একটা গল্প বলি আজ । গল্প বটে , কিন্তু সত্যি । সালটা ২০০৯ , মুম্বাইয়ের বরসোভার একটা ছোট্ট ছিমছাম ফ্ল্যাট । অদিতি আর আলিফের রূপকথার মত সংসারে তখন অদিতির কোলের বাচ্চাটিকে নিয়ে সারাদিন ব্যস্ততা তুঙ্গে । এদিকে আলিফ ন্যাপি বদলে দিচ্ছে তো অন্যদিকে অদিতি বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে শিশুকে । ওদের দুজনের পৃথিবীটা এখন শিশুটির কচি হাতে শুরু হয়ে ঘুরে ফিরে নরম কপালেই শেষ । কিন্তু কেন হঠাৎ এই বাচ্চাটির কথা বলছি ? তা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে তিন মাস আগে ।
হিন্দু -মারাঠি অদিতি আর মুসলিম -গুজরাটি আলিফ তখন মুম্বাইয়ের এক নামী বেসরকারি হাসপাতালে । অদিতি গর্ভবতী , আজই সিজার হবে তার । অদিতিকে নিয়ে যাওয়া হল অপারেশন টেবিলে । বাইরে আলিফ তখন টেনশন আর উত্তেজনায় ছটফট করছে । কিছুক্ষণ পরে নার্স আলিফের হাতে দিয়ে গেল তার ফুটফুটে সন্তানকে । প্রথম পিতৃত্বের স্বাদ পেয়ে আলিফ তখন সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুটিকে তার সতর্ক আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে রেখেছে আর তার চোখের কোণ থেকে আনন্দাশ্রুর সচল ধারার এক বিন্দু পড়ল শিশুটির কপালে ।
পরদিন সকালে নার্স এসে বার্থ সার্টিফিকেটের একটা ফর্ম আলিফের হাতে দিয়ে গেল । অদিতির বেডের পাশে বসে ফর্মটা ফিলাপ করতে করতে আলিফ বলল ,
– “ অদিতি তোমার মনে আছে আমরা ঠিক করেছিলাম যে আমাদের সন্তানের কোন ধর্ম হবে না ! ’’
– হ্যা কেন মনে থাকবেনা ! ওঁর ওপর কোন একটা নির্দিষ্ট ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার নেই আমাদের………… আচ্ছা এসব এখন জিজ্ঞেস করছ কেন ?
– আরে এই বার্থ সার্টিফিকেটের ফর্মে রিলিজিয়ন কলাম টায় কি লিখব ?
– কেন , NA লিখে দাও ।
আলিফ ফর্মটা পূরণ করে নার্সকে দিয়ে এলো । তারপর দুজনে ছোট্টটাকে নিয়ে খুনসুটি করতে লাগলো । কিছুক্ষণ পর টাই পড়া একটা হোমরা চোমরা লোক এসে বলল ,
– স্যার…
– হ্যা বলুন…
– ফর্মটায় একটা ভুল আছে স্যার ।
– ওহ কোথায়… বলুন ?
– স্যার এই যে রিলিজিয়ন কলামটায় NA লেখা যাবে না স্যার ।
– কেন যাবে না ?
– স্যার বার্থ সার্টিফিকেটটা তো অটোমেটিক কম্পিউটারে তৈরি হয় । রিলিজিয়ন কলাম ব্ল্যাংক থাকলে সিস্টেম সেটা নিচ্ছে না ।
– তাহলে আমি কি করব ?
– স্যার আপনাকে Hindu / Muslim / Christian / Others এর মধ্যে একটা দিতে হবে…
– না আমি আমার সন্তানের ওপর কোন ধর্ম চাপিয়ে দিতে চাই না । আমি কোন ধর্মকে অসম্মান করি না । বড় হয়ে ও যে ধর্ম গ্রহণ করতে চায় করবে । আমাদের আপত্তি নেই । আমি রিলিজিয়ন কলাম ব্ল্যাংকই রাখব ।
– আমরা হাসপাতালে কিছু করতে পারব না স্যার । আপনি বরং BMC অফিসে গিয়ে অফিসারের সঙ্গে কথা বলুন ।
পরদিন সকালে অদিতি ও আলিফ BMC অফিসে গেল । আলিফ অদিতিকে আসতে বারণ করেছিল । কিন্তু ও নাছোড়বান্দা , জেদ করে সঙ্গে এসেছে ঐ অসুস্থ শরীর নিয়ে । অফিসারকে সবটা বলার পর , তিনি বললেন ,
– কেন ম্যাডাম , আপনার কি হিন্দু হয়ে লজ্জা করে ? কেন আপনি আপনার সন্তানকে হিন্দু পরিচয় দিতে পারবেন না ?
– না স্যার , আমি কোন ধর্মকেই অশ্রদ্ধা করি না । আবার কোন ধর্মের প্রতিই আমার বিশেষ আনুগত্য নেই । আমি শুধু আমার সন্তানের ওপর কোন ধর্মকে চাপিয়ে দিতে চাইনা । ও বড় হবে , সব ধর্মের ব্যাপারে পড়বে , জানবে তারপর ইচ্ছে অনুযায়ী একটা ধর্ম গ্রহণ করবে । আমাদের কোন অধিকার নেই ওঁর ওপর কোন ধর্মের ছাপ দিয়ে দেওয়ার…
– সবই বুঝলাম , কিন্তু রিলিজিয়ন কলাম ব্ল্যাংক তো রাখা যাবেনা ।
– কেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে এক মা-বাবার তার সন্তানকে কোন ধর্ম না দেওয়ার অধিকার থাকবে না ?
– আপনার বক্তব্য আমি বুঝতে পেরেছি , কিন্তু কম্পিউটার তো মানবে না । ওটা ফিলাপ করতেই হবে । আপনি বরং এক কাজ করুন , Others লিখে দিন ।
– কিন্তু স্যার , Others-ও তো একটা যেকোনো ধর্মই বোঝাচ্ছে । হিন্দু , মুসলিম , খ্রিস্টান বাদ দিয়ে অন্য কোনো ধর্ম । কিন্তু আমরা তো স্যার আমাদের সন্তানকে কোন ধর্মই দিতে চাইনা ।
– আমার আর কিছু করার নেই…
অবশেষে নিরুপায় হয়ে আলিফ আর অদিতি Others লিখেই সন্তানের বার্থ সার্টিফিকেট বের করল ।
গল্প এখানেই শেষ । কিন্তু এই গল্পটা একটা প্রশ্ন রেখে গেল…
একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কি সরকারি ভাবে কেউ ধর্মহীন থাকতে পারে না ?
ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় লেখা আছে “ secular, democratic republic ’’ । এই সেকুলার শব্দটির মানে কি ? Secularism শব্দটির সংজ্ঞা হল ,
“ the principle of separation of the state from religious institutions. ’’
অর্থাৎ ধর্মীয় বিশ্বাসকে রাষ্ট্রের মূলনীতির অন্তর্গত করা যাবে না । সরলীকরণ করলে দাঁড়ায় , একটি secular দেশের জনগণের ব্যাক্তিগত স্তরে ধর্মীয় ভাবনার জায়গা আছে কিন্তু পাবলিক অ্যাফেয়ার্সকে ধর্মীয় ভাবনার বাইরে রাখতে হবে ।
কিন্তু আমাদের দেশে এই secular শব্দটিকে একটি ভুলভাবে বোঝানো হয় । আমাদের বলা হয় , একটি secular রাষ্ট্র সব ধর্মের সঙ্গে সহাবস্তান করবে । সরকারিভাবে এও বলা হয় যে “ ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয় ’’ । তাই হয়তো সরকারি স্তরে সবজায়গায় জানতে চাওয়া হয় যে আমার ধর্ম কি ! সে স্কুল কলেজে ভর্তি হওয়ার ফর্মেই হোক বা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে থাকা কোন রোগীর হোক । রাষ্ট্রের কাছে এই প্রশ্ন কড়া যেতে পারে যে , হিন্দুকে শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি আর মুসলিমকে শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি কি আলাদা ? একজন মুসলিমের ক্যান্সার হলে যা ট্রিটমেন্ট হবে , হিন্দুর কি সেটা হবেনা ? মুসলিমের জ্বর হলে প্যারাসিটামল দেওয়া হবে , আর হিন্দুর বেলায় কি মেট্রোজিল দেবেন ? হ্যা এগুলো যদি অবান্তর প্রশ্ন হয়ে থাকে , এসবকে যদি অসম্ভব মনে হয় । তবে মৃতপ্রায় রোগীর ধর্ম জেনে হাসপাতাল করবে টা কি ? রোগীকে নিশ্চয়ই হাসপাতালে থাকাকালীন রেডমিট দেওয়া হয় না ! তাহলে বিফ আর পর্কের ব্যাপারটা বুঝতাম । তবে একটি secular রাষ্ট্রের কি দরকার নাগরিকের ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে জানার । কেন হাসপাতালের ফর্মে ঐ রিলিজিয়ন কলামটা থাকবে ? কেন জন্মের পরই একটি শিশুর ধর্ম পরিচয় জানতে চাওয়া হবে ? কেন বাবামার ধর্মীয় পরিচয়েই একটি সন্তানকে বিশ্বাস রাখতে হবে ? কেন জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই রাষ্ট্র আমাকে রিলিজিয়ন কলামটা ফিলাপ করতে বলবে ?
ভারতবর্ষকে যদি বিশ্বের কাছে একটি secular দেশ হিসেবে নিজের পরিচয় রাখতে হয় তবে অবিলম্বে রাষ্ট্রের সমস্ত সরকারি কাজকর্মের থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে । নাগরিকেরা পার্সোনালি সাধমত ধর্ম চর্চা করতে পারবে , রাষ্ট্র তাতে নাক গলাবে না । ধর্মের ভিত্তিতে কোনরকম সংরক্ষণ করবে না । জনগণের ধর্মীয় পরিচয়ের কোন রেকর্ড রাখা চলবে না । ভারতে তবেই কোন পিতামাতা তাদের সন্তানকে জন্মের পর ধর্মীয় বেড়াজাল থেকে মুক্ত রাখতে পারবে । অধ্যাপক সনৎ কুমার দে যথার্থই বলেছেন ,
“ ধর্ম থেকে চিন্তার মুক্তিতেই ধর্মনিরপেক্ষতা পূর্ণতা পায় । ’’
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
This website uses cookies.