রোদ-জ্যাকেট
প্রিয় বন্ধু,
আজ অনেক দিন পর আবার চিঠি লিখতে বসেছি। পাক ধরা চুলে আজ অনেক স্মৃতি। এই তো প্রেমের সপ্তাহের শুরু। তোর আবার প্রেমে গভীর আপত্তি ছিল। বলতিস ভালোবাসা! তাই না হয় হল। ভালোবাসার সপ্তাহ। পঁচিশ বছর আগের আমাদের বিচ্ছেদের সপ্তাহ। শীত মানে অন্যের কাছে যা আমার কাছে উল্টো।
শীত আমায় বসন্ত দিয়েছিল আর বসন্ত প্রত্যাখ্যান। পাতা ঝরার দিনে আমাদের প্রথম দেখা! মনে পড়ে কি? টিউশনের নোটস নেওয়ার নাম করে আমার বাড়ি আসা অথবা আমার দেরি করে আসার সুযোগে “এখানে জায়গা আছে বলা”। তার মধ্যেই মনে বসন্ত এসেছিল। তুই আসবি বলে অবিন্যস্ত মেয়েটাও কাজল পড়ছিল বা অঙ্ক কোচিংয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো চুড়িদারটা তুলে রাখছিল। আচ্ছা! তোর মনে আছে আমি ক্যালকুলাস পারতাম না বলে তুই শীতের দুপুরগুলোয় আসতিস আমার বাড়ি। ছাদে আমরা ইন্টিগ্রেশনের সাথে কাটাকুটি খেলতাম। কাটাকুটি খেলত আমাদের চোখও। তারপর দুজনেই শীতের নরম রোদ মেখে নিতাম। বলা হয়নি দুজনকে কিছুই। কিছু কথা চোখেই পড়ে নিতাম। বলতে বড্ড ভয় হত! যদি তোর মন পড়তে না পারি! তুই হয়তো নিছক বন্ধুই ভাবিস!
আমাদের ঘোরার পথও ছিল সীমিত। গলির মোড় থেকে আড়াল হওয়া। বছরের প্রথম দিন তোর সাইকেলে চড়ে একটু দূরে হারানো।
তারপর একদিন তুই বলেছিলি “অঙ্ক কোচিং শেষে কথা আছে।” তোর মনে আছে? সেদিন আমার হলুদ চুড়িদার, চোখে হালকা কাজল, খোলা চুল! তুই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েছিলি! বলেছিলি, “আগে এই রূপ দেখলে শ্রীর প্রেমে পড়তাম না”। আমার পৃথিবী তখন টলমল। না, হাসি মুখে সরে এসেছিলাম। তোর হাতের লেখা খারাপ বলে প্রেমপত্রটা লিখতে কষ্ট হয়েছিল খুব। তারপর তোকে আর শ্রীকে প্রায় দেখতাম তোর সাইকেলে। আমার বিয়েতে যখন এলি সেদিন শুনলাম শ্রী তোকে ছেড়ে চলে গেছে। শ্রীর কথা শুনে আমি তোকে বলেছিলাম, “শ্রীর বদলে আমি হলে কেমন হত!”
সেদিন এসে তুই বললি, “ভাগ্যিস তুই শ্রী নোস”। তখন আমি বিয়ের সাজে! তবু যেন মনে হচ্ছিল একবার বল ভালোবাসি। বিয়ের সাজ লগ্ন সব বৃথা। বলিসনি! অনেক কথা বলা হয়না! থেকে যায়। মনকেমনটা কাটাকুটি খেলে। হারিয়ে যায় আমাদের ছাদগুলো, টিউশন, আর প্রিয় মানুষগুলো। বিয়ের পরেও তাকে সবটা দিতে পেরেছি বলবো না। হয়তো তখন মানিয়ে নিতে হয় বলেই মেনে নিয়েছি। আচ্ছা, এখনো এই প্রেমের মরশুমে আমাদের সেই দিনগুলোর কথা মনে আছে। আমাদের শীতের সেই “রোদ-জ্যাকেট”-এর কথা। তুই বলতিস ছাদটা আমাদের রোদ জ্যাকেট। আর
আজ পঁচিশ বছর বাদে আবার পত্রালাপ। শুধু একটা কথাই জানতে চাই, “আমাদের গেছে যে দিন, একেবারেই কি গেছে? কিছুই কি নেই বাকি!”
ইতি,
তোর একতরফা প্রেমিকা