আরো একবার হাতটা ছুঁয়ে দেখ
পর্ব- ৪
বিহানের নম্বরটা ডায়াল করে থমকালো পালক। নম্বরটা ব্যস্ত। এই এক দোষ ওর! কেউ ব্যস্ত থাকলে তাকে আবার ফোন করতে কেমন যেন লাগে ওর! বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়ালো পালক। একটা হাওয়া এসে ঝাপটা মারছে। এটা কি বসন্তের পূর্বাভাস! বসন্ত আজও আসে শুধু পালকের জীবনটাই শীতের সাদা চাদরে ঢাকা। অনেকগুলো কাজ আছে। কিন্তু মন বসছে না পালকের। দুটো চোখ ওকে সর্বদা তাড়া করে। আজ ফোনটা নিয়ে ঘাঁটতেও ইচ্ছে করছেনা। খুব অলক্ষ্যেই ও দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। কত দিন কেটেছে ওর বারান্দায়। টেস্টের পর পড়তে পড়তে ক্লান্ত পালক এই বারান্দা আর হেডফোনে আরাম খুঁজত। ইন্টিগ্রেশন না মিললে কিংবা অরগানিক কেমিস্ট্রি না মিললে এই বারান্দায় বসে থাকত মুখ ভার করে পালক। কখনো বাপী এসে পালকের মাথায় তার স্নেহের পরশ মাখা হাতটা বুলিয়ে দিত। পালক জানত ভুল হওয়া ইন্টিগ্রেশনটা আবার ঠিক হবে। কিন্তু বাস্তবের হিসেব এতো সহজে মেলে না। তাই পালক সব গুলিয়ে ফেলেছে। অহর্ষির আসা যাওয়া এক মুহূর্তে সব ওলট-পালট করে দিয়েছিল। আর কোনো হিসেব মেলেনি। আসলে জীবনটা দুয়ে দুয়ে চার নয়। তাই হিসেবগুলো অগোছালো হতেই পারে। বারান্দার হাওয়ায় ভেসে আসছে পুরোনো স্মৃতি।
* * * * * * * * * * *
কলেজ স্ট্রিটের একদিকে পালক দাঁড়ানো। অহর্ষি এসেছিল। সাথে শ্রেয়া। শ্রেয়ার চোখে সেদিন ঈর্ষা দেখেছিল পালক। শ্রেয়া এসে পালককে বলেছিল, “বিরক্ত করবেনা ওকে!”
পালকের স্থির দৃষ্টি ছিল অহর্ষির দিকে। পালকের হৃৎপিণ্ড যেন খুলে বেরিয়ে আসছিল। অহর্ষি সেদিন শ্রেয়ার কথায় সায় দিয়েছিল। কলেজ স্ট্রিট থেকে কলেজের রাস্তা যেন শেষ হচ্ছিল না পালকের। ওর খুব অচেনা লাগছিল অহর্ষিকে। এই ছেলেটাই তাকে দেখার জন্য দৌড়ে আসত। এই ছেলেটারই মনে হত পালকের থেকে ভালো মেয়ে দুনিয়াতেই নেই। সেই ছেলেটা একবারও তাকালো না আজ পালকের দিকে। চোখ থেকে অঝোরে জলের ধারা পড়ছিল পালকের। মনে হচ্ছিল নিজেকে শেষ করে দেই। কিন্তু কে যেন সেদিনও পালকের হাতটাকে টেনে ধরে রেখেছিল। যতটা সম্ভব চেষ্টা করছিল পালককে খুশী করার। পালক বুঝতে পারছিল। অভিনয়ের আড়ালে পালকের চোখের জলটা বুঝতে বেশী সময় নেয়নি বিহান। হাত ধরে পুরো কলকাতা ঘুরিয়েছিল পালককে। প্রথম ট্রামে ওঠা থেকে শুরু করে বৃষ্টিতে ভেজা সবেতেই সঙ্গী ছিল বিহান। স্ক্রিনে বিহানের নামটা দেখে থমকালো পালক!
(ক্রমশ…)