সৌম্য দা,ও সৌম্য দা….
– আরে পুচকি,বল..কেমন আছিস?কতদিন পর তোকে দেখলাম….তা কবে এলি?
– উফ্,তোমার অভ্যাসটা আর গেলো না,না!কতবার বলবো আমি আর ছোটো নেই।সবার সামনে এভাবে পুচকি বলোনা তো,আমার ভালো লাগে না।
– তুই এখনো কথায় কথায় এতো রাগ করিস?আচ্ছা তাহলে তুই কেনো সৌম্য দা বললি বল?তোকে ও তো কতবার বলেছি দাদা বলবি না।তুই কি অভ্যাসটা পাল্টাতে পেরেছিস, বলতো!
(ছবি – সংগৃহীত)
– দাদা বলবো না তো কি বলবো?দিব্যি তো বিয়ে করে বসে আছো।দাদা তো বলতে চাইনি,একজন ভালো প্রেমিকা হতে চেয়েছিলাম,হতে আর দিলে কই?
– ধুর কি যে বির বির করে বকছিস….
– না,কই!কিছু না তো।ভাগ্যেস তোমায় ডাকলাম,নয়লে তুমি তো মনে হয় চিনতেই পারতেনা না?
– কি যে বলিস না,তোকে চিনতে পারবোনা!সেই ছোট্টো থেকে একসাথে থাকছি।
(ছবি- সংগৃহীত)
– আচ্ছা সৌম্য দা,তোমার সেই আগের বদ অভ্যাস গুলো এখনো আছে?নাকি নতুন বউ এসে সব পাল্টে দিয়েছে?
বৃষ্টি পড়লে এখনো ভিজতে ভিজতে ফুটবল খেলতে যাও?না বউ শাসন করে নিজের কাছে আগলে রাখে?
অফিস পথে বাড়ি ফেরার আগে,চায়ের সাথে সিগারেটের সুখটান টা এখনো দাও,তাই না?
নাকি বউ-এর হাতের চা ছাড়া চলেইনা?
ও….বউ এর জন্য নেশাটা ছাড়িয়েছো,না বলো?
বউ-এর বুঝি,নীল রং পছন্দ!না, মানে আগে তো লাল রঙ ছাড়া কোনো সার্ট গায়ে দিতে না।
আতরের গন্ধ টাও কেমন যেন অচেনা লাগছে।
– যাঃ,তোর সবসময় ইয়ার্কি বল?কি যে বলিস না,লজ্জায় ফেলে দিস।ধুর।
– তাই বুঝি!লজ্জার ও আবির্ভাব ঘটেছে।আগে তো নির্লজ্জের মতো আমার সাথে হাত ধরে অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াতে গো।
– এই পুচকি!কি এত ভাবছিস বলতো?তা হ্যাঁ রে.. প্রেম-এ পড়েছিস নাকি কারো?
– না গো,প্রেমই তো করতে চেয়েছিলাম।সে আর হলো কই?সব ই হল…. শুধু প্রেমটাই হলো না।
আচ্ছা,আমাদের মতো মেয়েদের প্রেমিকা হওয়া যায় না,না!
(ছবি- সংগৃহীত)
– কি যে বলিস না,বুঝিনা।যাকগে,একদিন আসিস না সময় করে, অর্চিতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো।কদিন ছুটি পেয়েছিস?
ও হো,দেখেছিস,সাতটা বেজে গেলো।পুচকি,আজ আসি রে বুঝলি। অর্চিতা কে বলেছি সিনেমা দেখতে যাবো,ও অপেক্ষায় থাকবে। আবার অন্যদিন দেখা হবে,কেমন?আজ চলি রে..। ভালো থাকিস।
– ওহ, হুমম…..।
সৌম্য দা,তুমি বুঝি এখন খুব সংসারি হয়েছো?তাই না!
অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে দেরি হলে তোমার বউ বুঝি রাগ করে?
সে বুঝি তোমার অপেক্ষায় বসে থাকে!
আমার মতো করে তার রাগও নিশ্চয় ভাঙানো হয়,নাকি আর একটু ভালো করে……
ধুর আমি যে কি বলি না,কোথায় আমি আর কোথায় সৌম্য দার বউ।
এইতো এখন সারা রাত ধরে সিনেমা দেখবে,তারপর খাওয়া-দাওয়া।ভালোই তো কাটছে ওদের দিনগুলো।
সত্যি তো তুমি এখন কেনো আমার সাথে সময় নষ্ট করবে বলো?তোমার তো আগলে রাখার মানুষ হয়েছে।
কিন্তু দেখো না দেখো,আমি আর কাউকে পেলামনা।হয়তো বা খুঁজিওনি।তুমি সংসারি হয়ে গেছো,আর আমি এখনো উড়নচন্ডি ই রয়ে গেছি।
জানো সৌম্য দা,এখন বৃষ্টি পড়লে আমার পুরোনো কথা খুব মনে পড়ে,তখন বুঝি তুমি বউ-এর সাথে ব্যস্ত থাকো,তাই না?
আচ্ছা বলোতো কি দোষ ছিলো আমার?
আমি ও তো ভালোবাসতেই চেয়েছিলাম,
আমিও তো আগলেই রাখতে চেয়েছিলাম।
তুমি এটুকুও বুঝতে পারলেনা!সৌম দা?
কেনো সৌম দা?কেনো?
আমি ও তো আরো পাঁচ জনের মতো একজন ভালো প্রেমিকা হয়ে সংসার করতে চেয়েছিলাম।
আমি প্রেমিকা হতে পারলাম না।
আমি আজ ও কারোর প্রেমিকা হতে পারলাম না।
অথচ তুমি দেখো কি সুন্দর ভাবে সংসার করছো।
আগে আমার সামান্য খেলার পুতুল হারালে কাঁদিয়ে ভাসাতাম।কাউকে কোনো জিনিস ছুঁতে ও দিতাম না।
আর আজ সেই আমি সব থেকে প্রিয় জিনিসটাই অন্যকে হাসি মুখে কি সুন্দর দিয়ে দিয়েছি,দেখো।
আর তুমি বলছো আমি নাকি বদলায়নি।
খুব ভালোবাসতাম জানো।ভালোবাসতেই তো চেয়েছিলাম বলো!
কেনো দিলে না?কেনো আমায় ভালোবাসার ভার দিলে না?
ছোটোবেলার বন্ধুরা বুঝি প্রেমিকা হতে পারেনা না, নাগো?
আমি,এখনো তোমার কাছে ছোটোই আছি না?তোমার দায়িত্ব টা নিতে পারতাম না বলো!
তাই বুঝি দাওনি?
(ছবি-সংগৃহীত)
সৌম্য দা……
ওহো দেখেছো,তুমি তো কখন বাড়ি চলে গেছো,আর আমি এখানে একা দাঁড়িয়ে নিজের মনে বকেই চলেছি।
চারিদিকে অন্ধকার,তোমার ছায়াটুকুও কোথাও নেই।
অন্ধকারে কখন যে তুমি অদৃশ্য হয়ে গেছো,টের ও পায়নি।মনে হয়েছে,তুমি আমার সামনেই আছো।
আসলে আমাকে এই ফাঁকা রাস্তায় একা ফেলেই চলে যাবে,ভাবতে পারিনি জানো সৌম্য দা?
ভাবলাম ইয়ার্কি করছিলে হয়তো।
এটাও পড়ুন – প্রাক্তন এর সাথে শেষের সেদিন
ওহো,দেখো,ভুলেই গেছিলাম,আমি তো রোজ একাই পথ চলি।
আমাকে তো একাই পথ চলতে হবে।
কারন আমার প্রেমে পড়া বারন।
আমি তো ছোটোবেলার বন্ধু।
আর ছোটোবেলার বন্ধুরা কখনো কারোর প্রেমিকা হতে পারেনা।কারোর না।বউ তো অনেক দূর।