পেত্নী বউয়ের খপ্পরে (শেষ পর্ব)

সেদিনের পর থেকে আমার মনের মধ্যে একটা সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। বউ টা কে দেখলেই না জানি কেন একটা অজানা ভয় চেপে বসছে।
ঠিক করলাম মা কে বলবো এই কথা গুলো, কিন্তু তার আগে আমাকে নিজেকে একটু গোয়েন্দাগিরি করতে হবে।
সেদিন অফিস থেকে ফিরে এসে শুনলাম বাপির নাকি শরীর টা খারাপ। খাবার টেবিলে মায়ের মুখ থেকে আরেকটা কথা শুনলাম – ওপাড়ার নন্দী পোদ্দারের ছোটো বাছুর টাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে দেয়ে উঠে ঘরে এসে শুলাম।
কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই, তবে যখন ঘুম টা ভাঙলো দেখি রাত্রি ১ টা ১০।
আজও দেখি বিছানায় বউ নেই। বুকের ভিতরটা তে কেমন যেন ভয় ভয় করছিল, তবুও সাহসে ভর দিয়ে ঘরের বাইরে বেরোলাম। ব্যালকনির দিকে পা বাড়ালাম অতি সন্তর্পণে। নিম গাছটার দিকে চোখ যেতেই দেখি বউ, বসে আছে। ভয়ে পিছন ফিরতে যাব, এমন সময় আমার পায়ে লেগে একটা গামলা পড়ে গেল ঝন করে।
বউ দেখি আমার দিকেই চেয়ে আছে। চোখে সে কি চাহনি, আমি বাপের জন্মেও ভুলব না। ও মা গো!!
চেঁচাতে গিয়েও মুখ দিয়ে কিছু আওয়াজ বের হলো না। ততক্ষনে বউ এসে আমার সম্মুখে।
এরপর জ্ঞান হারালাম।
পরের দিন চোখ খুলতেই দেখি মা, আমার কপালে জলপট্টি দিচ্ছে।
— খোকা তোর গা তো একেবারে পুড়ে যাচ্ছে।
চোখ টা প্রচুর জ্বালা করছিল, সবকিছু অস্পষ্ট দেখাচ্ছিল। তবুও দেখলাম মায়ের পিছনে বউ আমার দাঁত খিঁচিয়ে কি যেন বোঝানোর চেষ্টা করছে।

কিছুদিন পর জ্বর ছাড়তেই, আমি সুযোগ খুঁজতে লাগলাম কখন মাকে সব খুলে বলি।
দুপুরে বউ ঘুমায়, সেই সুযোগটা কাজে লাগালাম।
মায়ের ঘরে গিয়ে দরজা টা বন্ধ করে দিলাম। মাকে বললাম – মা, তোমার সাথে আমার কিছু দরকারী কথা আছে।
জানি না মা কি ভাবলো, আঁচল চেপে হাসতে লাগলো।
বললো – খোকা আমার বড়ো হয়ে গেছে!
দাঁড়া দাঁড়া, আগে মিষ্টি মুখ করায় বউমা কে তারপর শুনব ক্ষণ।
এই কথা বলেই মা গাল ভরা হাসি নিয়ে রান্নাঘরের দিকে যেই না পা বাড়াতে যাবে, আমি ওমনি মায়ের হাত টা খপ করে ধরে বললাম – মা, আমার সোনা মা, তুমি যা ভাবছ তা নয়, এ অন্য কেস।
আমার চিন্তা চিন্তা মুখ দেখে মা বললো – কি অন্য কেস খোকা?
সবকিছু খুলে বলার পর মা বললো – সে কি রে!! এবার তবে কি হবে?? হে দুগগা মা রক্ষে করো আমাদের।
দেখি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে স্বয়ং বউ।
আমি মায়ের হাত টা শক্ত করে ধরলাম।
বউ বলছে – যখন আমার আসল রূপ দেখেই নিয়েছিস তখন শুনে রাখ,- আমি নকুলগঞ্জের অশত্থ গাছের পেত্নি। আমার নাম কমলাপুরি।
ভয় নেই তোদের কিছু ক্ষতি আমি করব না, তবে এই সংসার করার বড়ো লোভ, তার উপরে বর টা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। বলেই লজ্জা লজ্জা মুখ করে তাকালো আমার দিকে।
বাবাগো!! একে তো পেত্নি তার উপর আবার লজ্জা লজ্জা চাহনি.. ইসস কি বিদঘুটে…। দপ করে চোখ দুটা বন্ধ করে দিলাম।

পেত্নির সাথে ঘর চাট্টিখানির কথা নয়। রাতে বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকি আমি। পেত্নি বউ তখন আমারে পিঠের ওপর সুড়সুড়ি দেয়, আর খিলখিলিয়ে হাসে। উফফফ!! আবার মুখের সেই আঁশটে গন্ধ..!!
তবে আমি আর চুমু খেতে যায় নি…।

নাহ! এভাবে আর কতোদিন চলবে? মা আর আমি ঠিক করলাম করাল ওঝা কে খবর পাঠানোর।
করাল ওঝা বিরাট বড় একজন তান্ত্রিক। তারাপিঠের সাধক। লোকে বলে তারাপিঠে নাকি সে একবার করলা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়, সেই তখন থেকে আমাদের এখানে।
যাইহোক, করাল ওঝা কে খবর দেওয়ার পর একদিন সন্ধ্যায় সে এলো।
ওঝা তার ঝুলি থেকে বার করলো একটা নেবু আর কিছু লাল ধানি লঙ্কাগুড়োর প্যাকেট।
মা তো সমানে ঠাকুর নাম জপ করে যাচ্ছে, বাপি ঘর থেকে বেরোতে পারে না, তাই বিছানাতেই আছে। আমিও ভয়ে জড়সড়।
দশ মিনিট ধরে কিসব তুংতাং করার পর করাল ওঝা হুঙ্কার ছাড়তে ছাড়তে আমার সহধর্মিণীর ঘরের দিকে এগোতে লাগলো।
আমার পেত্নি বউ ততক্ষনে সবই টের পেয়েছে।
গজরাতে গজরাতে বলছে – তুই কেন এসেছিস রে. … দেখ এটা আমার সংসার, আমাকে সংসার করতে দিবি নে নাকি একটু শান্তিতে?
ওঝা – তোর সংসার করা ঘোচাচ্ছি আমি।
এই বলে করাল ওঝা দাঁত ভাঙা কিসব মন্ত্র উচ্চারণ করে একমুঠো ছাই ছুড়ে দিলো বউ য়ের দিকে। পেত্নি বউ তখন আহা জ্বলে গেলুম পুড়ে গেলুম এই আর্তনাদ করতে করতে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।
যাক হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। মা ইষ্ট নাম জপ করা ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলো – আপদ বিদায় হলো, দুগগা দুগগা…।
তবুও কেন জানি না আমার মনের কোণে কেমন কেমন করছিল, .. সে পেত্নি হলেও বউ তো ছিল, কতো খরচ করে বিয়ে করেছিলাম.. ফুলশয্যা তে কতো ফুলের খরচ করেছিলাম…!!

এই ঘটনার মাস ছয়েক পর, একদিন সন্ধ্যের সময় অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এসে দেখি দরজার বাইরে কয়েকজোড়া জুতো।
মা কে জিজ্ঞেস করতেই মা বলে – খোকা, তোর সেজ মামা তোর জন্য একটা সুশ্রী পাত্রী দেখেছে…
মায়ের কথা শেষ না হতেই আমি মূর্ছা গেলাম.. ।।।

(সমাপ্ত)

–অরুণিমা

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *