তারপর আর দুজন দুজনের চোখে চোখ রেখে কোনোদিন কথা বলতে পারেনি।
কারণ হিসেবে অনুশোচনা, রাগ, নাকি অপমান বোধ কোনটা কাজ করেছিল দুজনের কাছে এর কোনও উত্তর নেই।
দুজনের মনে কথার পাহাড় জমে থাকা সত্ত্বেও নির্বাক। যেন কথা বলা বারণ।
সাত বছরের সম্পর্ক আচমকা ছক দমকা হাওয়ায় যেন তাসের ঘরের মতো নিমেষেই ভেঙে পড়েছে।
সাত বছর আগে নির্ম্যাল্য কোনও এক রেল স্টেশনে সমাপ্তির কাজল কালো চোখ থেকে চোখ সরাতে পারেনি।
খুব সহজ ভাবেই প্রেমে পড়েছিল। মানে লটাভ এট ফার্স্ট সাইট।
এরপর আস্তে আস্তে দুজনের মধ্যে কথা বিনিময়। প্রেমের গভীরতা বাড়তে বাড়তে সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছিল তারা।
সমাপ্তি খুব ভয় করত যে কোনো সম্পর্ক আবদ্ধ হতে। সে প্রায়ই বলত – “Relationship makes partition”
তবুও নির্ম্যাল্যর তার প্রতি গভীরতা, মায়া , দাবি, কেয়ারিং দেখে আর থাকতে পারেনি।
বেশ ছিল দুজনে সাত বছর। খুনসুটি, ঝগড়া, খুচরো প্রেমে দিব্যি কাটছিল দিনগুলো।
হঠাৎ একদিন নির্ম্যাল্য সমাপ্তিকে বিচ্ছেদের কথা বলে। তার মুখে কথাটা একটুও আটকায়নি। এক নিশ্বাসে সে সমস্ত কথা বলে ফেলে। যেন এতদিনের সম্পর্কের থেকে সে একছুটে বেরিয়ে যেতে চাইছে!
সমাপ্তি একটা কথাও বলেনি। আজ সম্পর্কটা সত্যিই তাদের দুজনের মধ্যে দেওয়াল তুলে দিয়েছে।
সেদিন শেষবারের মতো ঘুরতে গেল দুজনে। না, সেদিন আর সমাপ্তির হাতটা নির্ম্যাল্যর হাতের মুঠোর মধ্যে ছিল না। পাশাপাশি থাকা সত্ত্বেও যেন দুটো মনের মধ্যে আলোকবর্ষ দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছিল।
ডিনার টেবিলে বসে নির্ম্যাল্য খুব সহজেই সমাপ্তির চোখের দিকে তাকিয়ে বলল-“আমাদের সফর এতটাই ছিল”।
সমাপ্তি চোখ সরিয়ে নিল। চোখের কোণা বেয়ে নেমে আসা জল খুব কষ্ট করে আটকে নিয়ে অল্প হেসে বলল – “হয়তো সম্পর্কের পরিণতি এটাই ছিল”
নির্ম্যাল্যকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করেছিল সেদিন সমাপ্তির, কিন্তু আবেগ সামলে রাখল। হৃদয়কে পাথরের মতো শক্ত করে অস্ফুটে সে একটা কথাও বলতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদের কারণটাও সে জিজ্ঞেস করতে পারেনি।
তবে দুজনেই বুঝেছিল ক্ষয়ে যাওয়া প্রেমে সম্পর্কে ফাটলটা যখন ধরতে শুরু করেছিল তখন সামলে নিলে সম্পর্কটা বোধহয় পূর্ণতা পেত।
ডিনার শেষে আর সেদিন যেন আকাশজুড়ে বিরহের সুরে বৃষ্টি নেমেছিল আর শেষবারের মতো একসাথে ভিজেছিল দুজন।