( ১ )
—‘তো যেরকমটা আমরা আশা করেছিলাম যে কম করে ১৫০ জন যোগ দিতে পারে এই পদযাত্রায় , সেরমটা দেখা গেল না । না এটা রথযাত্রা নয় , এটা সারা বাংলা মহিলা সংরক্ষণ কমিটির পদযাত্রার আজ দ্বিতীয় দিন । তবুও আশানুরূপ মহিলার জমায়েত চোখে পড়লো না । তবে আশা করবো আগে নিশ্চই অনেকে এই পদযাত্রায় যোগদান করবে । পরবর্তী update এর জন্য চোখ রাখুন বঙ্গ নিউজের পর্দায় । ক্যামেরাম্যান সৌম্যর সাথে আমি ঈশান ।’
উফফ্ , মাথাটা একেবারে ধরে গেছে । চল সৌম্য সামনের দোকান থেকে এক কাপ চা মেরে আসি । যতসব উল্টো পাল্টা নিউজ কভার করতে হচ্ছে ,সুমনদা টা না । ধুসসস্ , আজকাল ভালো নিউজের অভাব । এইসব পদযাত্রা করলে কি সব ঠিক হবে ? সেই তো যে এই পদযাত্রা করে আবার ঘরে ফিরে ১৪ বছরের বাচ্চা কে দিয়ে কাজ করায় । এরা আবার নাকি করবে মেয়েদের অধিকার সংরক্ষণ , হাহ্ । কি রে সৌম্য তুই কিছু বলছিস না যে ?’
—‘আমি আর কি বলবো । তবুও তো তুই কিছুটা ভালো ভালো নিউজ পাস । আমার কথা ভাব , এই তো গেল সপ্তাহে আমাকে পাঠানো হলো কোনো মন্ত্রীর কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে সেটা ক্যামেরা করার জন্য । আমি বলি কি তুই কোনো একটা ভালো সাবজেক্ট খোঁজ আমরা সেটার উপর একটা documentary টাইপ কিছু করি এরম ভাবে কতদিন চলবে ?’
—‘হুমমম্ , দাঁড়া তোকে ভেবে বলবো । এখন চলো এনাদের পদযাত্রার পদাবলী কতদুর এগোলো দেখি । ’
( ২ )
—‘আরে এ রহমত , পড়শু কিতনা পয়সা হয়েছিল তোর ?’
—‘আরে ভাই যাদা নেহি । উও বাজার ইলাকা থেকে বিশ অর গাঁও সে পনরা , সব মিলিয়ে কুছু ৪০ রুপেয়া হোবে । তেরা কেয়া হাল নাশিম ?’
—‘মেরা ছোড় ভাই , কৌন আজকাল এই বান্দর নাচ দেখতে চায় । সোবাই আজকাল উও ভিডিও চলা মোবাইলে দেখে । আরে ভাইয়া সেদিনকার তো এক গাঁও মে গেলাম , আমায় চোর শোচকে ভাগিয়ে দিল । আজকাল সোব্ মানুষদের অান্দর এক শক্ তৈরি হয়েছে কেউ কাউকে বিস্ওয়াস ই করতে চায় না ।ব্যাস এইটুকুই আর সব আল্লার দোয়া । ’
—‘আর তোর লড়কিটার শুনেছিলাম , তবিয়ত খারাব্ ছিল —’
—‘আরে কি বলবো রহমত লড়কিটার কয়েক হপ্তা ধরে বমি আর সঙ্গে খুন বেরোচ্ছে । গুনিনবাবা জড়িবুটি দিয়েছে কুছু আগে আল্লা যা চাইবেন । জানিস আমার লড়কিটার সাথে ভজুয়ার খুব ভাব , ভজুয়া কে বান্দর ভাবে না , নিজের ভাইয়ের মতো ভাবে । দুজনে একসাথে খায় । এই কদিন তো লড়কিটার শরীর খারাব তাই অামার ভজুয়া বেটারও মন খারাব , কুছু খেতেই চায় না । শুধু ওর পাশে শুয়ে থাকে মাঝেমাঝে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় । ভাব ভজুয়া কে লিয়ে যখন খিলা দেখাই , কতই না মারি চাবুক দিয়ে তবুও কিছু বোলেনা রাগ করে না । বুঝলি রহমত ভজুয়া আমার ছেলের মতো , এই মানুষগুলাই …… । ছাড় , তোর লাটুয়ার কি হালত্ ?’
—‘ ভালো রে , ঐ চলে যাচ্ছে । চল অনেক রাত হলো । নাশিম কাল কোথাও যাবি খিলা দিখানে ? ’
—‘হাঁ , উও হাব্বিগঞ্জ মে যাবো সাহেত ’ ।
( ৩ )
নাসিমের বাড়িতে ,
—‘আরে , বিটুয়া দরওয়াজা খোল । ’
—‘হ্যাঁ , আব্বা আসছি ।’
—‘ খেয়ে লিয়েছিস ?’
—‘না আব্বা । ভজুয়া কে খিলাতে গেলাম কিন্তু , তুমি না আসা পর্যন্ত খাবে না , দাঁত খিঁচোবে । ’
—‘ঠিক হ্যায় , জলদি সে খানা লাগাও । অউর ফির শোনা ভি হ্যায় , এক গাঁও মে খিলা দিখানে যেতে হবে । ’
—‘আব্বা , হাম ভি চলে আপকে সাথ ? আকেলে আাকেলে মন নেহি লাগতা ।’
—‘উমমম্ , ঠিক হ্যায় । কেয়া রে ভজুয়া ? আব তো তোর বেহেন ভি যাবে তোর সাথে । ’
ভজুয়া একটু লেজ টা নাড়িয়ে , মুখে অদ্ভুত শব্দ করে নাশিমে আঙুল ধরে নাড়াতে লাগলো ।
পরেরদিন সকালে উঠে তিনজনে হাব্বিগঞ্জের দিকে রওহানা দিল ।
—‘‘ আরে বাবুয়া খেল দিখেগা , খেল ?
বান্দরকা খেল , নাচেগা , কুদেগা
সির্ফ ৫ রুপেয়া মে ইয়ে অনোখি বান্দরকা খেল
আরে আইয়ে বাবু , আইয়ে মা জী —
জওয়ানী চাল দেখলিও মা জী , বুয়া জী—’’
—‘অনেকক্ষণ হলো , কেউ খিলা দেখতে আসছে না আব্বা । আমার খিদা পেয়েছে , ভজুয়ারও । দেখো কেমন মুখ শুকনো করে রেখেছে । আব্বা দেখো ঐ সামনের বাড়ীটায় একটা অমরূত গাছ দিখা যাচ্ছে । কত বড়িয়া পাকা আমরূত ঝুলছে । ’
—‘আচ্ছা বিটি তু অমরূত খাবি ? দাঁড়া হামি লিয়ে আসছি । তু আর ভজুয়া এখানে দাঁড়া , কুথাও যাবি না । ’
—‘ ঘর পে কেউ আছেন ? ’
—‘কেয়া চাহিয়ে ? কে তুই ?’
—‘ভাইসব হামি এক মাদারি আছি মানে বান্দরিয়া খিলা দেখাই । আসলে খুব খিদা পেয়েছিল , আমার বিটিও এসেছে আমার সাথে—’
—‘তো ? হামি কি করবো ?’
—‘নেহি কুছু নেহি বাবু । যদি মেহেরবানী করে আপনার গাছের , বেশি নয় দুটা অমরূত দেন । আমি আপনাকে মুফত্ মে খিলা দেখাবো । ’
—‘ভাগ ইঁহাসে । শালে ভিখারি লোক । আভি কে আভি চলে যা না হলে বহুত ধুলাই দেব । ’
—‘ঠিক হ্যায় , ঠিক হ্যায় ভাইসাব যাচ্ছি । ’
আকাশের দিকে তাকালো নাশিম ‘ আল্লা তু এতটাই কঠোর ’ ? তারপর দুর থেকে দেখতে পেল তার বিটি আর ভজুয়া পাশাপাশি বসে আছে । কি বলবে সে ওদের ?
—‘আব্বা মিলা কেয়া ?’
—‘নেহি দিয়া বিটি । গরিব কো কোই নেহি দেতা । অভি চলো । ’
—‘কাঁহা আব্বা ? ’
—‘অমরূত খানে ,আর কোথায় ? ’
—‘ লেকিন আব্বা ক্যায়সে ? ’
—‘দেখো তুম কোই আসছে নাকি । আমি ভিতরে ঘুঁস কর অমরূত লে কর আসছি । ’
—‘নেহি আব্বা হামে চোরি নেহি করনা । আপ চলিয়ে হাম পানি খেয়ে রেহ্ লেঙ্গে । ’
—‘ আব্বা হু তুমহারি । যো বলা ওহি করো । তুম ওর ভজুয়া বাহারসে দেখো । কোই আয়ে তে জোর সে সিটি মারকে ভাগ যানা , ঠিক হ্যায় ? হাম আব যা রহে হ্যায় । ’
—‘কোন হ্যায় রে ? অমরূত পেড় পে ? শালে চোর , চোর —’
—‘ভাগ বিটুয়া ভাগ , নেহি তো পাকাড় লেঙ্গে ইয়ে লোক—’
নাশিম খুব জোরে দৌড় শুরু করলো । কিছক্ষণের জন্য বোধহয় সে তার বিটুয়ার কথা ভুলে গেছিল তাই হঠাৎ পিছন ফিরে দেখলো , সে জোরে দৌড়ে চলে এলেও তার বিটুয়া পারেনি । তার বিটিকে সবাই ঘিরে ফেলেছে । ভজুয়া দাঁত খিচিয়ে সবাইকে আটকানোর চেষ্টা করছে । কি করবে এখন সে ? আবার দৌড় শুরু করলো সে , তবে এবার উল্টো দিকে ….
( ৪ )
“ …….জোরে দৌড়ো সৌম্য , আরো জোরে । সবসময় মনে রাখবি scene is like life .If missed it once then u can’t get it anymore not even with your camera and eyes too…”
ক্রিং ক্রিং——মোবাইলের রিংটোনে সৌম্যর ঘুমটা ভেঙে গেল । কোনোরকমে চোখ খুলে ফোনটা ধরলো—
—‘হ্যালো সৌম্য , পেয়ে গেছি , আমি আমাদের documentary এর জন্য subject ………
(ক্রমশ)