রঙের গুরুত্ব মানুষের জীবনে কতটা? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে যে বিশাল জগতের মাঝে পড়লাম তার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রঙীন। মানুষের চোখে যেমন সাত রঙ ধরা পড়ে তেমন তো তার জীবনেও। রঙের প্রভাবতো জীবনের সর্বত্র। তা যদি না হবে তবে তীক্ষ্ণ, তীব্র রঙ, যা আমাদের চোখ ঝলসে দেয় তা দেখে মেজাজ কেন অশান্ত হয়ে ওঠে? কেনই বা কোমল, মৃদু রঙের আভাসে মনে শান্তি নেমে আসে?
মানুষের যদি কোনো রঙের বোধই না থাকত? যদি মানুষের জীবনটা শুধু সাদায় আর কালোয় মোড়া থাকত? তাহলে বোধহয় আমাদের জীবনে এত বৈচিত্র্য আসতো না। বর্ণহীন পৃথিবীতে জুটতো না সবুজ ঘাসের গালিচা, নীল আকাশে সাদা পেঁজা-তুলোর মেঘ। থাকতো না নানা বর্ণের ফুল-লতা-পাতা, অর্কিডের শোভা। খেলত না রঙ্গণ, রডোডেনড্রনগুচ্ছ। শুধু চারিদিকে ছড়িয়ে থাকত সাদা আর কালো, সঙ্গে কিছু মনখারাপের ধূসর।
আমাদের এই মন ভালো করে দেওয়া নানা রঙের সমাহার ঘটেছে বলেই পৃথিবীকে এত ভালো লাগে আমাদের, মনে জাগে ভালোবাসার আশ্চর্য অনুভূতি। জন্ম হয় শিল্প-সাহিত্য-দর্শনের। শিল্পের এক শাখা হিসাবে গড়ে ওঠে চিত্রকলা। মানুষের প্রথম ভাষা, চিত্র-ভাষার প্রধান উপকরণই তো রঙ। পাথরের দেওয়ালে লালমাটি বা পোড়া কাঠের দাগ টেনে আঁকা প্রথম যুগের ছবি অথবা নিজের হাতকে দেওয়ালে ধরে রেখে চারিদিক থেকে রঙ ছিটিয়ে সেই হাতের ছাপকে অমরত্ব দেওয়া সম্ভবই হতো না যদি রঙের অফুরন্ত বৈচিত্র্য না থাকতো মানুষের সামনে।
কিন্তু এই রঙ আসলে কি? কেমন করে এর ব্যবহার শুরু হল? যুগের সঙ্গে সঙ্গে কেমন করেই বা পাল্টে পাল্টে গেল সে? এমন একরাশ প্রশ্ন নিয়েই অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি আলতামিরার সেই প্রাচীন বাইসনটার দিকে। গোটা দেহ যার লাল। এই লাল ঠিক সিঁদুরে লাল নয়। পোড়া মাটি, ইঁটের মতো লাল। তীব্রতা আছে, আছে স্নিগ্ধতাও। বাইসনের পেশীবহুলতা, শরীরের সুঠামতা, তেজ সবই ফুটে উঠেছে ওই একটি রঙের ব্যবহারে। পাথরের দেওয়ালে আঁকা হয়েছিল কত হাজার হাজার বছর আগে। মানুষের হাতে রঙের ব্যবহারের প্রাথমিক চিহ্ন। বিচিত্র এক মানসিকতা থেকে মানুষ রেখে গেল তার অক্ষয় চিহ্ন, পাথরের বুকে। রঙেরই সাহায্যে।
[মৃণাল নন্দী]
রঙ নিয়ে তথ্যানুসন্ধানে নেমেছেন মৃণাল নন্দী । নতুন ভাবে রঙকে চেনার জন্য। ২৪ ডিসেমবর আসছে তাঁরই লেখা প্রথম বই রঙের ইতিকথা।
Content writer : Pratyush Mondal Courtesy : Mrinal & Udvas (udvas.in)