ভুবনডাঙার ইতিকথা
( ১ )
সাগরেদ— ‘সর্দার, আরে ও সর্দার! রাত তো অনেক হলো, এবার যে বেরোনো দরকার।’
ডাকাতসর্দার— ‘ধুররর্! আমি এখন ঘুমোবো, আমি এখন নাক ডাকবো। তুই এখন দুর হ্ দেখি, যত্তসব মেকি মেকি।’
(তাঁবুর বাইরে বেরিয়ে ডাকাতের এক সাগরেদের ঘোষণা)
সাগরেদ— ‘ভাইসব, আজ মা কালীর আদেশ নেই, তাই সর্দারের আজ ডাকাতিতে মন নেই।’
(দলের মধ্যে একে-অপরকে ফিসফিসিয়ে)
সাগরেদ—
কেউ কেউ – ‘ভাই সর্দার কি বললো। তবে কি ডাকাতির সময় ফুরোলো?
আবার কেউ কেউ – ‘সর্দারের একি হল? তবে কি সর্দার সন্ন্যাস নিল?’
(সবাই একসাথে )
সবাই— ‘এ কেমন সর্দার? নেই কোনো মোটা গোঁফ,
গোঁফ না থাক, তবে তেজ থাকা দরকার—
কিন্তু সর্দারের একি হল, একি হল, একি হল!
ডাকাতিতে মন নেই, লুটপাট করে না,
সারাদিন ঘুম আর খাওয়া ছাড়া আর কিছু বোঝে না,
তা হলে এখন কি হবে?
কি হবে, কি হবে, কি হবে…’
( ২ )
(একজন বয়স্ক জমিদার, হাতে খাতা পেন্সিল, চোখে চশমা। নৌকোয় করে ভ্রমণে বেরিয়েছেন বোধহয়। আনমনে, একমনে প্রকৃতি দেখছেন মনে হয়।)
জমিদার— ‘আরে মাঝি, আরে ও মাঝি। এটা কোন জায়গা? চারিদিকে গাছপালা। চারিদিকে এত পাখি, ফুল ফল। আরে ও মাঝি, মাঝি শুনতে পাসনা নাকি, এটা কোন জায়গা এবার তো বল।’
মাঝি— ‘কত্তা, এটা ভুবনডাঙা। এখানে চারিদিক শুধু গাছপালা দিয়ে ঘেরা।’
জমিদার — ‘তাহলে অপেক্ষা কিসের? নৌকাটা লাগাও এখানে খানিক দের। ঘুরে দেখি, সবটাই এতভালো, নাকি চোখের ফাঁকি।’
মাঝি— ‘না কত্তা, খবরদার না। এটা বিখ্যাত ভুবন ডাকাতের আস্তানা। এখানকার জমিটা তারই, তাই সবাই এখানে আওড়ায় তার শেখানো বুলি।’
জমিদার— ‘হোক সে ডাকাত বড়-সড়, তাই বলে ভয়ে হয়ে থাকবো জড়োসড়ো? মাঝি, তুমি লাগাও নৌকা ঘাটে, যদি আসে যুদ্ধ করতে তবে আমিও দেব ধরিয়ে সপাটে।’
…আহা কি সুন্দর সে জায়গা।সেখানে ফুল ফোটে রোজ, সেখানে পাখি গান করে, সবুজে বুজে আসে চোখ, সেখানে প্রকৃতি যেন উচ্ছ্বসিয়া ওঠে। এই সবুজের মাঝে গড়ে তুলবো এক শিক্ষার মুক্ত প্রাঙ্গণ, এখানেই তৈরি হবে একদিন শান্তিনিকেতন।
( ৩ )
সাগরেদ— ‘সর্দার সর্দার, এইমাত্র খবর পেলাম, একজন আগন্তুক করেছে প্রবেশ অনধিকার, সে বলছে আমাদের জায়গা করবে অধিকার। তাকে কি থামানো আমাদের দরকার?’
ডাকাতসর্দার— ‘কে সেই মূর্খ অর্বাচীন? সে কি বুদ্ধিহীন? সে কি জানে না এটা কার এলাকা, কোন সাহসে সে এখানে আসে একা একা?’
সাগরেদ— ‘তবে কি লোকটি আঁটছে কোনো ফন্দি? আমাদের এখনই উচিৎ ওকে করা বন্দী।’
ডাকাতসর্দার— ‘যা তবে ধরে আন ব্যাটাকে, সব ফন্দী দেব চটকে।’
সাগরেদ (মনে মনে)— যাক বাবা বাঁচা গেল, শেষমেষ সর্দারের ঘুম ভাঙলো। এবার হবে আক্রমণ, সবাই এবার টের পাবে মজাটা কেমন?
(৪)
জমিদারকে করা হলো বন্দী। ডাকাতসর্দার খুশ, কারণ সে চটকে দিয়েছে জমিদারের ফন্দী।
ডাকাতসর্দার— ‘কি বাবু, কোথা থেকে আসা হচ্ছে? জানিস এটা কার এলাকা, এখানে আমার অনুমতি ছাড়া কেউ ঢোকে না একা।’
জমিদার— ‘আমি ব্রাহ্মণ জমিদার। আমি সত্যি বলতে ভয় পাই না, এই জমিটা আমার দরকার। কতো দাম লাগবে বল্? সবরকম দাম দিতে প্রস্তুত এই জমিদার।’
ডাকাতসর্দার— ‘তোর সাহস তো কম নয়, তুই আমায় তুই-তোকারি করিস? তোর কি প্রাণে নেই ভয়?
জমিদার— ‘সত্যকে যারা ভয় পেয়ে এসেছে তারাই আসল ডাকাত, আমি সত্যিটাকে মেনে নিতে জানি তাই আমি ডরাই না কাউকেই, সে তুমি যতই হও না কেন বড় ডাকাত।’
সাগরেদ— ‘কি সর্দারের মুখে মুখে কথা, জানিস একঘায়ে করে দেব তোর ঐ মুখ ভোঁতা। সর্দার একবার হুকুম করেন।’
জমিদার— ‘লেখাপড়া করেছিস? জানিস অভিকর্ষজ বল কি? কাশ্মীর চিনিস? আকবর কে জানিস? নাকি শুধু ফাঁপা ধমকি দিস?’
সাগরেদ(ভ্যাবাচাকা খেয়ে)— ‘সর্দার এসব কি? আপনি কি কিছু বুঝছেন নাকি?’
ডাকাতসর্দার— ‘আমি এসব জানি না। আমি কোনো জমিদারকে মানি না। আমি শুধু জানি, করে জমিদারের ধন চুরি, গরিবদের দিই তারই অর্ধেকখানি।’
সাগরেদ— ‘তাহলে সর্দার আর কথা না বাড়িয়ে খালি, তারপর পুঁতে দেওয়া হোক চাপা দিয়ে বালি।’
জমিদার— ‘তবে দেরি কিসের? কাজ শুরু করো তাড়াতাড়ি।’
সাগরেদ— ‘এই জন্য বলেছিলাম সর্দার, রাখতে বড়ো গোঁফ-দাড়ি, আর শেষ কবে করেছেন ডাকাতি? সে তো এখন অতীতের স্মৃতি।’
ডাকাতসর্দার— ‘এই চোপ বেয়াদপ। বাবা মা কি শেখায়নি সহবৎ? শোন আমি বিখ্যাত ভুবনডাকাত, যে আমার সামনে বাঁধার সৃষ্টি করে, তার মুন্ডচ্ছেদ করি কপাৎ কপাৎ।’
সাগরেদ (চাপা গলায়)— ‘হুঁহ্! ডাকাত ঘুমোয় রাতদিন, সে নাকি করবে কাউকে মুন্ডহীন।’
ডাকাতসর্দার— ‘অ্যাই, কি বললি?’
শাগরেদ— ‘আজ্ঞে,কিছু না সর্দার, বুঝলাম উড়ে যাবে খুলি।’
ডাকাতসর্দার— ‘কি হে জমিদার, গরিবের চাহিদা পূরণ করাটা খারাপ ব্যবহার? আর তোমারই বা এই জমি কিসের দরকার?’
জমিদার— ‘না রে ডাকাত। কখনো ভেবেছিস এই গরিবগুলো যদি শিক্ষা পেত অল্প মূল্যে, তাহলে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াত। তাদের জন্য না করতে হতো ডাকাতি, আর না তারা জমিদারদের ভয় পেত। দিনের পর দিন জমিদারদের জুলুম করেছে মুখ বুজে সহ্য, কারণ তারা যে জানে না চক্রবৃদ্ধি সুদের উৎস। অন্ধকারে থাকতে থাকতে, তারা ভুলে গেছে আলোয় কেমন লাগে বাঁচতে।
এই যে তুই মানুষ মেরে টাকা দিস, তারা কি জানে এই টাকায় মেশানো আছে আলসেমি আর ভয়ে মুখ বুজে বেঁচে থাকার বিষ?
পারলে মানুষদের মানুষ তৈরী কর, অপরের দয়ায় মাথা নীচে করা প্রাণী নয়।
আর এর জন্য চাই শিক্ষা, যার জন্য চাই তোর এই জমি, ভেবে দেখ তুই দিবি কিনা ভিক্ষা। এখানে গড়ে তুলবো এক শিক্ষার মুক্ত প্রাঙ্গন, যার নাম হবে শান্তিনিকেতন।’
সবাই চুপ… কিছুক্ষণ পরে ডাকাত সর্দার খুলল মুখ— ‘ওরে এনাকে ছেড়ে দে, এনাকে ছেড়ে দে এখন, আপনি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন, আজ থেকে আমি আপনাকে করছি গুরুদেব হিসেবে গ্রহণ। আপনার জমি চাই যতখানি, আমি তা দিতে বিনামূল্যে রাজী। শুধু যেন গরিবেরা পায় ভালো শিক্ষার মান, তারা যেন খুঁজে পায় জীবনে শিক্ষার অভিধান।’
জমিদার— ‘আমি একজন জমিদার, আমি কিছু নেই না হিসেবে দান। আমার কাছে এখন শুধু পাঁচ টাকা মাত্র, এটা তোমায় নিতে হবে এইমাত্র।’
ডাকাতসর্দার— ‘তবে তাই দিন।’
সবাই একসাথে গাইতে আরম্ভ করলো—
‘আজি এই রঙিন প্রভাতে শিক্ষাকে করি আহ্বান,
আর নাইবা বাঁচলাম শুনে গরিব নামেতে অপমান।
আলো এসেছে আজ অন্ধকারের পথ ধরে,
যেখানে হাওয়া এসেছে এখন শিক্ষার পিছা করে।
আজি এ শুভদিনে বুঝবো জীবনের নতুন অভিধান,
তাই আমরা সকলে গাইতে চাই শিক্ষার গান…’
(এইভাবে মাত্র পাঁচটাকায় কিনে নেওয়া ভুবনডাঙার জমির উপর তৈরি হলো এক মুক্ত শিক্ষা প্রাঙ্গণ, শান্তিনিকেতন গড়ার স্বপ্ন…)
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
This website uses cookies.