোবাসা এবং রোমান্স উদযাপন করার নিদর্শন রয়েছে। এই প্রথার সূচনা নিয়ে রোমান সাম্রাজ্যের নানা গল্পগাথা শোনা যায়। উল্লেখযোগ্য হল এক সন্তের রহস্যজনক কাহিনী। সেই সন্তের নাম সেন্ট ভ্যালেন্টাইন, যার নাম অনুসারে এই দিন এবং সপ্তাহটির নামকরণ করা হয়েছে।
তৃতীয় শতাব্দীতে রোমের সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লাদিয়াস। তিনি লক্ষ্য করেন যেসব পুরুষরা সিঙ্গেল অর্থাৎ অবিবাহিত কিংবা কোনো প্রণয়ঘটিত সম্পর্কে আবদ্ধ নয় তারা সৈনিক হিসেবে শ্রেষ্ঠতর যারা বিবাহিত অথবা সম্পর্কে জড়িত রয়েছে তাদের থেকে। সম্রাট তখন যুবকদের বিবাহ আইনত নিষিদ্ধ করেন। ভ্যালেন্টাইন এই সিদ্ধান্ত শোনার পরে সম্রাটের সিদ্ধান্ত যে ভুল তা উপলব্ধি করেন এবং ইচ্ছুক যুবক যুবতীদের গোপনে বিবাহ দিতে থাকেন। এই ঘটনা একটা সময়ের পরে সম্রাটের নজরে আসে এবং শাস্তিস্বরূপ তিনি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন। যেদিন তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় দিনটি ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারী। ভালবাসার মানুষদের অনুভূতিকে স্বীকৃতি দিতে তিনি যে লড়াই করেছিলেন এবং শহীদ হন ভালবাসার জন্য সেই থেকেই ওই তারিখটিকে ভালবাসার দিন হিসাবে গণ্য করা হয়। আবার অন্য একটি কাহিনিও শোনা যায়। কথিত আছে যে ভ্যালেন্টাইন্ কারাগারে থাকার সময় জেলারের মেয়েকে মৃত্যুর আগে একটি চিঠি লেখেন। সেই মেয়েটির সাথে তাঁর বন্ধুতা গড়ে উঠেছিল। সেই চিঠির শেষে তিনি লেখেন, “From Your Valentine”। হয়তো এরপর থেকেই প্রেমিক-প্রেমিকারা নিজেদের ভ্যালেন্টাইন্ বলে অভিহিত করতে শুরু করে, কার্ডে কিংবা চিঠিতে নিজেদের ইওর ভ্যালেন্টাইন্ লিখতে শুরু করে বলে মনে করা হয়। খ্রীষ্টানরা ১৪ই ফেব্রুয়ারীকে হলিডে হিসাবে পালন করতে শুরু করে।
একবিংশ শতকে ভারতেও ভ্যালেন্টাইন্স ডে নিয়ে জেনারেশন ওয়াই এর মধ্যে উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়। সপ্তাহব্যাপী দিনগুলোকে রোস ডে, চকোলেট ডে, প্রপোজ ডে, প্রমিস ডে, হাগ ডে, কিস ডে প্রভৃতি নামকরণ করা হয়েছে। প্রেমিক প্রেমিকরা অনেকেই ভ্যালেন্টাইন্স ডের ইতিহাস না জানলেও উপহার দেওয়া-নেওয়া এবং ভালোবাসা উদযাপন করতে আগ্রহী থাকে।
ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ রাখলে দেখা যায় ফেব্রুয়ারী মানেই শীতের অবসান এবং বসন্তের সূচনা। ঋতুরাজ বসন্তের আগমণবার্তা মানেই প্রেম প্রেম মেজাজ! প্রকৃতিও নানা রূপে ফুলে-ফলে রঙে গন্ধে সেজে ওঠে। এইবছর তো বাগদেবী মা সরস্বতী আসছেন ফেব্রুয়ারীতেই। যদিও মায়ের পুজো হয় বাঙালি মতে, বাংলা মাস অনুযায়ী মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে। সেই দিনটিকে “বসন্তপঞ্চমী” বলা হয়। ইংরাজি মাসে দেখতে হলে জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারীতে পুজো হয়। সরস্বতী পুজো বাঙালি ছেলেমেয়েদের কাছে আবেগের এক নাম। বিদ্যার দেবীর আরাধনায় মেয়েদের বাসন্তী রঙের শাড়ি এবং ছেলেদের পাঞ্জাবী পরে পুষ্পাঞ্জলি দেবার প্রচলন আছে। অনেকেই সরস্বতী পুজোকে “বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে” বলে থাকে।
তবে ভালোবাসা এমন একটি অনুভূতি যা সর্বক্ষণ আমাদের ভিতরে বাস করে। ভালবাসার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন বা তারিখের প্রয়োজন হয়না। ভালোবাসা যে কোনো দিনেই যে কোনো সময়েই প্রকাশ করা যায়। লোকদেখানো আড়ম্বর এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়, মনের ইচ্ছাটাই এখানে প্রয়োজনীয়। বাহ্যিক জাঁকজমক কখনো ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হতে পারেনা, ভালবাসা খুব পবিত্র একটি অনুভূতি তাই অপরদিকে থাকা মানুষটির প্রতি সারা বছরই যত্নশীল হওয়া উচিত। ভালবাসার মানুষ সামনে থাকলে যে কোনো মুহূর্তই অমূল্য হয়ে ওঠে। বিশেষ মানুষটির কাছে মাঝেমধ্যে আবেগের প্রদর্শন করাও প্রয়োজনীয়। ভালোবাসতে জানলে কাঠফাটা গ্রীষ্মেও জীবনে বসন্তের বাতাস বইতে পারে।