॥তবে এবার বিপ্লব হোক॥
‘গর্জে ওঠো CU’ নামক স্লোগানে বেশ কিছুদিন যাবৎ মুখরিত হচ্ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন। পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত থাকা অথবা বলা ভালো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সমস্ত কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এটি বেশ প্রাসঙ্গিক আলোচনা।
‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়’-এর ব্যাখ্যা নানান জনের কাছে নানানরকম। এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে এটি একটি খ্যাতনামা এবং বহুদিন যাবৎ সুনামের শীর্ষে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া বহু ছাত্র-ছাত্রীর আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন কারণ বেশিরভাগেরই বক্তব্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকার অর্থ ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত। পড়ুয়াদের অভিভাবকরাও অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে তার সন্তানের ভবিষ্যৎ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জুড়তে উদ্যত হওয়ার খামতি রাখেন না। অতঃপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নামক ট্যাগলাইন সঙ্গে করে পড়ুয়ারা তাদের স্বপ্ন অটুট রাখার বিশ্বাস রাখে। কিন্তু সেই স্বপ্নই যদি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়?
কিছুদিন আগেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার অধীনে থাকা সমস্ত কলেজের প্রথম বর্ষের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে এবং তারপর থেকেই পড়ুয়াদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বি.এ. প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় মাত্র ৪৩ শতাংশ পাশ এবং বি.এস.সি-তেও পাশের হার বিগত বছরের তুলনায় অনেক কমের দিকে (৭১%)। এই ফলাফল জানার ঠিক পরেই জনগণের বক্তব্য হয়তো এটা হতেই পারে যে পড়াশোনায় অমনোযোগিতার ফলেই এই পরিণাম। অভিভাবকদেরও একাংশের এটাই বক্তব্য।
আচ্ছা, তর্কের খাতিরে নাহয় ধরেই নিলাম যে ১০০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ৪০ শতাংশ পড়াশোনা করেনি সতর্কভাবে। কিন্তু বাকিরা? যেখানে অন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা যথেষ্ট ভালো নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হচ্ছে সেখানে দাঁড়িয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এক নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীরা এতটাই ফাঁকিবাজ যে তাদের ৫০ শতাংশও পাশের যোগ্যতা রাখেনা; এটা কি সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য?
একটু ভালো করে ভেবে দেখলে হয়তো বা উপলব্ধি করবেন যে এটা সম্ভবপর হত না যদি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের করা কিছু অহেতুক নিয়মের কড়ি-বরগা না গড়ে তুলতো।
অনেক আশা-ভরসা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে পা রাখা ছাত্র-ছাত্রীরা তাই আজ নিজেদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে টালমাটাল পরিস্থিতির সম্মুখীন। নিয়মিত পড়াশোনা করেও আজ ৪০% পাশের নম্বর নিয়ে সবার কাছে হাসির পাত্র হতে হচ্ছে কোনো ছাত্র বা ছাত্রীকে যাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে পুতুল খেলা খেলতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনভাবে বাঁধেনি।
তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আজ সংঘবদ্ধ, আজ সবাই মিলে একসাথে গর্জে উঠেছে ন্যায় বিচারের আশায়। যারা ভুক্তভোগী হয়েছে বা যাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের
দিকে যাওয়ার সম্মুখীন হয়েছে তারাও থেমে থাকেনি, নিজেদের এবং আগাম ভবিষ্যৎের ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎে যাতে এইপ্রকার বিপর্যয় না নেমে আসে তার জন্য অন্যরকমের এক বিপ্লবে মেতে উঠেছে। বন্দুক,বোমা ছাড়াই এ এক অন্য বিপ্লব।
#We Need justice#
অগত্যা হাজার হাজার তরুণ প্রাণের জেদের কাছে হার স্বীকারে বাধ্য হয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। বাঁধা ধরা নিয়মের বাঁধন কিছুটা হলেও আলগা হয়েছে। আমাদের সকল পড়ুয়াদের একটাই কামনা—
“কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়” যেন সকলের কাছে ত্রাস হয়ে না জন্মায় বরং এক আলোকিত ভবিষ্যতের সুনিশ্চিত ঠিকানা লাভের প্রাঙ্গন হয়ে থাকুক “কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়” ওরফে “CU”।