মাস্টার দা
(১)
চারদিকে অন্ধকার। এটাকে গ্রাম বললেও ভুল হবে। গাছপালা, ধূ ধূ মাঠ; তার মধ্যেই একটা বাড়ি। টিনের চাল। সেখানেই আছে জনা পনেরো মানুষ। দলের পুরুষ মানুষ গুলোকে দেখলে বেশ ভয় হচ্ছে মিঠির। কেমন যেন দেখতে! মেয়ে গুলো সিধে-সরল। তবে এরা কেউই খুব পরিষ্কার বাংলা বলে যে তা নয়। নিজেদের আঞ্চলিক ভাষা বলতেই বেশী স্বচ্ছন্দ এরা। তার মধ্যেই আছে এদের দলের নেতা। লোকটাকে দেখে বেশ সম্মান করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এও নাকি ডাকাত দলেরই নেতা!
-ওই মেয়ে! আয় আমাদের সাথে গল্প করবি আয়।
-আমি?
-তু না তো কে! এখানেই থাকবি এখন! তুয়ার নাম কি রে? তুকে দেখতে তো বেশ।
-আমি মিঠি মানে মিতালি সেন। তুমার নাম কি?
-আমি লছমী। তু ইখন থেকে এখানেই থাইকবি।
তুরে তুয়ার বাড়ির লোক লিবে লাই।
মন খারাপ করিস লাই, আমরাও ইখানেই থাকি।
বাড়ির লোক নিল না। মাস্টার দা ভালো লোক। উয়ো কইছে আমরা একদিন মাথা উঁচু করে বাঁইচবো।
-তোমরা কি করবে?
-দেখবি কি করবো? লাঠি চালাইবো। ওই যে বড় বড় লুক গুলারে শাস্তি দিব।
মিঠি মাত্র একদিন দেখেছে মাস্টার দা কে। আর কখনো দেখতে পায়নি। মাস্টার দার মূল উদ্দেশ্য নাকি এদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে দেওয়া। কিন্তু এদের দেখে মনে হয় না কারোর পেটে শিক্ষা আছে! এরা কি করবে তবে?
(২)
-আমায় আপনি ডেকেছেন?
-হ্যাঁ তুমি নাকি এখানে থাকতে চাইছো না! শোনো আমি তোমায় জোর করে আটকাবো না। যদি অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে তো যেতে পারো। তোমার বাড়ির লোক তোমায় নেবে না বলেছে।
-কিন্তু আপনারা খুব খারাপ লোক। আমি আপনাদের সাথে থেকে চুরি ডাকাতি করতে পারবোনা।
-শোনো মেয়ে আমরা চুরি বা ডাকাতি করিনা আমরা চাই লছমি, হেমা এরাও মাথা উঁচু করে বাঁচুক। তুমি চাও না আবার সুস্থ সমাজে ফিরে যেতে? আর যাদের জমি বা বাড়ি কেড়ে নিচ্ছে সরকার! সেটা ডাকাতি নয়?
যদি ভেবে থাকো তোমায় এখন সবাই মেনে নেবে তবে ফিরে গিয়ে দেখো।
-এখানে থেকে আমি কি করতে পারি?
-তুমি তো শিক্ষিত। তুমি ওদের পড়তে শেখাও। তবে আমি কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করাতে চাই না।
লোকটার আজকের কথাটা খারাপ লাগল না মিঠির। বরং মনে হল লোকটার তাকে দরকার।
মাস ছয়েক পর…
(৩)
মিঠি এখন নিয়ম করে লছমীদের পড়াশোনা শেখায়। সুলতানা বেশ মন দিয়ে পড়াশোনা করে।
মাস্টার দা একদিন কোন এক মন্ত্রীর বাড়ি থেকে টাকা পয়সা এনেছিল। সেই টাকা কাছের এক গ্রামে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরই পুলিশ এসেছিল খোঁজ করতে। তারপর সে কি যুদ্ধ…
মারা গিয়েছিল অনেক জন। মাস্টার দা জেলে যায়। আন্দোলন এর ঝড় বয়ে গিয়েছিল। রোজ রোজ মিটিং মিছিল… বন্ধ করে দিয়েছিল রেলপথ। শহর এর ব্যাংক থেকে লুট করেছিল টাকা। কারণ বাঁচাতে হবে মাস্টার দাকে। গোটা গ্রাম পাশে দাঁড়িয়েছিল ওদের। মাস্টার দার জন্য শহরের উকিল ঠিক করা হল।
সেদিন শনিবার…
হঠাৎ জেল থেকে ফোন এল। জেলের ভেতর আত্মহত্যা করেছেন মাস্টার দা। মাস্টার দার আত্মহত্যার ঘটনা মেনে নিতে পারল না মিঠিরা।
এরপর সরকারের বিরুদ্ধে হল জেহাদ ঘোষণা।
সরকার বাধ্য হল একটা অঞ্চল ওদের দিতে।
এখন থেকে ওই গ্রামে ওরা বাস করে। মাস্টার দা ওদের শিখিয়েছে মাথা উঁচু করে বাঁচতে। আজ ওরা সবাই সৎ পথে থেকেই জীবিকা নির্বাহ করে।