গ্রাম বাংলার ভ্রমণ বৃত্তান্ত (ঝাড়গ্রাম) – তৃতীয় পর্ব

https://www.laughalaughi.com/travelogue/%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a6%a3-%e0%a6%ac%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4-2/

এই শহুরে ব‍্যস্ততা থেকে আমাদের বারেবারে রেহাই দেয় গ্রাম বাংলার মনোরম ও শান্ত পরিবেশ। এই পর্বে ঝাড়গ্রাম জেলার ভ্রমণ স্থান সম্বন্ধে আলোচনা করবো।

ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ী

বাংলার একটি প্রাচীন রাজবাড়ী রয়েছে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ী। ঝাড়গ্রাম রাজ প্রাসাদটি মল্লা দেব রয়েল পরিবারের বর্তমান বাসস্থান, এটি গথিক এবং মুসলিম স্থাপত্য পদ্ধতিগুলির সংমিশ্রণকারী একটি কাঠামো। নিচতলার প্রায় ১৫ টি কক্ষ হেরিটেজ হোটেলে রূপান্তরিত হয়েছে। ঝাড়গ্রাম রাজ প্রাসাদটি ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত একটি সমৃদ্ধ গথিক কাঠামো, এই প্রাসাদটি কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট দ্বারা রাজা নরসিংহ মল্ল দেব বাহাদুরের রাজত্বকালে নকশা করেছিলেন। প্যালাসিয়াল গেস্ট হাউস ঝাড়গ্রাম রাজ প্রাসাদের একটি অংশ এটি শুরু থেকেই বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির আয়োজক ছিল। একদিন ঘোরার জন‍্য বাংলার এই রাজবাড়ী দারুণ জায়গা। এর সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

জঙ্গলমহল জুলজিক‍্যাল পার্ক

ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানা নামে পরিচিত জঙ্গলমহল জুলজিকাল পার্কটি ১৯৮০ সালে ঝাড়গ্রাম বিভাগের প্রাকৃতিক বনের মধ‍্যে হরিণ পার্ক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে, বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার, বিপন্ন প্রজাতির সংরক্ষণ প্রজনন, বন্দী প্রাণীদের কল্যাণে রক্ষণাবেক্ষণের উচ্চমানের লক্ষ্য এবং তাদের মধ্যে সহানুভূতির বিকাশের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ৯ সেপ্টেম্বর২০০৫ এ ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানা (ক্ষুদ্র বিভাগ চিড়িয়াখানা) হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। বন্যজীবন সংরক্ষণের দিকে এই অঞ্চলের নাগরিক, সিজেডএ কর্তৃক প্রণীত স্বীকৃত নিয়মাবলী এবং মান অনুসরণ করে।

গ্রাম বাংলার এই জঙ্গলমহল জুলজিকাল পার্কে বর্তমানে ১৪৭টি স্তন্যপায়ী, ৬৫টি পাখি, ১৪৭ টি সরীসৃপ রয়েছে। পার্কের মোট আয়তন ২১.৫৪ হেক্টর।

ঘাগরা জলপ্রপাত ও তারাফেনি বাঁধ

একসময় বাংলার মাওবাদীদের ঘাঁটি ছিল বেলপাহাড়ি। এই বেলপাহাড়ি থেকে ৫ কিমি দূরে তারাফেনি নদীর ছোট ছোট জলপ্রপাত প্রকৃতি অধ্যয়নের জন্য দুর্দান্ত সুযোগ দেয়।

বেলপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে তারাফেনি এবং ঘাগড়া জলপ্রপাত তরাফেনি ব্যারাজটি অবশ্যই একটি আকর্ষণীয় জায়গা, যেখানে জনসাধারণ বর্ষার সময় আকর্ষক প্রকৃতি এবং পাথরের বিপরীতে নদীর স্রোতের দৃষ্টিতে আকৃষ্ট হয়। এই ব্যারেজট এলাকার হাজার হাজার মানুষকে পানীয় জল সরবরাহ করে। তারাফেনি নদীর জল মূলত মুকুটমনিপুর বাঁধ থেকে আসে। এটি সেই জায়গা যেখানে বাংলা চলচ্চিত্র “বেহুলা লখিন্দর” এর শুটিং হয়েছিল। বর্ষাকালে ঘাগড়ার জলপ্রপাতটি সবচেয়ে সুন্দর এবং আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে ।

এটির আসল সৌন্দর্য দেখার জন্য এটি বর্ষার সময়ই পরিদর্শন করা উচিত। আশেপাশের বন অঞ্চলটিও সুন্দর এবং কয়েক ঘন্টা সুন্দর সময় অনায়াসে ব্যয় করা যায়।

খন্দরনি হ্রদ

ঝাড়গ্রাম থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে খন্দরণি নামে একটি সুন্দর হ্রদ। এটি একটি এক দিনের ট্রিপের জন‍্য সুন্দর জায়গা। শীতল জল এবং চারপাশের সবুজ রঙের মিশ্রণে বয়ে যাওয়া বাতাসের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য গ্রাম বাংলার এই হ্রদটি অন‍্যতম। এখানে দর্শকরা সবুজ বনে অনেক ধরণের সুন্দর পাখি দেখতে পারেন। এই দৃশ্যটি জায়গাটিকে আরও সুন্দর করে তুলেছে। যদিও এখানে নৌকা বাইচ সুবিধা পাওয়া যায় না তবে হেঁটে পরিদর্শন করলে আপনি দেখবেন গ্রাম বাংলার এই হ্রদটি ছোট্ট হলেও পুরো দৃশ্যটি খুব আকর্ষণীয়।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *