“প্রতারিত” —তিলোত্তমা মজুমদার

ছোটবেলা থেকে এটা ওটা কাজ ক’রে বড়ো হয়েছে রামভরোসা। খেটে খাওয়া ছেলে। চেহারাও চাবুক। আজ তার পরিশ্রম স্বার্থক। কলেজ স্কোয়ারে বড় দোকান। খাবার-দাবারের। দীলিপ ওকে সাহায্য করে কাজে, থাকেও ওর সাথেই। বিয়ে থা করে নি। “আজ আর একটু গুছিয়ে নি, কাল করবো বিয়ে”—এই ক’রে আর বিয়ে হয় নি।
একদিন সন্ধ্যে বেলা দীলিপ আর সে মাদুর পেতে বসেছিল গোলদিঘির পারে।
টুকটাক গল্প হচ্ছিলো। দীলিপ হঠাৎ লক্ষ করলো একটা উলঙ্গ নারীমূর্তি তাদের দিকে টলমল পায়ে এগিয়ে আসছে।

কাছে আসতেই দেখা গেলো, মেয়েটি উন্মাদ। মাটির দিকে তাকিয়ে কী যেন খুঁজে চলেছে। রামভরোসা হকচকিয়ে গেল। এমন নগ্নতা সে আগে দেখেনি।
হঠাৎ সম্বিৎ ফিরলো। দীলিপকে বলল পাশের সাহা বৌদিকে ডেকে আনতে,আর একটা কাপড় আনতে। পুর্নযৌবনা এই মেয়েটি এভাবেই থাকলে, তার বিপদ হতে কতক্ষণ!
দেখা গেলো, পাগলি কাপড় পড়তেই রাজি নয়। রামভরোসা কোনোরকমে তারগায়ে কাপড় জড়িয়ে দিলো। ‘রামী’ নাম দেওয়া হল তার। রাতে দীলিপকে নিয়ে গোলদিঘির পারে, মাদুরে শুয়ে রইলো রামভরোসা।

তারপর দুদিন দেখা গেল না তাকে। হঠাৎ একদিন সকালে দেখা গেলো কাপড় জড়ানো অবস্থাতেই ঘুরে বেড়াচ্ছে বই-পাড়ায়। শাড়িতে রক্ত। সবাই যেন গিলে খাচ্ছে ওকে। সারা পাড়াটাকে যেন ও এক ঝটকায় উলঙ্গ ক’রে দিয়েছে। মালতীকে ব’লে রামীকে পরিস্কার করালো, শাড়ি পড়ালো রামভরোসা। বাড়িতে নিয়ে গেলো। নিজে মাটিতে শুলো। একটা খাটে শোয়ানো হল রামীকে। অন্যটায় শুলো দীলিপ।

সব ভালোই চলছিল। কোথা থেকে যেন মস্তিস্কবিকৃতি আরোগ্য ওষুধ এনে রামীকে খাওয়াতে লাগলো রামভরোসা। একটা মায়া পড়ে গিয়েছিলো রামীর ওপর।
রামভরোসাকে তেমন পাত্তা দেয় না রামী। তবে দীলিপের সাথে তার খুব ভাব। কেন কে জানে! একদিন রাতে হঠাৎ রামীর পোশাক বদলাতে গিয়ে তার নগ্ন শরীর দেখে রামভরোসা উত্তেজনায় ছটফট করতে লাগলো। রামভরোসা তাকে ভোগ করার জন্য এগোতে লাগলো, রামী ততই ভয় পেতে লাগলো। চিৎকার শুরু করে দিলো সে। রামভরোসার হঠাৎ যেন জ্ঞান হলো। এটা সে কি করতে যাচ্ছিলো! যাকে স্নেহের বশে সুস্থ করার জন্য ঘরে এনেছে, তাকেই আজ তার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে…
ছি!
নিজেকে ধিক্কার দিলো সে।

অন্য একদিন রাতে, দীলিপ আর রামীকে ঘরে না দেখতে পেয়ে অজানা আতঙ্কে কেঁপে উঠলো রামভরোসা। আশে পাশে খুঁজে পেলো না তাদের। খুঁজতে খুঁজতে বাইরে গোলদিঘির পারে দুজনকে পাওয়া গেলো, আপত্তিকর অবস্থায়। রামীও শান্ত হয়ে আছে।আর সেদিনের মতো প্রতিবাদ করছে না।

পরদিন সকালে মন্দিরে গিয়ে রামীর সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে দিলো রামভরোসা। তার পর নিজেকে, রামীর স্বামী ব’লে পরিচয় দিয়ে, মানসিক হাসপাতালে রেখে এলো তাকে। শুশ্রূষার জন্য।
প্রতারণার জ্বালায় সারাটা মাস জ্বলেছিলো রামভরোসা।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *