রোজিনা

Rojina

আমি রোজিনা। বিধান নগরের ফেলাট বাড়িতে আমি কাজ করি। আমার বাড়ি ছিল বীড়ায়। অনেক ছোট বয়সেই বউদি আমায় নিয়ে আসে এই ফেলাটে। তবে থেকে দাদাবাবু, বউদি, তিন্নি আর মুন্নিকে নিয়ে আমার সংসার।
মুছলমান হওয়ায় কালী পুজো কখনো পালন করা হয়নি। তবে আমি দেখতাম আমাদের বামুন দিদি এই দিন উপোস থেকে মন্দিরে পুজো দিতো, বলতো এতে নাকি সংসারের ভালো হয়। মা নাকি তুষ্ট হন। সেই একবার আমায় ডেকে মুখ মানুর মা এক ডোঙা-খিচুড়ি দিয়েছিল। বলেছিল পেট পুরে খাস আর এই দিন বামুন দিদি বলত চুল খোলা রাখতে নাই তালে নাকি ভূতে ধরে। আচ্ছা সত্যিই ওই দিন উপোস থাকতে হয়? কই বউদি তো উপোস দেয় না! এখন কালী পূজোর দু’দিন আগে থেকে আমাদের ফেলাটে ফাংশন হয়। ফাংশনে তিন্নি নাচে। তাই আমার অনেক কাজ। সব ঠিকঠাক নিয়েছে কিনা দেখা, শেষ সময়ে যদি ভুলে যায়। বউদি তো ফেলাটের পুজোর প্রেসিডেন্ট। তাই এই ক’দিন এসব দেখতে পারবেন না। তাছাড়া ওই পুজোর জন্য খাওয়ানো হয় তিন দিন ধরে। না মানুর মায়ের মতোন খিচুড়ি প্রসাদ হয়না! বউদি বলে ওসব নাকি বাচ্চারা খায়না তাই ফ্রায়েড রাইস আলুর দম, আরও কত কি! তারপর রাতে দাদাবাবু আর ফেলাটের আরও কয়েকজনের খাবার রান্না করতে হয়। আসলে বতসরকার দিনে একটু আনন্দ না করলে চলে না। তবে পুজো চলাকালীন অনেক প্রতিযোগিতা হয়, আমিও নাম দেই আর তিন্নি মুন্নির সাথে বাজি পোড়াই।
তবে খেয়াল রাখতে হয় তিন্নি মুন্নির জামা যাতে না পুড়ে যায়। সেই গত বারে তুবড়ির আগুনের ফুলকি এসে পড়েছিল মুন্নির গায়ে। আমি মুন্নিকে বাঁচিয়েছিলাম তবু বউদি আমায় খুব বকেছিল। বলেছিল আমার মন নাকি অন্য দিকে! আচ্ছা আমার কেনো মন অন্য দিকে থাকতে নেই?
তবু আমি বউদিকে খুব ভালোবাসি। বউদি আমায় থাকতে দিয়েছে, অনেক গুলো টাকা দেয় আমার বাড়িতে সেই টাকায় ভাই পড়ালিখা করে। ও ফেলাটের পুজোয় আমার দাদা-বউদি নতুন জামা দেয়। আমিও মুন্নির সাথে বাজি পোড়াই। মুন্নি আনন্দ পায় খুব। আচ্ছা বউদিরা এতো টাকা পুড়িয়ে নষ্ট করে কেন?
ওহ কালী পুজো তো এসেই গেল! যাই ফেলাটটা সুন্দর করে সাজাই। তোমরা সবাই খুব মজা কোরো।আর তাই তো আমার আরো অনেক রোজিনা এখনো বসে,একমুঠো আলোর আশায়…

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *