শীতে বাঙালী।

শীতে বাঙালী জাতির কাছে রীতিমত উৎসবের মরশুম। এই সময়ে যত রাজ্যের পালা পার্বণ বিয়ে অনুষ্ঠান সবের হিড়িক পড়ে যায়। প্রথমেই পিকনিকের প্রসঙ্গ এ ব্যাপারে উত্থাপিত হবেই হবে। শীতকালে পিকনিক করতে যায়নি এমন জনগণ খুঁজে পাওয়া অতীব দুষ্কর। চিড়িয়াখানা থেকে ভিক্টোরিয়া কিংবা ফুলেশ্বর বাংলো অথবা গাদীয়ারার চড়ার ধারে বাঙালীকে অতীব উৎসাহে পিকনিক করত দেখা যাবেই। সবাই মিলে শীতের নরম রোদ গায়ে মেখে একসাথে বসে চড়ুইভাতি করা- এ যেন এক স্বর্গীয় প্রাপ্তি। এরকম দলে অবশ্য কয়েক ধরনের মানুষ দেখা যায় যেমন সবজান্তা মুরুব্বি কাকু, গম্ভীর কিন্তু সবদিকে নজর রাখা জ্যাঠা, সব আয়োজনে সবার ডাকে সাড়া দেওয়া বাবা, জিনিসপত্র বয়ে আনার দায়িত্বে থাকা দাদা, সবজির ডিপার্টমেন্টের হেড ঠাকুমা, সবার কাছে চায়ের জোগান দেওয়া মা বা মেজমা, এর মধ্যে অবশ্য খুঁদে কচিকাঁচারা কক্ ব্যাট ফুটবল খেলায় মেতে ওঠে।

খাবার নাম করতেই শীতে প্রধান লোভনীয় খাবার হিসাবে দেখা মেলে পরম সুস্বাদু জয়নগরের মোয়া। তাছাড়া অলিতে গলিতে একধরনের অস্থায়ী ভাবে গড়ে ওঠে মিষ্টির দোকান। গুড় পাটালি, চিনির পাটালি, লাড্ডু, মোয়া, সরভাজা ও আরও অনেকরকম মিষ্টির দেখা মেলে, এগুলো হল যাকে বলে ‘শীত ইস্পেশাল’ মিষ্টি। একটু গ্রামের দিকে গেলে দেখা যায় বড় বড় খেঁজুর গাছের উপরের দিকটা ডালপালা কেটে খানিকটা সাফ করে দিয়েছে ওই ধরুন যেমন আজকালকার ছেলে ছোকরাদের হেয়ার স্টাইল আর কী। ওই খেঁজুর গাছে কয়েকদিনের পর থেকে হাঁড়ি বা কলসি ঝোলানো হবে যাতে খেঁজুর রস জ্বাল দিয়ে গুড় বানানো হবে। আমাদের গ্রামে এরকম দেখতে পাই, শীতের শুরুর মুখেই একটা পরিবার আসে ওরা পাতা দিয়ে ঘর বানিয়ে মাঠে থাকে আর সকালে খেঁজুর রস দিয়ে গুড় বানায়।

অনুষ্ঠান আর শীত যেন অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত। এসময়টা বিয়ের মরশুম তুঙ্গে। তবে একটাই সমস্যা শীতকালে বেশী সাজা যায় না অবশ্য আজকের আধুনিকারা মোটেই শীতের তোয়াক্কা করে না। এই সময়টা রাসমেলার মরশুম বটে। রাস হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের গোপীদের সাথে রঙ্গলীলা। রাসমেলা তে শ্রীকৃষ্ণ ছাড়াও অন্যান্য নানান কাহিনী মূর্তির মাধ্যমে উঠে আসে যেমন বর্তমান সমাজ বা পৌরাণিক কাহিনী। এর সাথে মেলাটাও জোরকদমে ঘটে। মেলাতে পাঁচটাকা দশটাকা থেকে শুরু করে নারকেলদোলা বা ড্রাগন দোলা সবেরই দেখা পাওয়া যায়। মেলাতে জাত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের সমাগম ঘটে। কপোত কপোতী যুগলদেরও দেখা পাওয়া যায়। নানারকম পিঠে বা কাটলেটের খাদ্য সম্ভারও দেখা যায়।

শীতের সকালে কম্বলের তলা থেকে পা বার করে তারপর উঁকি মেরে দেখে আবার ঘুমিয়ে পড়া বাঙালীর কাছে শীত বড় আদরের। বাঙালীদের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো শেষের রেশটা ভ্রমণপ্রিয় বাঙালীকে শীতের দিকে আরও আকৃষ্ট করে। শীতের নরম রোদ প্রকৃতির স্নিগ্ধতা নিয়ে আসে আর তার সাথে বয়ে আনে নতুন আগমনের বার্তা।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *