আচ্ছা, santa কি সত্যিই আসবে?
-হ্যাঁ, আসবে তো।
আমায় গিফট দেবে?
-তুমি যদি ভালো মেয়ে হয়ে থাকো,একটুও দুষ্টুমি না কর তাহলেই দেবে।
মেট্রোতে রিকিয়ার পাশে বসা ছোট্ট মেয়েটি তার মাকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। রিকিয়া মনে মনে হাসল সেও ছোটবেলায় এমনই করত।তার মা প্রতিবছর তার মাথার কাছে গিফট,চকলেট রেখে দিত। মা-ই সারাজীবন santa হয়ে তার পাশে থেকে গেছেন।যা কিছু ভাল শেখা, পাওয়া সবই মায়ের থেকে। এসব ভাবতে ভাবতেই রিকিয়ার স্টেশন এসে গেল।
ফেরার পথে একটা কেকের দোকানে ঢুকল রিকিয়া। কেক কিনে বেরচ্ছে এমন সময় নজর পড়ল কাঁচের দরজার পিছনে দাড়িঁয়ে থাকা ওই ছোট্ট ছেলেটির দিকে। গায়ে ছেঁড়া,নোংরা জামা, খালি পা। হাঁ করে দোকানে সাজিয়ে রাখা পেষ্ট্রিগুলোর দিকে দেখছে। রিকিয়া একটা পেষ্ট্রি কিনে দোকান থেকে বেরিয়ে বাচ্ছাটির হাতে দিল। বাচ্ছাটি হাসল তারপর চলে গেল। রিকিয়া দেখল কিছুটা দূরে ওর মতোই আরও কয়েকটা বাচ্ছা।ছেলেটা অতটুকু কেকটা ওদের সবার সাথে ভাগ করে খাচ্ছে।
বাড়ি ফিরে এল রিকিয়া। সারাদিন অফিস করার ক্লান্তি থাকলেও ঘুম এল না রিকিয়ার। ওই বাচ্ছাটার মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠছে।কি মিষ্টি মুখখানা! ওদের কত কষ্ট, এই ঠান্ডায় গরম জামা তো দুরে থাক, গায়ে একটা গোটা জামা পর্যন্ত নেই। রিকিয়া ভাবতে থাকে সেও যদি মায়ের মতো santa হয়ে ওদের পাশে দাঁড়াতে পারত। সত্যি ওদের জন্য কিছু করতে পারত! এইসব ভাবনায় সারারাত ঘুম হয়না রিকিয়ার।
২৫ শে ডিসেম্বর সকালবেলা। রিকিয়া ফোনে ব্যস্ত। “কিরে সব গুছিয়ে নিয়েছি, তুই কতদুর? তাড়াতাড়ি আয়” তাড়াহুড়োর স্বরে বলল রিকিয়া। “হ্যাঁ, আসছি,আসছি” ফোনের ওপার থেকে রিকিয়ার বন্ধু শ্রীতমা উত্তর দেয়। রিকিয়া ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে কিছু গরম জামাকাপড় জোগার করেছে, কেক, বিস্কুট, চকলেট, আরও অনেক খাবার কিনেছে ওই পথশিশুদের জন্যে।
তারা সবকিছু নিয়ে ওখানে পৌঁছাতেই বাচ্ছাগুলো অবাক হয়ে তাদের দেখে, তারপর সেদিনকার ওই বাচ্ছা ছেলেটা রিকিয়াকে দেখে হেসে এগিয়ে আসে। রিকিয়ারা সব বাচ্ছাদের হাতে গরম জামাকাপড়, খাবার তুলে দেয়। “এগুলো সব আমাদের?” বাচ্ছাগুলো জিজ্ঞাসা করে। “হ্যাঁ,সব তোমাদের” উত্তর দেয় রিকিয়া। কী ভীষন আনন্দ বাচ্ছাগুলোর চোখেমুখে। মুখগুলো হাসিতে ভরে উঠেছে। রিকিয়া ওদের দেখে চোখের জল আটকাতে পারল না। কয়েকটা ঘন্টা কী ভীষণ আনন্দে কেটে গেল ওদের সাথে।রিকিয়া বাড়ি ফিরল একরাশ আনন্দ নিয়ে।
রাতে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুতেই মা জিজ্ঞাসা করল, “কি রে সারাদিন কেমন কাটল বললি না তো” । রিকিয়া জিজ্ঞাসা করল “মা তুমি কখনও ভুলে যাওনি আমাকে আমার পচ্ছন্দের গিফট দিতে, না বলতেই বুঝতে পেরেছো কী চাই আমার?”। “কীকরে ভুলে যাই বল! গিফট পেয়ে তোর ওই খুশিতে ভরে ওঠা মুখটাই আমাকে আনন্দ দিত” তার মা বলল। রিকিয়া হাসল। সে ভাবল santa যেন তার ঝুলিতে সবচেয়ে সেরা গিফটটা দিয়ে গেছে। ওই ছোট ছোট বাচ্ছাগুলোর মুখে সে হাসি ফোটাতে পেরেছে। একদিনের জন্যে হলেও তাদের আনন্দ দিতে পেরেছে। এটাই তার বড়দিনের সবচেয়ে বড় গিফট। আজকের দিনটা সত্যিই তার আর ওই ছোট বাচ্ছাগুলোর কাছে বড়দিন।