ফোনটা হাতে নিয়ে সৌম্য একবার উঠে দাঁড়াল তারপর কিছু না বুঝে আবার বিছানায় বসে পড়ল।
অনিতার সঙ্গে সৌম্যর ব্রেকআপের পর প্রায় ছ’মাস কেটে গেছে। এর মধ্যে কেউ কারোর খোঁজ নেয়নি, সৌম্য তো বিশেষত ভেবেই ছিল যে সে কোনো যোগাযোগ রাখবে না। আধুনিক যুগে আধুনিক প্রেমটা তাই সোশ্যাল মিডিয়ার সব খোপ থেকে বন্ধ ছিল, আসলে প্রেম যে মুক্তি চায় তাই একটু ফাঁক পেলেই সে পালাই পালাই করে। এতদিন সৌম্য ঠিকই ছিল, আসলে অনিতার অবজ্ঞা তাকে ভিতরে ভিতরে পুরুষালী জেদে নিয়ে গেছিল।
কিন্তু আজ সব হিসাব কেমন যেন ওলটপালট হয়ে গেল। আজ, তেইশে জানুয়ারি, সৌম্য আর অনিতার দুবছর পূর্ণ হবার দিন। বছর দুয়েক আগে এরকমই একটা দিনে, ‘যেমন খুশি সাজো’ প্রতিযোগীতায় নেতাজী সাজা সৌম্য, মাতঙ্গিনীরূপী অনিতাকে প্রোপোজ করেছিল। তখন অনিতা হেসে বলেছিল, ” কী হে বীর, আজ তোমাকে বধ করেই দিলাম বল?”
কথাগুলো আজ সকাল থেকে বড্ড মনে পড়ছে সৌম্যর। তাই সে সকাল থেকে ফোন নিয়ে ভাবছে ফোন করবে কীনা। লম্বা একটা এসএমএস টাইপও করেছে সে শুধু সেন্ড বাটন্ টায় ক্লিক করতে পারছে না।
ফোনটা পাশে ফেলে সৌম্য একবার চোখ বন্ধ করে শুল।
চোখ বন্ধ করে আরো কষ্ট, সে তাই তাড়াতাড়ি উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে বসে। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই সৌম্য সেন্ড বাটন্ টা প্রেস করে। হয়তো অনিতা নাম্বারটা ব্লক করেছে, ইস্ কী যে ভাবল সে, হয়তো ডেসপারেট্ ভাবল তাকে… এসব ভাবতে ভাবতে ভাবতেই দেখে ফোনে এসএমএস ঢুকছে। চোখটা কচলে সৌম্য ভালো করে দেখে ওটা, হ্যাঁ ঠিক তো, অনিতার রিপ্লাই। সে তাড়াতাড়ি নাম্বারটায় ফোন করে।
প্রথমবার ফোন কেটে যায়, কিছুটা ক্ষুন্ন হয়েই সে দ্বিতীয়বার ফোন লাগা ভয় তাকে। দুবার রিং হবার পর ওপাশ থেকে ফোন তোলার আওয়াজ পাওয়া যায়।
“হ্যালো,” কাঁপাকাঁপা গলায় সৌম্য বল,
ওপাশ থেকে ধীরে ধীরে আওয়াজ আসে,
” হ্যাঁ বল”
মনের দমানো আবেগ যেন বাঁধ মানে না সৌম্যর, সে আবেগী গলায় বলে ওঠে,
” অনু, আমি তোকে খুব ভালোবাসি প্লিজ ফিরে আয়”
ফোন বাজার আওয়াজে সৌম্যর ঘুমটা ভেঙে যায়, ওটা স্বপ্ন নাকি বাস্তব ভাবতে ভাবতে সে ফোনটা তোলে, নিরস গলায় বলে,
” হ্যাঁ বল,”
” ভাই, একটা খবর আছে”
সৌম্য তেতো গলায় বলে, “বল”
” অনিতাকে দেখলাম এক্ষুনি। এই আমাদের বাড়ির পাশের পার্কে একটা ছেলেকে নিয়ে গেল”
এইটুকু কথাই শুধু সৌম্যর কানে যায় বাকিটা সে মন দেয় না, ওপাশ থেকে মোহন একনাগাড়ে বকতে থাকে। আসলে স্বপ্ন স্বপ্নই হয়, বাস্তবের থেকে তা বহুদূরের বাসিন্দা।