প্রিয় মা দুগ্গা,
প্রথমেই বলা ভালো চিঠি লিখতে ভয় করছে। কে জানে বাবা মহাদেব যদি চিঠি দেখে রেগেমেগে বলেই ওঠেন, ” উফ্ এই তো এলে বাপেরবাড়ী থেকে এর মধ্যেই চিঠি!!” তবে ইয়ে ওনাকে রাগটা কম করতে বলো তো মা, এমনিতে সারা বছর তো তোমাকে পাঠাবে না তাও পুজোর যে কটা দিন পাঠাবে সেই সঙের মত মাথার উপর চড়ে বসে থাকেন। ভাবখানা এমন যেন বউকে চোখে হারায়, তা মা একটু টিপস্ দাও দেখি আমার বর টাকে ওরকম কী করে বানাই?
যাকগে যাক্ সে না হয় মানছি তোমাকে তোমার স্বামী খুবই ভালোবাসে তা বলে বাপেরবাড়ী এত কম এলে চলবে না মা মোটেও। পুজোর মোটামুটি একমাস আগে থেকেই আমি মহা আনন্দে নাচতে থাকি, তা বলে ভেবো না নতুন জামা কেনার লোভ, আসলে তুমি যে আসছ এটাই মজার। জামা এবছর আমার মোটে দুটো হয়েছে, একটা চুড়িদার, একটা জিন্স টপ্ আরেকটা শাড়ী যদিও আছে( মায়ের থেকে বলপূর্বক কেড়ে নিয়ে নিজের সংগ্রহশালায় রাখা)। তাও মা আমি খুশি জানো তো, খুব খুশি। কলকাতাতে মোটামুটি একমাস আগে থেকেই পুজো পুজো মেজাজ শুরু হয়ে যায়, সেই যে কোনো এক লেখক বলেছিল না, ” মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে” ( এইরে!কেত মেরে লাইনটাতো বললাম লেখকের নাম ভুলে গেছি)। তো কলকাতাতে এত রকমের পোস্টার দেখা যায় যে মনে হয় এটা পুজোর ছবি নাকি মডেলদের বিজ্ঞাপন বোঝা দায়।
তা বেশ বছর কয়েক হল থিম নামক নতুন এক ফিকির হয়েছে, কলকাতার হোমরা চোমড়া পুজোর কর্মকর্তাদের থিমের লড়াই দেখার মত হয়, এসব দেখে আর ভেবে মনে হয় মা তুমি কোথায় আছ, থিমে নাকি অন্তরে? তা আমি বাপু খুব আলসে অতশত থিম অনুযায়ী ঠাকুর দেখা কোনোকালেই পোষাত না আমার, আমি ওই গুড়গুড় করে দুটো ঠাকুর দেখে রাত সাড়ে দশটার মধ্যে ঘর- নইলে মায়ের “ফ্লাইং চপ্পল” আর আমার পিঠ তো আছেই। তা কয়েক বছর হল লক্ষ্য করছি পুজোর সময় ফেসবুকে সব সুন্দরী মামণী( বা মামণ) দের ছবিতে ভরে যায়, জানো মা এরা এত সুন্দরী রমণী সব কী বলব তার উপর কুমোরটুলিতে গিয়ে নানান পোজে মেকআপে এদের ফোটো তোলা তো বিশ্ববন্দিত। বাবা মহাদেবকে সামলে থাকতে বলো, নেশার ঘোরে চিনতে না ভুল করে তোমাকে হেহেহে বলা তো যায় না বয়স তো সবার বাড়ছে তার উপর চশমাও তো পরেন না উনি।
ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে কতরকমের যে সুন্দরী দেখতে পাওয়া যায় কী বলি, মনে হয় এরা সব থাকে কই, এপ্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়ে গেল, ” পুজোতে রাস্তায় যেদিকেই দেখি সেদিকেই সব কপোত কপোতী তা ফেসবুকে নিজেদের সিঙ্গেল দাবি করা পাবলিক গুলো গেল কই?” তা ভালো ভালো প্রেম করা ভালো, তবে আমার কত্তাটি অতিশয় বালকসুলভ, কথায় কথায় এমন ভুল বোঝে। তবে মা শোনো না, আমি না হেব্বি ভাগ্যবান মানে প্রথম ঢিল ছোঁড়াতেই এত্ত ভালো ফল পেয়ে গেছি যে দ্বিতীয়বার আর ভাবতে হয়নি, আমার কত্তাটিও আমাকে চোখে হারায় – এই নিয়ে চার নম্বর বছর ঠাকুর দেখতে গেলাম তা বেশ লাগে।
তবে রাগ মোটেও কমেনি আমার কিন্তু, এত কমদিন আসলে হবে না কিন্তু এই বলে রাখলুম। তোমার বাপেরবাড়ীর লোকজন যে কত উৎসাহী সে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ধাবমান জনগণ কে দেখলেই বোঝা যায়, এমনকী দশমীর পরেও সে ঘোর কাটেনি। কষ্ট তো আমার হচ্ছে, এতদিন আনন্দে ছিলাম তোমার আগমন নিয়ে এখন তোমার বিদায়ে কষ্ট হচ্ছে মা, খুবই কষ্ট। বেশ আরও কয়েকদিন থাকতে তুমি। জান মা এই উৎসবের জন্য গোটা কলকাতা যেন সারাবছর অপেক্ষা করে থাকে , যেদিন জাতি ধর্ম গরীব ধনী নির্বিশেষে সকল মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন একসাথে একটাই কথা উচ্চারণ করবে, ” বলো দুগ্গা মাইকী” ।তাই এই দশমীতেও একটাই সুর মনে বাজে, তা হল মানবতার সুর ঐক্যের সুর।
ইতি- তোমার আগমনের অপেক্ষায় থাকা এক ভক্ত,