স্মরণে সত্যজিত দ্বিতীয় পর্ব

স্মরণে সত্যজিত দ্বিতীয় পর্ব লাফালাফির বর্ষ-পূর্তি। আর নতুন কিছু একটা হবেনা তাই হয়? আজকে আমাদের ঠিকানা ২১,রজনী সেন রোড,কলকাতা-২৯। আপনাদের সামনে তুলে ধরব লাফালাফির সাথে ফেলুদার কিছু কথোপকথন। লিখছে শয়তান চা জল-খাওয়ার শেষ করে ফাঁকা কাপ-প্লেট গুলো সরিয়ে আমাদের আড্ডা আবার শুরু হলো।ফেলুদা পেকেট থেকে সেই বিখ্যাত একটা চারমিনার বের করে ধরালেন এবং একটা সুখ টান দিয়ে বললেন,”হ্যা,কোথায় যেন ছিলাম আমরা?”
লাফালাফি:ওই তো স্ত্যালন,আর্নল্ড কে নিয়ে কথা হচ্ছিল।
ফেলুদা: ঠিক,এই যে আজকালকার জেনারেসন পশ্চিমী সিনেমা গুলো কত সুন্দর করে নিজের করে নিচ্ছে আর তার সাথে মানিয়েও নিচ্ছে,তাহলে আমাদের দেশীয় সিনেমা কি দোষ করলো?কি সুন্দর করে শার্লক কে নতুন ভাবে আবার ফিরিয়ে আনলো Steven Moffat আর Mark Gatiss।সেটা মেনে নিতে পারলে আর আমাদের বেলায় দোষ?এইতো সেদিন একটা কাজে কেয়াতলা রোড গেছিলাম,ব্যোমকেশ দার সাথে রাস্তায় দেখা হয়ে গেল।বয়েসের ছাপ পড়লেও শরীরখানি এখনো ফিট।বর্তমান লেখকরা তো তাঁকে আর কাজেই লাগাতে পারলনা। আসলে আমাদের নিয়ে নতুন করে যে কাজ করা যেতে পারে সেটা বর্তমান সমাজ মানতেই চায়না।তাই ব্যোমকেশ দা কে এখনো ধুতি পাঞ্জাবি পড়েই সবার সামনে আসতে হয়।এটা কেন হবে বলতে পারো?তোমাকে যদি এখনকার দিনে প্রতিদিন ধুতি পাঞ্জাবি পড়ে কলেজ যেতে বলে তাহলে তুমি কি যাবে?যাবেনা নিশ্চয়?কিন্তু উনি যদি এখন হটাত করে সুট-বুট-টাই পড়ে সবার সামনে আসেন তখন তোমরা এমন ভাবে নাক মুখ বেকাবে যে কি বলব?কিন্তু একটা কথা ভেবে দেখেছো?শরদিন্দু বাবু যে সময়ের প্রেক্ষাপটে ব্যোমকেশ কে দাঁড় করিয়েছিলেন সেই সময় ধুতি পাঞ্জাবির চল ছিল।কিন্তু তিনি কখনোই বলে দেননি যে বর্তমান পোশাকে ব্যোমকেশ-কে মানাবেনা।বরং গল্প গুলো ভালো করে পড়লে বুঝতে পারবে ব্যোমকেশ দা ছদ্মবেশে বেশ পটু ছিল।যে ছদ্মবেশে পটু তাঁকে এখনকার পোশাকে মানাবেনা| এই যুক্তিটা মানতে পারলামনা।কিন্তু কেউ নতুন করে ভাবতেই রাজি নয়।তাই আমাদের পুরনো কাজ গুলো নিয়েই খুশি থেকে অবসর যাপন করতে হচ্ছে আর কি?
লাফালাফি: কিন্তু এটাতো ‘মানিকদা’ এবং ‘শরদিন্দু বাবুর’ প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য।তাঁদের অমর সৃষ্টি নিয়ে কাঁটা ছেঁড়া না করে সেরকমই রাখা হচ্ছে।
ফেলুদা:সত্যি কি তাই?একটু অন্যরকম করে ভেবে দেখোতো।আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি।তোমরা নিশ্চয় একই স্যার এর কাছে অনেকজন পড়।স্যার সবাই কে একই নোটস দেন।এবার ধরে নিলাম তোমরা সবাই পড়াশোনায় ভালো।এবার পরীক্ষার সময় সবাই একই নোটস লিখলে।কিন্তু সবাই কি একই নাম্বার পাবে? দেখবে তোমাদের মধ্যে কেউ না কেউ একটু বেশি নাম্বার পেয়েছে।তার লেখা উত্তর গুলো পড়ে দেখলেই বুঝতে পারবে,সেও সবার মতোই স্যার যা লিখিয়েছেন সেটাই ফলো করেছে কিন্তু বাড়তি হিসেবে তার মধ্যে দিয়েছে কিছু নিজস্বতা যার জন্য সে এগিয়ে গেছে তোমাদের থেকে।এই নিজস্বতাকেই ক্রিয়েটিভিটি বলে। তাই বলে কি সে স্যার কে অসম্মান করে?একদমই না।বরং তার নিজস্বতা কে স্যার সাদরে গ্রহণ করে বেশি নাম্বার দিয়ে তাকে উত্সাহ যুগিয়েছেন।এই নিজস্বতা টাই আজকালকার দিনে নেই বলেই আমাদের নিয়ে কাজ করার সাহস কেউ দেখাচ্ছেননা।তবে আশা করি খুব জলদি সময় টা বদলাবে আর আমিও নতুন ভাবে দর্শকের সামনে উপস্থিত হব।
লাফালাফি: সত্যি ফেলুদা যুক্তিতে আপনার জবাব নেই। আপনিই সেরা ছিলেন আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।অপেক্ষায় থাকব নতুন ভাবে আপনাকে দেখার জন্য।আর সময় নষ্ট করবনা আপনার।শেষ প্রশ্ন লাফালাফি নিয়ে কিছু বলবেন?
ফেলুদা: এগিয়ে যাও,ভয় পেয়োনা।সাফল্য আসতে বাধ্য।আর এভাবেই সুন্দর ভাবে গুছিয়ে কাজ করে যাও।অন্যায়ের সাথে কোনদিন আপোষ করবেনা।লাফালাফি দীর্ঘজীবি হোক।
লাফালাফি: অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।আজ উঠি তাহলে।
ফেলুদা(নতুন একটা সিগারেট আঙ্গুলের নখে ঠুকতে ঠুকতে বললেন ): তা তোমার ডিটেকটিভ উপন্যাস কতদূর?
আমি একটু থতমত খেয়ে বললাম “মানে”?
ফেলুদা:তুমি ভুলে যাচ্ছ, আমার নাম প্রদোষ সি মিটার ।এত সহজে আমাকে এড়িয়ে পার পাওয়া যায়না।যে কবিতা গুলো লেখ সেগুলোতে লুকিয়ে থাকা একটা গল্প থাকে।যার লেখায় এত রাখ ঢাক সে গোয়েন্দা কাহিনী লিখবেনা এটা কি মানা যায়?কি যেন তোমার সেই কবিতা টা? “রক্ত দিয়ে লিখব আজ পুরনো দিনের স্মৃতি, নাহ! এটা রোমেন্টিক নয়- ময়দান,দিনের আলো বা অন্ধকার, বিকট শব্দে চাঁপা পরা আর্তনাদ- বাকিটা ব্যক্তিগত।” সবাই তো ভেবে নিল ফাঁকা মাঠে রেপ টেপ নিয়ে লিখেছ।সত্যি কি তাই?ময়দান চত্তরে কোন আর্তনাদ চাঁপা দিতে গেলে বিকট শব্দের প্রয়োজন হত একটু বলবে?সত্তরের-
আমি ফেলুদা কে থামিয়ে দিয়ে বললাম,এটা ব্যক্তিগত থাকনা।”সরকার দিদি” জানতে পারলে কপালে দুঃখ আছে।
ফেলুদা: তাহলে থাক। কিন্তু কথা দাও,যেদিন গোয়েন্দা কাহিনী লিখবে আমাকে ডেডিকেট করবে।রাজি?
আমি: রাজি ,বরং আপনি না বললেও সেটাই করতাম।
ফেলুদা: সাবাস শয়তান।
(সমাপ্ত)
পুনশ: (শ্রদ্ধেয় মানিক দা এবং তাঁর অমর সৃষ্টি ফেলুদা,তপেশ ও লালমোহন বাবু দের জানায় সহস্র কোটি প্রনাম।নিছক কাল্পনিক কথোপকথন।কোনো ব্যক্তি যদি এর মধ্যে ভুল খোঁজার চেষ্টা করেন তাহলে?উপকৃত হব।মজা নিন বা ছড়িয়ে দিন।যা ইচ্ছে করুন,তাতে বিশেষ আপত্তি নেই।আমি এবং আমাদের সমস্ত সদস্য বৃন্দ যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল সত্যজিত রে- মহাশয়ের প্রতি। )
Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *