রথদ্বিতীয়া

প্রাচীনকালের মূল্যবান তথ্য থেকে জানা যায়,আষাঢ় মাসের প্রথম পূর্ণিমাতে জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার আয়োজন করা হয়, এদিন সুগন্ধির জল দিয়ে স্নান করানো হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে। ১০৮ ঘড়া জলে স্নানের পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁরা। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসাধীন থেকে এক পক্ষকাল চিকিৎসা এবং সেবার সুস্থ হয়ে ওঠেন। তারপর এক সপ্তাহের জন্য মাসির বাড়িতে বেড়াতে যান শ্রী জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা, এই শুভ যাত্রা উৎসবই রথদ্বিতীয়া বা রথযাত্রা নামে পরিচিত।

লোককথা অনুসারে, আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়। তিন বিগ্রহের জন্য তৈরি হয় তিনটি আলাদা রথ, শ্রী জগন্নাথের দেবের রথের নাম নন্দীঘোষ, বলরামের রথের নাম তালধ্বজ এবং সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন। রথের নির্মাণ শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়ার তিথি থেকে।প্রতিবছর রথযাত্রার দিনে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে সেটি হল, কয়েক সেকেন্ডের জন্য হলেও বৃষ্টি হয়।

ভারতীয় রাজ্য উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের এই উৎসব বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়। ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের পুরী শহরের অন্যতম বিখ্যাত জগন্নাথের মন্দিরের রথযাত্রা এবং মাহেশের রথযাত্রা ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম ও বাংলায় জনপ্রিয় রথযাত্রা উৎসব হিসাবে পালিত হয়। ১৩৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরের মাহেশে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

সারা বিশ্বব্যাপী এক ভয়ঙ্কর মহামারী আগমনের জন্য গত দু’বছর পর, ১২ই জুলাই ২৭শে আষাঢ় ২০২১ সালে শুধুমাত্র উড়িষ্যার পুরীতে রথযাত্রা উৎসব পালিত হচ্ছে কঠোর আইনকানুনবিধি মেনে। বাংলার জনপ্রিয় এই উৎসব উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায়, সকল পরিবারের সদস্যরা টেলিভিশনের ওপার থেকে দর্শন করছে পুরীর রথযাত্রা। ছোটদের প্রিয় রথযাত্রা উৎসবকে ঘিরে আয়োজিত মেলাও এই বছর বন্ধ রয়েছে একই কারনে। সারা দেশবাসী কোটি কোটি প্রার্থনা করে চলেছে ভগবানের কাছে, যেন আগামী বছর আনন্দ উল্লাস রথযাত্রা উৎসব পালিত হয় সারাদেশ জুড়ে এবং নতুন সকালে ফুটে ওঠা পুস্পগুলোর মতো ছোটদের মুখে হাসি লেগে থাকুক এই উৎসবের দিনটিতে। রথের মেলায় পাপড় ভাঁজা,বাদাম ভাঁজা ও নানা খেলনা সামগ্রী ইত্যাদি  বিক্রেতা বা ব্যবসায়ীদের সংসারগুলো সুখ প্রাপ্তি করবে সেই প্রতীক্ষায় দিন গুনে চলেছে।

Image Courtesy: Jeff Henig

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *