নীল টিক
পর্ব- ২
উত্তর এল, ”প্রিয়া”।
তখনই ডিপিটা ভেসে উঠল ওই নম্বরটার পাশে, ডিপিটা দেখে আমার শরীরে এক শিহরণ বয়ে গেলো৷
বিবেক বলতে শুরু করল কিছু কথা…
“প্রিয়া হালদার, প্রথম দেখা ক্লাস ইলেভেনের কেমিষ্ট্রি কোচিং-এ, তুই কোচিং-এ প্রায় সব ছেলেরই ক্রাশ ছিলিস৷ কেমিষ্ট্রি কোচিং-এর হোয়াসটঅ্যাপ গ্রুপে তোর সাথে কথা বলা শুরু তারপর ধীরে ধীরে পার্সোনাল চ্যাট, এরমধ্যেই কবে যে তোকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম বুঝতেই পারিনি কিন্তু তোকে ভয়ে কোনোদিনো বলতেই পারিনি কিছু যদি বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায় ৷ সেই কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের পর আর সেরকম যোগাযোগ হয়নি৷ তোর হোয়াসটঅ্যাপের ওই নম্বরটার অ্যাকাউন্টটা হয়তো অফ করে দিয়েছিলিস, সময়ের চাকায় প্যাডেল করে বলতে পারিস ভুলেই গেছিলাম হয়ত তোকে৷”
মোবাইলটা হঠাৎ ভাইব্রেট করাতে ভ্রম কাটল, দেখি ওর আরও চারখানা মেসেজ ইনবক্সে, উপরে তখন ও অনলাইন শো করছে৷ মনের কোনো এক কোটরে লুকিয়ে থাকা এক তীব্র আগ্রহ যেন আমাকে বশীভূত করল৷ একের পর এক মেসেজ করতে থাকলাম ওর মেসেজের উত্তরে৷ হোয়াটসঅ্যাপের এই কথার খেলায় হারিয়ে গেল আজ রাতের আমার মূল উদ্দেশ্য৷ প্রিয়া নামক এক মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে নেশাচ্ছন্ন হলাম আমি৷ রাতের সমস্ত নিস্তব্ধতাকে চিরে ঘড়ির ঘন্টার আওয়াজ মাঝেমাঝেই জানান দিচ্ছে সময়ের৷ ওর কথাগুলো যেন আমাকে নতুন করে বাঁচার রসদ খুঁজে দিল, আমার ওই বেদনাদগ্ধ হৃদয়ে এক নতুন আশার প্রদীপ প্রজ্বলিত হল৷ জীবনকে নতুন করে ভালোবাসতে শেখার এক ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠল৷ হালকা মৃদু স্বরে পাশ থেকে কে যেন বলে উঠল ”মরবি কেন?”
পাখিদের আওয়াজ জানান দিচ্ছে ভোর হয়ে এসেছে, কথা বলতে বলতে সময় যে কখন কেটে গেছে বুঝতেই পারিনি৷ এই কয়েক ঘন্টায় আমার বাহ্যিক পরিবর্তন হয়নি শুধুমাত্র, মনের ভেতরের দুর্বল ইচ্ছাশক্তি পরিণত হয়েছে প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে৷ এ যেন এক নতুন ভোর৷
”বেস্ট অফ লাক ফর ইয়োর ফিউচার লাইফ অ্যান্ড অলসো টুডেস ইন্টারভিউ”— ওর শেষ মেসেজটা সিন করে রিপ্লাই দেওয়ার আগেই তন্দ্রাচ্ছন্ন হলাম আমি৷
ঘুম ভাঙল ঘড়ির ঘন্টার আওয়াজে৷ তড়িঘড়ি উঠে দেখলাম আটটা বাজে, এগারোটা থেকে ইন্টারভিউ৷
নীরস মনটায় আজ যেন খুঁজে পাচ্ছি নতুন স্ফূর্তি৷ শরীরে আজ এক নতুন শক্তি যা জীবন যুদ্ধে আক্রান্ত এক সৈনিককে নতুন করে এগিয়ে যেতে উদ্দীপ্ত করছে৷
তাড়াতাড়ি স্নান সেরে কোনোরকমে কিছু খেয়ে জিনসটা পরতে যাবো হঠাৎ জিনসটার পকেটে শক্ত একটা কী অনুভব করলাম, বের করে দেখি কাল ওষুধের দোকান থেকে আনা সেই ওষুধের শি়শিটা। গায়ে যত জোর ছিল সেই জোরে শিশিটাকে ছুঁড়ে জানলা দিয়ে ফেলে দিলাম৷
বাসে বসার জায়গা পাওয়ার পর পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম এতক্ষণে আর তাড়াহুড়োতে মোবাইলটার প্রতি নজর দেওয়ার সুযোগ হয়নি৷ সাথেসাথেই হোয়াটসঅ্যাপটা খুলে ওর ইনবক্সটা দেখলাম, না, কোনো মেসেজ আসেনি আর৷ রাতের সেই ওর মেসেজটাই আমার সিন করে রাখা আছে, ওটাই লাস্ট৷ লাস্ট সিন দেখাচ্ছে সকাল ৭টা৷ গুড মর্নিং পাঠানোর পর, এক অজানা আগ্রহে পৃথিবীর সেই আদিমতম তিনটি শব্দ দ্বারা আমি আমার ভালোবাসার প্রস্তাব রাখলাম, নেট অন আছে, মেসেজ সেন্ড হওয়ার পর একটা টিক দুটো টিকে পরিণত হল৷ মেসেজটার পাশে সময় বলছে ১০টা বেজে ১৫ মিনিট৷
(চলবে…)