সংসার চালাতে গিয়ে ট্যাঁকের পরিধি বেড়ে গেছে? ডিএ পাচ্ছেন না? কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী দেখলেই মেজাজটা হঠাৎ করে অর্ণব গোস্বামী হয়ে যাচ্ছে? চিন্তা করবেন না, সমাধান আছে। দাঁদ-হাজা-চুলকানি হোক বা চাকরি সবকিছুর সমাধান রয়েছে সদ্য ডি.লিট পাওয়া পিসির কাছে। তাই ছুটি, ‘ছুটি পান, খিস্তি গিলে খান!’। তাই আজ ছট পূজোর দিনটা সারাদিন পোঁদ উঁচিয়ে ল্যাদ খাওয়ার দিন আর একফাঁকে LaughaLaughi-তে একটা ঢুঁ মেরে একটু সাহিত্যের নামে এই বেয়াদপিটাকে হজম করে নিন।
এই ছট পূজো কেমন যেন ছটফট করে হয়ে যায়। মানে এর জন্য অন্য পূজোগুলোর মত অপেক্ষা নেই, চাঁদা তোলার হিড়িক নেই, রাস্তায় অকারণ যানজট নেই। হঠাৎ এক ভোরে পূজো হল; তারপর নো চাওয়া-পাওয়া, ওনলি ঠেকুয়া। আমার ছোটবেলার কিছুটা কেটেছে ডুয়ার্সে। হ্যাঁ স্বপ্নের সবুজ পটভূমি ডুয়ার্স। আমরা থাকতাম সাতটি চা-বাগানের মাঝে একটি ছোট্ট জনপদ বানারহাটে। বানারহাট এলাকাটাকে মিনি ভারতবর্ষ বলা যেতে পারে। বাঙালি, আদিবাসী, গোর্খা, বিহারি, মাড়োয়ারি, গুজরাতি; কে নেই! এত পরিমাণে অবাঙালি থাকায় সেখানে আমি প্রথম ছট পূজো নিয়ে বেশ উৎসাহ দেখেছিলাম। বানারহাটের গা বেঁয়ে বয়ে চলেছে ডায়না নদী। সাধারণত শান্ত তবে অন্য সব পাহাড়ি নদীর মতই সুযোগ বুঝে খরস্রোতা হয়ে যায় মাঝে মাঝেই। ছট পূজোর প্রাক্কালে ডায়না নদীকে সাজানো হত এক অপরূপ মোহময় আলোয়। নদীর ধার দিয়ে সারি সারি বাঁশের প্যান্ডেল আর লাল-নীল-সবুজ নিয়ন আলোর ঝর্ণায় ডায়না তখন লেডি ডায়নার মতই আকর্ষণের সেক্সি স্পট। ছট পূজোর আগের রাতে আমাদের ঘুম হত না। বাড়ির পাশের স্কুল মাঠটায় সেই রাতে হাজারো ছোট বড় গাড়ি। মধ্যরাত থেকেই তাতে মানুষ চেপে মহাউল্লাসে ডায়নার উদ্দেশ্যে চলেছে। বিকট সব শব্দ আর বিহারিদের সিগনেচার কিছু খিস্তিবাক্য সেই রাতে ঘুমোতে দিত না। ঘুমহীন রাত কখন যেন ভোরের রূপ নিত, ঠাহর করা যেতনা।
ছট পূজোর ভোরটা বছরের অন্য ভোরগুলির তুলনায় আলাদা। এই ভোরের সূর্য তার নির্ধারিত অ্যালার্মের শব্দ শোনার আগেই জেগে উঠতো। এদিনের সূর্য একটু বেশিই কমলা। ডায়নার জলের তুলতুলে প্রতিফলনে চারিদিকটা ঐশ্বরিক দ্যুতিময়। সূর্যের আরাধনায় জলের স্পর্শ কোথায় যেন শান্তির প্রকল্পিত কণ্ঠস্বর।
ছট পূজোর কথা বলতে গেলেই একজনের কথা বলতেই হয়। তিনি হলেন কায়লা জি। লম্বায় মেরেকেটে পাঁচফুট, ন্যাড়া করার একসপ্তাহ পর যতটা চুল থাকে, তার মাথায় সারাজীবন ততটাই চুল, একটি কাদায় চোবানো সাদা গেঞ্জি আর তিনসাইজ বড় প্যান্ট- এই হল এককথায় কায়লা জি, পেশায় দারোয়ান। কায়লা জি প্রতিদিন ভোরে একটি ভাঙা মগ নিয়ে মাঠের পাশে চা-বাগানে ছুটত। ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথায় হাগা শেষ করে গেট খুলতে যেত। এই পাঁচ মিনিটে হাগা হত কিন্তু ধোয়া হত কিনা… আসলে আমি মাঝে মাঝেই তার প্যান্টে হলুদ হলুদ কিসব যেন লেগে থাকতে… যাই হোক থাক সেসব কথা। তো এই কায়লা জি-ও ছট পূজো করতো। কিন্তু ভোরবেলায় নিত্যদিনের অভ্যাসটা কি করে কাটাত কে জানে! নাকি ওই ডায়নার ধারেই… পূজোর পরদিন সকালে কায়লা জি দরজায় হাজির হত প্রতিবছর। হাতে একটা কাগজের ঠোঙা আর প্রশস্ত মুখে আড়াইটা দাঁত বের করা হাসি নিয়ে সেদিন কায়লাজির বেশ গদগদ ভাব।
“বাবুয়া প্রসাদি লিয়ে লো…”।
খাবার ব্যাপারে আমার ঘেন্না বিষয়টাকে স্কিপ করে যাই। কায়লা জির বউয়ের বানানো সেই ঠেকুয়াকে অবশ্য ঘেন্না করলে পস্তাতে হত সারাজীবন। কিসমিস, বাদাম দেওয়া সেই ঠেকুয়া আমি গোটা পাঁচেক গোগ্রাসে গিলতাম। স্বাদের পাহাড়ে সেই ঠেকুয়া যেন তেঞ্জিং নোরগে।
কায়লা জির ঠেকুয়া নেই আর। এখন ময়দা-সুজির ড্যালা ড্যালা ঠেকুয়া বিরক্তির উদ্রেক করে বৈকি! কিন্তু কায়লা জির সেই ঠেকুয়ার স্বাদ মুখে নিয়েই আমি এই ছট পূজোটা কাটিয়ে দেব, আর আপনারাও গালে ঠেকুয়া গুজে ভাল কাটান, ল্যাদে কাটান এই ছটপুজো।
Featured image courtsy: Google