॥ সময়ের প্রাসঙ্গিকতা ॥
” সময় নদীর স্রোতের ন্যায় প্রবাহমান ” —
এটি একটি সামান্য বাংলা প্রবাদ হলেও এই কথার গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের গোটা জীবনটাই সময়ের মাপকাঠিতে চলে। আমরা সবাই সময়ের দাস। সময়ের গন্ডিতে বাঁধা জীবনকে অস্বীকার বা অগ্রাহ্য করার স্পর্ধা আমাদের কারোর নেই। আমাদের আধুনিক বিলাসবহুল জীবনধারায়, টাকার বিনিময়ে সমস্তপ্রকার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের চাবিকাঠি হাতের মুঠোয় আনতে পারলেও একরত্তি সময়কে কখনো টাকার বদলে হস্তগত করা যায় না। সময়ের মূল্য সঠিক সময়ে বুঝতে না পারলে সারাটা জীবন আফসোসের যন্ত্রণা ভুগতে হয়। ক্ষণিকের ভালো সময় অথবা মুহুর্তের জন্য কিছু মানুষ দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকে।
দার্শনিক অথবা তাত্ত্বিক দিক থেকে বিচার করলে লক্ষ্য করা যায় যে সময়ের কোন নিজস্ব অস্তিত্ব নেই। সময় সর্বদাই আপেক্ষিক। সময়ের হিসেব রাখতে আমরা ক্যালেন্ডার, ঘড়ি প্রমুখ ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এই সময়ের নিজস্ব অস্তিত্ব সম্পর্কে বিবিধ দার্শনিকদের মতভেদ আছে। সেক্ষেত্রে সময় হয়তো বছর, মাস , দিনের অথবা ঘন্টা, মিনিট, সেকেন্ডের এক পরিসংখ্যান ব্যাতিত আর কিছুই নয়।
অপরদিকে বৈজ্ঞানিক দিক থেকে বিচার করতে গেলে কিছুটা আলাদা মতামত গ্রহণযোগ্য। পরিমাপের জন্য আমরা ৭ টি একককে পর্যবেক্ষণ করি― ক্যান্ডেলা, মিটার, কেলভিন, কিলো, অ্যামপিয়ার, মোল এবং সেকেন্ড। সেকেন্ড হল সর্বপ্রকার পরিমাপের এককের ভিত্তি, কারণ মাপের পর্যালোচনা একটি নির্দিষ্ট সময়ের অন্তরেই সংগঠিত হয়। সুতরাং সময়ের পরিবর্তন ব্যাতিত সকল কার্যই অসম্পূর্ণ। ক্যান্ডেলা থেকে শুরু করে মোল পর্যন্ত কোনপ্রকার এককই সময়ের নিরীক্ষণ ছাড়া সর্বপ্রকার পরিমাপের কাযে অক্ষম।
ভালো সময় এবং খারাপ সময়, এই দুই-ই মিলিয়ে- মিশিয়ে জীবনের প্রাসঙ্গিকতা আনে। যদি আমরা খারাপ সময়কে সঠিক কার্যের দ্বারা কাটিয়ে উঠতে না পারি তো ভালো সময়ের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ হারাবো। অপর পক্ষে ভালো সময়কে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত উচ্ছ্বসিত না হলে জীবনের স্বাভাবিক গতি বজায় রাখতে পারব।
সুতরাং সময় সবরকম মাপকাঠির একক কিনা সেবিষয় বিস্তর তর্ক থাকলেও সময়ের সঠিক অস্তিত্ব অনুধাবন করা হয়তি বা এখনো সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি।
Because―
” Time goes away “.