আজকাল একটা কথা আমাদের মা বাবা দের মুখে প্রায় শোনা যায়।” বুঝলেন মশাই, এসব হলো এই generation টার দোষ! ” কি বলতে চাইছি বোঝা গেলো না তো ? দুটো ঘটনার কথা বলি,তাহলেই বুঝতে পারবেন।গল্প নয় কিন্তু! এ একদম জলজ্যান্ত অামাদের সবার বাড়ীর কথা।
(ঘটনা -১)
-কি ব্যাপার এখনও ঘুমোচ্ছিস পড়ে পড়ে? বেলা এগারো টা বাজছে। কলেজ যাবিনা?
– উফ্ মা!যাও তো ! কাল রাত অবধি পড়েছি ,খুব tired আমি। ঘুমোতে দাও।
– বাবু এসব অজুহাত অন্য কাউকে দিস । আমি কি জানিনা কাল তুই রাত অবধি Pubg খেলেছিস! লজ্জা করে না রে ?বাবা এত কষ্ট করছে তোর জন্য! তিনটে বিষয়ে সাপ্লি তোর ।তাতেও হেলদোল নেই?
– এই শুরু হলো নাটক! তুমি একটু chill করো মা। আর শোনো আমার কিছু টাকা লাগবে ,Project এর কাজ আছে। ,বাড়ীতেই করে নেবো।
-মানে তুই আজকেও কলেজ যাবিনা?
– না যাবোনা !!! হয়েছে? টাকা টা দিয়ে এখন বিদায় হও! just অসহ্য লাগছে।রোজ রোজ এই ঘ্যানঘ্যান!
এই কথোপকথন মা ও ছেলের । আজকালকার দিনে এসব নতুন কিছু নয় । বাইরের রঙীন জগতের হাতছানিতে আমরা ভুলতে বসছি বাবা মায়ের গুরুত্ব।তবে সব টাই কি প্রজন্মের দোষ? কিছু উত্তর মিলতে পারে হয়তো
পরের ঘটনা থেকেই।
(ঘটনা-২)
পাঁচতলার ছাদ থেকে কংক্রীটের শহর টা কে কি রকম অচেনা লাগে হিয়ার ।আজ ওর হয়তো থেমে যাওয়ার দিন। যাওয়ার আগে দু চোখ ভরে দেখে নিলো সারা পৃথিবীকে। আর বাঁচা না হলোনা ওর।
লেখিকা হতে চেয়েছিলো সে। তাই বলেছিলো বাবা কে কিছুটা ভয় সঙ্গে নিয়ে ” বাবা আমি বাংলা নিয়ে পড়ি?”
আকাশ ভেঙে পড়ে সেদিন সুবীর বাবুর মাথায় । মেয়ে কি পাগল হয়ে গেলো নাকি ? দুই দাদা সফল ডাক্তার আর তাদের বোন হয়ে….ছিঃ ছিঃ।
কষিয়ে চড় মেরেছিলেন সেদিন হিয়া কে।
নাহঃ লেখিকা হওয়া হলোনা ওর। বাবা ডাক্তারী পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পাঠিয়ে দিলেন বাইরে। ফিসিক্সের থিয়োরীতে মন বসতো না ওর।দম আটকে আসতো ।তখন ওর মায়ের কথা খুব মনে পড়তো।
সেবারের পরীক্ষাতেও ও পারেনি পাশ করতে। বাবার কটাক্ষ মেনে নিয়েও চলছিলো জীবন।
তবু শেষ রক্ষা হলো না । সুবীর বাবু মরিয়া ছিলেন ডাক্তার বানানোর জন্য। তাই হিয়াকে না জানিয়েই ওকে বিদেশ পাঠাবার বন্দোবস্ত করে ফেলেন।
আর মুখ বুজে মানতে পারেনি হিয়া। পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত টা নিয়েই নেয় । পাঁচতলা থেকে যখন ওর দেহ টা মাটিতে এসে পড়ে তখন সব শেষ।
মেয়েটা কত শান্তিতে শুয়ে আছে যেন আর কেউ ডাকবে না ওকে ।কেউ বলবেনা তোকে ডাক্তার হতেই হবে।
– নিশ্চয় পরীক্ষায় ফেল করে সুইসাইড !
-আরে না না! বুঝলেন না এসব লাভ কেস্! মেয়ে মোটেও সুবিধের ছিলো না।
-আরে ছাড়ুন তো! সব এই Generation এর দোষ!
ঠিকই ধরেছেন,এসব জল্পনা হিয়ার মৃত্যুকে ঘিরেই।
দুটো ঘটনা দেখেও কি সবটা “Generation এর দোষ” বলে চাপানো চলে!? প্রত্যেক প্রজন্মেরই কিছু ভালো খারাপ দিক আছে। আজকের দিনেও যেমন সবাই খারাপ নয় তেমনি বাবা মায়েরাও সব সময় ঠিক নাও হতে পারে।
তাই বলি কি একে অন্যের কথা একটা শুনুন,সব সময় Generation কে দোষারোপ না করে।তাহলে হয়তো অনেক হিয়া আজও বেঁচে থাকবে সবার মাঝে।