।। বসন্তের কালবৈশাখী ।।
আমার গ্রীষ্মের বাসন্তী,
বাতাসে বসন্তের আমেজ এখন প্রায় ঘুচেই গেছে। পলাশে মাখা, আবির রাঙানো সেই স্বপ্নের পথে এখন ভ্যাপসা গরম, ঘরের ভিতরে তোর ভাবনায় জর্জরিত ঝোড়ো আমি; তোর কালবৈশাখী।
আজ অনেকদিন পর তোর দরজায় কড়া নাড়ার জন্য চিঠি লিখতে বসলাম আমি। আমাদের প্রথম বসন্তে তোর আমাকে দেওয়া সেই পোড়ামাটির বাক্সে আজও আমি তোর নামে নিয়মিত চিঠি জমা পড়ে, যার সাক্ষী থাকে এই চার দেওয়াল, এই আটকানো ভালোবাসা আর তোর ঘন কাজলে মাখা ভাসমান চোখের ছবি। দেখেছিস, আমাকে তোর মনের দরজা খুলে দিনের সমস্ত কথা উজাড় করে দেওয়ার সেই অভ্যাসটা আজ হঠাৎই আমাকে পেয়ে বসেছে। তাই আজ তোকে আবারও পাগলী বানানোর উদ্দেশ্যে এ চিঠি।
তোর মনে আছে জৈষ্ঠ্যের সেই সোনালি বিকেলে গঙ্গার পাড়ের চা কিংবা সেই সিগারেটের কাউন্টার নিয়ে আমাদের খুনসুটি, কিংবা তোর সেই নাটকীয় ভঙ্গিমায় বলা, “এই ধোঁয়াকে সাক্ষী রেখে জীবনের সকল ধোঁয়াশা কাটাবার শপথ করলাম।” জানিস, গোল্ড ফ্লেকের সেই প্যাকেটটা আজও টেবিলের ওপরই পড়ে রয়েছে…
এক ঝোড়ো গ্রীষ্মের পড়ন্ত বিকেলে আমরা সাজিয়ে ছিলাম বেমানান এক ভিন্ন প্রেমের বাস্তব। যে বাস্তবে থাকবে, বৈশাখী ভোরে গঙ্গার ঘাটে মর্নিং ওয়াক, জৈষ্ঠ্যের তপ্ত দুপুরে তোর আইসক্রিমের আবদার… ভেবেছিলাম গ্রীষ্মের ঝড় শুধুই গড়তে জানে নতুন সব স্বপ্ন গাথা; যে স্বপ্নে বাস্তব আর রূপকথা মিলেমিশে একাকার হয়ে তৈরী করে ভিন্ন ভালোবাসা।
সব ভাবনা যে সত্যি হয়না তা বুঝিয়ে দিল বছর দুয়েক আগের সেই মাতাল কালবৈশাখী। সেদিন তোর অবিশ্বাসের সূক্ষ্ম ফাটলটা বিশাল আকার ধারণ করল। তুই মানতেই চাইলি না যে এই মনের গুপ্তচর হওয়ার অধিকার অসময়িনী আগেই আদায় করে নিয়েছে, তাকে জড়িয়ে ধরেই উন্মত্ত গ্রীষ্ম কাটাবার স্বপ্ন দেখেছি আমি। এ মনে তার স্থান সেই ঘামে ভেজা রুমালের উগ্রতার মতো…
তোর সমস্ত অভিযোগের উত্তরগুলো অসময়ের বৃষ্টির মতোই জানাতে চাই তোকে… তবুও মনের ভিতরের একরাশ অভিমান প্রতিবার রুখে দিচ্ছে বৃষ্টির পরের সেই সিক্ততায় ভিজতে। তাই এক পৃথিবী লিখব ভেবেও, একটি পাতাও শেষ হলনা…
তোর নরম আঁচলে বাস্তব বোনার স্বপ্নটা আমি আজও দেখি। চল না সব ভেঙ্গে দিয়ে আবার নতুন করে স্বপ্ন গড়ি…
ইতি,
তোর পুরোনো প্রেমের নতুন কালবৈশাখী