অন্যদিন গুলোর মতোই লকডাউন এর দিনগুলোতে ও আর ফারাক বুঝতে পারি না আমরা। কখনো মনে হয় এই বেশ ভালো আছি। বাড়িতে আছি, পছন্দের খাবার খাচ্ছি, ঘুমোচ্ছি।পছন্দের বই পড়ছি কিংবা পছন্দের সিনেমা দেখছি।
বলতে গেলে ঘরবন্দি হয়ে নিজের সাথে সময় কাটিয়ে বেশ ভালোই আছি আমরা? প্রশ্নটা নিজেদের করলে লকডাউন এর পরবর্তী দিনগুলো অনিশ্চয়তায় ঘেরা! চার দেওয়ালের গন্ডির বাইরে চোখ রাখলেই অনিশ্চয়তা, হতাশায় ঘিরে ধরছে আমাদের। কত শ্রেণীর মানুষ বাস করে আমাদের ভারতবর্ষে। করোনার মোকাবিলায় সমস্ত জনমানব একপেশে।
বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সংগ্রাম বিভিন্ন রকমের। একদিকে শ্রমিক শ্রেণী কাজ হারিয়ে দুবেলা খাবার জোটানোর পড়িমরি সংগ্রাম। সরকার সাহায্যের ঘোষণা করলেও অনেকে বঞ্চিত তাদের প্রাপ্য থেকে। এই লকডাউন এর সময়েও শত সংকটের মধ্যেও কিছু নেতা মন্ত্রী তাদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। মানুষের লোভ লালসা কি তাহলে মৃত্যু দোরগোড়ায় এলেও কমে না!
এই সংকটকালেও রাজনীতি করতে এক চুল ছাড়ছেন না যে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। সবকিছু বন্ধ থাকলেও রাজনীতি চালিয়ে যেতে হবে, এটাই কি রাজ নীতি! ভারতবর্ষ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হলেও এদেশে হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা লেগেই আছে। করোনার কবলে প্রথম কয়েকদিন মানুষ মানুষের জন্য থাকলেও পরক্ষণে আবার ধর্মের রঙ নিয়ে খেলেছে মানুষ। লকডাউন চলাকালীন সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলে স্পষ্ট দেখতে পাওয়াযায় সাম্প্রদায়িকতার বিষ কিভাবে এখনও ছড়ানো হচ্ছে।
ডাক্তার পেটানো এদেশে কোনো নতুন ঘটনা নয় । আমাদের উন্নয়নশীল দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবাতে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এই সংকটকালে তা আরও বেশি প্রভাব ফেলছে, তবে স্বাস্থ্যকর্মী, মেডিক্যাল বোর্ড, মিনিস্ট্রি সকলে মিলে যথেষ্ট চেষ্টা করছেন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার। তবুও লকডাউন চলাকালীন স্বাস্থ্যকর্মীদের মার খেতে দেখেছি আমরা। তবে কি এ দেশ ডাক্তারের ভূমিকা বুঝবেনা কোনোভাবেই কোনদিনই!
এই লকডাউন যেন ভবিষ্যৎ কেড়ে নিয়েছে হাজার হাজার যুবকের। পরবর্তীতে সরকার চাকরির জন্য রিক্রুটমেন্ট কতদিন বন্ধ রাখবে সেই নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতে হচ্ছে বেকারদের। বেসরকারি কোম্পানি গুলো কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত না নিলেও কাজ হারাবার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে বেকারত্ব আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়। তবে সমস্ত কিছুই মেনে নিতে হবে আমাদের। মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
ভারতবর্ষে এই মহামারি একদিন ঘুচে যাবে, করোনামুক্ত নতুন সকাল হবে। করোনামুক্ত হলেও ভারতবর্ষের ধর্ম বিদ্বেষ, গরীব ও শ্রমিক শ্রেণীর নেতামন্ত্রীদের হাতে পুতুল হওয়া, ডাক্তার পেটানোর জঘন্য মানসিকতা এগুলো কি কোনদিনই ঘুচবে না? এই প্রশ্নের উত্তর নেই! যা আছে তা হলো অপেক্ষা, অপেক্ষা নতুন সকালের।