গ্র্যাজুয়েট আমরা হবই। এই আকালের বছরে দেশের দশ লাখ মানুষ যখন কোরোনা নামে জৈব মারণাস্ত্র এর সাথে লড়াই করে বাঁচার পথ খুঁজছে, তখন আমরা চার কামরা ঘরের একটায় এককোনে বসে গাদাগাদা বই মুখস্ত করে, অন্ধকার ভবিষ্যতের শুকনো সলতে তৈরি করব, তবু; গ্র্যাজুয়েট আমরা হবই।
চারিদিকে লোকজনের রুজিরোজগার বন্ধ; দেশের বড় বড় নেতা থেকে শুরু করে বাড়ির কাজের মাসির অবধি চিন্তায় রাতে ঘুম হচ্ছে না, এরপর কি হবে! তাতে কি! গ্র্যাজুয়েট আমরা হবই।
পরীক্ষা দিয়েই ছাড়ব (নইলে বিনা পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ার মতো পাপে ওনারা ভগবানের কাছে অপরাধী হয়ে থাকবেন) ঝড়ে মাথার ছাত ঠিক নেই হয়ত, হয়ত বই খাতার খোঁজ নেই, তাও গ্র্যাজুয়েট আমরা হবই।
আপনারা বাড়ি থেকে অবসাদগ্রস্ত, মুড সুইং এর শিকার, তাই হয়ত সিদ্ধান্তের এমন সাতরঙা খেল দেখাচ্ছেন। অসুবিধা নেই। আমরা মাথা নিচু করে মেনে নেব, যখন যা বলবেন!
আপনারা সাড়ে তিনমাস ধরে সাড়ে চব্বিশবার বৈঠক করলেন, আরো সাড়ে সাত বার করুন। গোলাপের পাপড়ি ছিঁড়ে ছিঁড়ে সিদ্ধান্ত নিন, হ্যাঁ. না. হ্যাঁ. না। আমরা বাড়ি বসে বেকার, ভালই লাগছে চাপে থাকতে! আরো বদ্ধপরিকর হচ্ছি; ডিগ্রি পাবই।
তারপর নাম লেখাব” উড বি” বেকারদের দলে; বেকার সম্প্রদায় বড় হবে, বিষের বছরের কোরোনা ব্যাচদের নিয়ে। এমনিতেই অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষ ডিগ্রি ভরা ফাইল নিয়ে বাড়ি বসে আছেন, ছিলেন, আমরাও নাহয় থাকব, তাও ডিগ্রি আমরা নেবই।
তারপর পাঁচশো টাকা দিয়ে পোস্টঅফিসে পিওনগিরির তেতাল্লিশটা ভ্যাকেন্সির জন্য দু লাখ ক্যান্ডিডেট এর মধ্যে, আমিও একজন জেনারেল ডিগ্রিধারী ক্যান্ডিডেট হব; তাও গ্র্যাজুয়েট আমরা হবই। বাড়ি বাড়ি ঘুরে টিউশনের পয়সায় ফর্ম ফিল আপ করব, ভিতরের ক্যান্ডিডেটদের জন্য সামান্য ইন্টারভিউ এর ডাক অবধি পাবো না; তবু গ্র্যাজুয়েট আমরা হবই।
এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে দুর্নীতির প্ল্যাকার্ড নিয়ে, নিজের পয়সা খরচ করে ছেঁড়া চটি আর ফাটা কপাল নিয়ে ধর্নায় বসব, তাও গ্র্যাজুয়েট আমরা হবই।
এইটাও পড়তে পারেন: ভাষা ও রঙ
সবকিছু ওলটপালট হয়ে যাক; দেশের অর্ধেক লোক খিদেয় মরুক বাকিরা রোগে মরুক, আত্মহত্যা করে মরুক, কলকারখানা বন্ধ থাক, চাকরিবাকরির সুযোগ বন্ধ হোক, আপনারা পরীক্ষা নিন! আমরা বরং হাতে স্যানিটাইজার আর মুখে মাস্ক পরে বরং পড়তে বসি; গ্র্যাজুয়েট আমরা হবই!