|| বৃষ্টি নামার পরে (প্রেমিকের উত্তর) ||
সবে শীতটা গেছে, তবুও হালকা ঠাণ্ডাভাবটা বোধহয় এখনো কোনো ব্যর্থ প্রেমিকের মতো শীতকালটাকে ফিরে পাওয়ার আশায় বসে আছে। পার্কের এদিকটা খুব শান্ত, স্যাঁতস্যাঁতে, কেমন যেন বেশ একলা একলা একটা গন্ধ আছে। কুয়াশাটা একটা অদ্ভুত গতিতে ভেসে বেড়াচ্ছে লেকের একদিক থেকে আর একদিকে যেন কোনো মিছিলে যোগ দেবে। অনেকখানি জায়গা বেশ অস্পষ্ট করে রেখেছে। আমাদের জীবনেও এমন অনেক জায়গা আছে, যেগুলো অস্পষ্ট থাকা দরকার। কারণ ওগুলো খুব দামী, খুব কাছের, শুধু অসহায় ভাবে ঘুরে বেড়ায়। শুধু ছুঁয়ে থাকা যায়, ধরে রাখা যায়না—
দেখেছো তো এখনো সেই কেমন আমি ছন্নছাড়া type, আমি তোমার চিঠি পেয়েছি। চিঠিটা পড়ার আজ অনেক বসন্ত পর আবার চোখের অলিগলিতে হঠাৎ বৃষ্টি নেমেছিল। আমার উত্তরগুলো আমার মনের সদা ব্যস্ত শহরেই লুকানো থাক কারণ তোমাকে অভিমান করা সাজে, আমায় ভালোবাসা নয়। পারলে একটু মুখ ভার করে, নাকের ডগায় একগাদা রাগ নিয়ে পড়ে নিও। “হাহ্, আড়ি তোমার সাথে” —তোমার ওই অভিমান করে এই কথাটা বারবার করে আমাকে শোনানোটা সত্যিই এখন কোনো ভুলে যাওয়া গলি। এখনো মনে আছে, আমি কিছু খেতে চাইতাম না আর তুমি রোজ আমার জন্য কিছু না কিছু বানিয়ে আনতে নয়তো বকা দিয়ে খাওয়াতে, আবার তুমি যখন বলতে যে চলো আজ বৃষ্টিতে ভিজবো, তখন আমি কিছু না কিছু অজুহাত দিয়ে কাটিয়ে দিতাম। তারপর সেই যথারীতি নাক ফুলিয়ে বসে থাকতে আর আমি চিনেবাদাম নিয়ে গিয়ে বলতাম, “এটা খেলে মাথা ঠান্ডা থাকে, সাথে মাথায় বুদ্ধিটাও আসে”। ব্যস আর কি! তারপর সেই বড়ো বড়ো নখ নিয়ে… আরে বাবা বেশি বৃষ্টিতে ভিজলে যে ঠান্ডা লেগে যেত , আরে গানটা শোনোনি? “তুমি বৃষ্টি ভিজো না ঠান্ডা লেগে যাবে…” উফফ্, সে এক দিন ছিল, তোমার সবকিছুই মনে আছে না? আমিও না ভুলিনি গো। কিছু শুধু অল্প গানের অন্ধ কলি দিয়ে সাজিয়ে রেখেছি। হ্যাঁ, হয়তো আমাদের সম্পর্কটা সত্যিই অদ্ভুত ছিল। কিছুটা রাগ, কিছুটা অভিমান, কিছুটা তোমার ভালোলাগা… আমার তরফ থেকেই বোধহয় ভাবনাগুলো র্যাকবন্দী করে রেখেছিলাম। আসলে আমি খুব ভয় পেতাম যদি আমি তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলি? আমি তোমাকে কষ্টে দেখতে পারতাম না গো।
এখনো মনে আছে আমি যদি দু’ঘন্টার জন্য offline থাকতাম না বলে, কি পরিমাণ তুমি রাগ করে থাকতে! বাপরে! এত্ত রাগ! পুরো বাচ্চা পাগলি আমার। সরি, ‘আমার’টা বোধহয় এখন সম্ভব নয় আর। জানো এখনো সেই পার্কের বেঞ্চটাতে বিকালবেলায় শালিক পাখিটা আসে, আরে সেই পাখিটা গো যার জন্য তুমি রোজ পেয়ারা নিয়ে আসতে। জানো ও এখনো আসে, বেঞ্চের সামনে উঁকিঝুঁকি মারে বোধহয় তোমায় খোঁজে। তারপর অনেকক্ষণ পর মনখারাপ করে চলে যায়। এখনো জানো বিকালবেলায় সেই ফড়িংগুলো ঘাসের উপর উড়ে বেড়ায়, ভাবে হয়তো দর্শক হিসাবে কোনোদিন হয়তো তুমি আসবে। আমিও যে শুধুমাত্র দর্শক, তোমার চোখের, তোমার হাসির, তোমার ঠোঁটের, তোমার সবকিছুর… কিন্তু আমি জানি তুমি যেখানে গেছো সেখান থেকে ফিরতে হয়তো…
ইতি,
তোমার অসম্পূর্ণ প্রেমিক
সন্ধে নামলো, ক্লান্ত নাবিকের মতো এবার সবার ঘরে ফেরার ফেলা। হালকা ঠাণ্ডা বাতাসটা হঠাৎ থমকে গেল, আকাশটা কালো রঙে কেউ যেন ভরিয়ে দিয়েছে। সেই ভুলে যাওয়া গলিতে এবার বোধহয় হঠাৎ বৃষ্টি নামলো। পার্কের কোণের দিকে একটা লোক ঠায় বসে আছে, বৃষ্টিতে ভিজছে, হাতে ধরে থাকা কাগজটা ভিজে নেতিয়ে যাচ্ছে। তবুও পালিয়ে আসছে না, বোধহয় এই বৃষ্টির জন্য শতবর্ষের অপেক্ষায় ছিল। ধীরে ধীরে তার চোখ বুজে এলো, চামড়াটা ফ্যাকাশে…