একটা নাইট ওয়াক, সঙ্গী রাত্রি

প্র‍্যাকটিক‍্যালটা হলেই এক্সাম শেষ। তারপর প্র‍্যাকটিক‍্যাল লাইফ থেকে কিছুটা হলেও রেহাই। পড়াশুনোর কাজকর্ম সেরে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো সুদীপ।

―”কাল তো তোর এক্সাম শেষ হচ্ছে। পড়া সব শেষ?”
প্রশ্ন করলো সুদীপের রুমমেট কৌশিক। সুদীপের থেকে বছর তিনেক বড় কৌশিক।

―”হ‍্যাঁ, ওই আর কি! হাঁটতে বেরোবে?”

―”হুমম চল, অনেকদিন নাইট ওয়াকে বেরোইনি।”

তখন প্রায় রাত সাড়ে দশটা বাজে। শান্ত শহরের বুকে তখন ক্লান্তি নেমে এসেছে, নিস্তব্ধতা আঁকড়ে ধরেছে শহরের প্রতিটি কোণাকে। মাঝে মাঝে কুকুরের ঘেউ ঘেউ চিৎকার আর হাঁপিয়ে আসা ইঞ্জিনের হর্ন শোনা যাচ্ছে।

দোকানপাট সমস্ত প্রায় বন্ধ, একটি স্টলে তখনো টিমটিমে আলো জ্বলছে। ওখান থেকে দুটো সিগারেট কিনল কৌশিক।

সিগারেট ধরিয়ে একটা জোর টান দিয়ে সে সুদীপকে বলল ―” বুঝলি ভাই, প্র‍্যাকটিক‍্যাল লাইফটাকে প্রতিনিয়ত আমরা কমপ্লিকেটেড করে ফেলছি।”

সুদীপ কিছুটা অবাক হয়েই বললো ― “হঠাৎ এরকম মনে হওয়ার কারণ কি তোমার?” কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর কৌশিক বললো ―”ছাড় বাদ দে, চল কোথাও বসি।”

 

ততক্ষণে সিগারেটটা সারাদিনের সমস্ত স্ট্রেসকে নিঃশেষ করে নিজেও পুড়ে ছাই।

রাস্তার পাশে একটা সরকারি বাস প্রতীক্ষালয়ে দুজনে বসলো। প্র‍্যাকটিক‍্যাল লাইফ নিয়ে আলোচনা করতে করতে দুজনের আলোচনা সমালোচনায় পরিবর্তিত হলো।সমালোচনার বিষয় চাকরি, বেকারত্বের সমস‍্যা, সমাজ, সংস্কার ছাড়িয়ে ঠেকলো নিউ জেনারেশন লেখক বিশেষত সোশ‍্যাল নেটওয়ার্ক খ‍্যাতিপ্রাপ্ত লেখক, লেখিকাদের নিয়ে।

সুদীপ কিছুটা বিরক্তির সুরে বলল ―”আজকালকার যারা এসব ফেসবুক,টেসবুকে লিখছে তাদের মধ‍্যে কোনো নতুনত্ব নেই বুঝলে। কবিতা কিংবা গল্প বলতে শুধু ওই প্রেম আর প্রেম। টেস্টের চেঞ্জ নেই। সেই একই জায়গায় পড়ে আছে। আরোও তো…”

কৌশিক কথা কেটে বললো ― “প্রেমটাকেও বিভিন্ন ভাবে প্রেজেন্ট করা যায়।”

―”বুঝলাম কিন্তু নতুনত্ব কিছু নেই। হ‍্যাঁ কিছু ব‍্যতিক্রম আছে মানছি। কিন্তু নিউ জেনারেশনের মানে আমাদেরই অনেকটা অংশ শুধু প্রেম নিয়ে পড়ে আছে। ছ‍্যাঁকা খাচ্ছে আর কবিতা লিখছে”

হাসতে হাসতে বললো সুদীপ।

“আসলে প্র‍্যাকটিক‍্যাল লাইফ থেকে অজান্তেই ক্রমে ক্রমে সরে যাচ্ছে সবাই। সবসময়ই কল্পনার জগতে থাকতে চাইছে” আরোও একটা সিগারেট ধরালো কৌশিক।

“প্র‍্যাকটিক‍্যাল লাইফ নিয়ে তো কত কিছুই লেখা যায়! এই যে এই লোকটা শুয়ে আছে, এটা নিয়েই কতকিছু লেখা যায়!” লোকটার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললো সুদীপ।

সিগারেটের কাউন্টার টা সুদীপের হাতে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কৌশিক বললো ―” কল্পনার জগতকে তুই সহজেই বানান করে,কবিতা কিংবা গল্পের খাতায় লিখতে পারবি। কিন্তু প্র‍্যাকটিক‍্যাল লাইফ যখন সশরীরে বর্তমান তখন তাকে আর বানানে ভেঙে সুন্দর করে লেখার দরকার নেই। উপলব্ধি করলেই হলো।”

―”চল উঠি এবার”
―”হুমম চল, আর বেশি ভাবিস না।  অল দ‍্যা বেস্ট ফর ইওর প্র‍্যাকটিক‍্যাল এক্সাম এণ্ড লাইফ অলসো !”

রাত তখন আরও বেড়েছে। অন্ধকার সম্পূর্ণ ভাবে গ্রাস করেছে শহরের অবয়বকে। ঘরে ফিরে সবাই মুখোশ খুলে প্র‍্যাকটিক‍্যাল লাইফে ফিরেছে। সারাদিনের মিথ‍্যে হাসি কিংবা অভিনয়ের বাইরে বেরিয়ে আয়নার সামনে সবার চামড়ার মুখোশ বিহীন চেহারাটা  দেখেছে রাতের শহর।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *