সেদিন ফিরতে একটু বেশিই রাত হয়ে গিয়েছিল। এসে দেখি বাপির ঘরে কারা যেন এসেছে। আমি খানিক দেখে মনে মনে ভাবলাম এতো রাতে আবার বাপির ঘরে কারা এরা? মা কে ডাক দিতেই মা এসে বললো – তোর জন্য একটা সম্বন্ধ এসেছে রে খোকা। নকুলগঞ্জের মেয়ে। পাত্রী দেখতে সুশ্রী, বাপের একমাত্র মেয়ে।
মায়ের কথায় তখন রাগ দেখানরও সময় আমার হাতে নেই, খুব টায়ার্ড লাগছিল, বেশি কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা দিলাম।
মায়ের গলা শোনা যাচ্ছিল – ও খোকা, দুটো মুখে কিছু দে, তোর জন্য আমিও না খেয়ে বসে আছি.. খোকা… ও খোকা। দরজার কাছে কিছুক্ষন চেঁচামেচি করার পরও দরজা না খোলায় অগত্যা মা ফিরে গেলো।
মাঝরাতে খুব খিদে পাওয়ায় ঘুম ভেঙে যায় আমার। উঠে দেখি ঘড়িতে তখন রাত প্রায় ১২ টা ১৫। উঠে দরজা খুলে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায়। দেখি রান্নাঘরে ফ্রিজে কিছু আছে কি না। ফ্রিজে কিছু ফল আর মিষ্টি রাখা আছে। ভালো করে দেখতেই দেখি মা আমার জন্য খাবার রেখে দিয়েছে ফ্রিজে। বার করে ওভেনে গরম করে খেয়ে নিলাম।
এরপর আর ঘুম আসছিল না কিছুতেই। ঘরের লাগোয়া ব্যালকনিতে গিয়ে একটা সিগারেটে লম্বা টান মারলাম।
মায়ের পছন্দ করা পাত্রীর কথা ভাবতে লাগলাম, নকুলগঞ্জ এর নাম শুনেছি কিন্তু কখনও যায় নি।
যাইহোক, রাত কাটিয়ে সকাল হলো। মায়ের চেঁচামেচি তে ঘুম ভাঙলো, এ খোকা তুই কি সারারাত এখানেই ঘুমিয়েছিলি?
এর মাস দুয়েকের ভেতর আমার ইচ্ছা – অনিচ্ছার বলি দিয়ে বিয়ে সুসম্পন্ন হলো।
বউ কে কিভাবে রাখতে হয় আমার জানা ছিল না, তবে বেশ ভালো মেয়েটি।
বিয়ের কয়েকদিন কাটিয়ে একদিন মাঝরাতে ঘুম ভেঙে দেখি বউ আমার খাটে নেই। আমি রীতিমতো ভয় পেয়ে সারাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজি,… বালিশের নীচে – খাটের তলায় – কার্নিশে.. না! তবুও পেলাম না খুঁজে। মনে মনে ভাবলাম বউ কি তবে আমার সাথে এই মাঝরাতে লুকোচুরি খেলছে? আমি ডাক দিলাম – ও বউ, বউ… দেখো লক্ষীটি এতো রাতে এমন করে না সোনা.. বেরিয়ে এসো, আমি এতোরাতে চোরপুলিশ খেলবো না।
না! তবুও কোনো সারাশব্দ নেই। বাধ্য হয়েই ঘর থেকে বার হলাম মা কে ডাকার জন্য। দেখি দরজা খোলা। ব্যালকনির দিকে চোখ যেতেই যা দেখলাম তাতে নিজের চোখ কেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। দেখি বউ আমার পাশের বাড়ির মিত্তিরদের নিম গাছ টাতে বসে বসে দোল খাচ্ছে, চুল গুলো সব হাওয়ায় উড়ছে, ঠ্যাং দুটো কি বিশাল লম্বা… । আমি ভয়ে আর এগোতে পারলাম না, ওখানেই মূর্ছা গেলাম।
(ক্রমশ)
–অরুণিমা